সচেতন নাগরিকের যাবতীয় উদ্যোগ মাটি হল পুরসভার অসহযোগিতায়।
পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম নিরাপদ আস্তানা সাঁতরাগাছি ঝিল নাগরিক উদ্যোগে পরিষ্কারের পরেও কাঙ্খিত সংখ্যায় পাখি এল না এই মরসুমে। তার অন্যতম কারণ হিসেবে জেলা বন দফতর পুরসভার অসহযোগিতাকে দায়ি করেছে। বন দফতরের অভিযোগ, হাওড়া পুরসভা যেমন নিকাশি নালা বন্ধ করেনি, তেমনই ঝিলের আশপাশে বহুতল বাড়ি তৈরিও বন্ধ হয়নি। পাশাপাশি, ঝিলের পাশে রাখা ভ্যাট পুরসভা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এলাকার মানুষের ওই ঝিলে আবর্জনা ফেলার অভ্যাসও রোধ করা যায়নি। পুরসভা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সাঁতরাগাছি ঝিল পশ্চিমবঙ্গে পরিযায়ী পাখিদের সব গুরুত্বপূর্ণ আবাস। প্রতি শীতে নানা দেশের পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে সেখানে। দেশ-বিদেশের বহু পাখি বিশারদ, পাখি পর্যবেক্ষক যান সেখানে। ‘প্রকৃতি সংসদ’ নামে একটি সংগঠন এই ঝিলে পক্ষী সমীক্ষার কাজ করে প্রতি বছর। তাদের পেশ করা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের তুলনায় এ বছরে সাঁতরাগাছিতে আসা পাখির সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। গত বছর পাখির সংখ্যা ছিল ১০,৩৬৩। এ বারে পাখির সংখ্যা ৬,৭১৫। ওই সংগঠনের করা সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, এ বছর বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও এসেছে কম। গত বছর এসেছিল ২০ প্রজাতির। এ বছর এসেছে ১৭ প্রজাতির। |
ঝিল পরিষ্কার করায় নাগরিক উদ্যোগের প্রধান সংগঠক অর্জন বসুরায় অবশ্য পক্ষী গণনার ওই পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, “ওঁরা যে দিন পাখি গুনেছেন, তার ঠিক দু’দিন পরেই আমরা ওই ঝিলে ১০ হাজারের বেশি পাখি পেয়েছি। গত তিন বছরের পাখির সংখ্যা খতিয়ে দেখলেই বোঝা যায়, এই বছর এত কম পাখি ওই ঝিলে থাকার কথা নয়। পাখি আসার মরসুমে তিনটি পর্যায়ে পাখি গণনার পরে তার গড় করে চূড়ান্ত সংখ্যা নির্ণয় করা উচিত।”
প্রকৃতি সংসদের সম্পাদক কুশল মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “পাখি গণনার সব নিয়ম মেনেই আমরা রিপোর্ট দিই। এ বার ঝিলে যে ১০ হাজার পাখি আসার কথা বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। পাখি এ বার অনেক
কম এসেছে।”
রাজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পক্ষী আবাসের এই বিপন্নতায় উদ্বিগ্ন জেলা বন দফতর। হাওড়ার বিভাগীয় বন আধিকারিক গৌতম চক্রবর্তী বলেন, “কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও পক্ষীপ্রেমী এ বার মরসুমের শুরুতেই ঝিলের কচুরিপানা পরিষ্কারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু তা করেও লাভ হয়নি। আসলে ঝিলের চারপাশে উঁচু বাড়ি ও নিকাশি নালার বর্জ্য ক্রমাগত ঝিলে পড়ায় জল দূষিত হয়ে উঠেছে। পরিযায়ী পাখিদের জন্য তা বিষাক্ত। তাই মনে হয় এ বার পাখি কম এসেছে।”
জেলা বন দফতরের অভিযোগ, হাওড়া পুরসভার সঙ্গে এই দূষণ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বারবার সাহায্য চেয়েও পুরসভার তরফে কোনও সহযোগিতা মেলেনি।
কিন্তু ঝিল পরিষ্কার করা বা ঝিলের দূষণ রুখতে বন দফতর নিজে কী ব্যবস্থা নিয়েছে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। এ প্রসঙ্গে গৌতমবাবু বলেন, “প্রথমে আমাদের অর্থের অভাব ছিল। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পরে অর্থ মিলেছে। ঝিলের চারপাশে আবর্জনা পরিষ্কার-সহ যে সব গার্ডওয়াল ভেঙে গিয়েছে, তা ঠিক করার কাজ এ বার শুরু হবে। আর দূষণ রুখতে আমরা প্রচার চালাব। তবে পুরসভার সাহায্য সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন।”
মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “প্রথম কথা হল, সাঁতরাগাছি ঝিল রেলের সম্পত্তি। পুরসভার যে নিকাশি নালার কথা বলা হচ্ছে, তা সরাসরি ঝিলে বর্জ্য ফেলছে বলে আমার জানা নেই। তবে এ রকম হয়ে থাকলে পুরসভার অফিসারদের পাঠিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসলে ওই ঝিল এলাকার লোকজনই আবর্জনা ফেলে দূষিত করছেন, সেটা বন্ধ হওয়া দরকার।” |