লোকটাক সরোবর বাঁচাতে আইন প্রণয়ন করল মণিপুর বিধানসভা। মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবির আশ্বাস, এই হ্রদের উপর নির্ভরশীল মৎসজীবীদের মাছ ধরার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে না। নথিভুক্ত জেলেরা আগের মতোই মাছ ধরতে পারবেন। তবে দিগন্তবিস্তৃত প্রাকৃতিক এই হ্রদকে বাঁচাতেই লোকটাক এলাকায় দখলকারীদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চলবে। অবশ্য একই সঙ্গে চলছে ভিটেছাড়াদের আন্দোলনও।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে রাজ্য বিধানসভায় বিস্তর আলোচনার পরে ‘মণিপুর লোকটাক লেক (প্রোটেকশন) অ্যামেন্ডমেন্ট বিল, ২০১১’ অনুমোদিত হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “লোকটাক কয়েক হাজার মানুষের অন্ন জোগায়। তাঁদের ভাতে মারার কোনও ইচ্ছাই সরকারের নেই। নয়া আইন অনুযায়ী সরকার অনুমোদিত মৎসচাষীরা এখানে মাছ ধরতে পারবেন। লোকটাক সাফাই অভিযানে যাঁরা উৎখাত হচ্ছেন তাঁদেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হবে। তবে ‘রামসার’ এলাকা হওয়ায় এবং লোকটাকের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব অপরিসীম হওয়ার কারণেই এর রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে কিছু কঠোর ব্যবস্থা নিতেই হচ্ছে।” |
প্রকৃতির নিজস্ব লীলা নিকেতন মণিপুরের লোকটাক হ্রদ। রাজীবাক্ষ রক্ষিতের তোলা ছবি। |
এই লোকটাকেই রয়েছে দেশের একমাত্র ভাসমান জাতীয় উদ্যান, কেইবুল লামজাও। সেখানে সাঙ্গাই বা নাচুনে হরিণের একমাত্র বসতি। কিন্তু সরোবরের ফুমদিগুলিতে (ভাসমান তৃণভূমি) মানুষের বসবাস বৃদ্ধি, জল নোংরা হওয়া ও বহু ফুমদিতে জঙ্গিরা ঘাঁটি গাড়ায় আন্তর্জাতিক স্তরেও সমালোচনার মুখে পড়ে মণিপুর সরকার। ২০০৬ সালে, প্রথম লোকটাক সংরক্ষণ আইন রচিতা হয়। ২০১০-১১ সালে সেনা ও আসাম রাইফেল্স ফুমদিগুলিতে লাগাতার অভিযান চালিয়ে জঙ্গি ঘাঁটিগুলি ভেঙে ফেলে। গত বছরে শুরু হয় লোকটাক সাফাইয়ের কাজ।
আইন অনুযায়ী, জাতীয় উদ্যানে বসবাসকারীদের ‘জবরদখলকারী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। তাই বংশানুক্রমে লোকটাকে মাছ ধরা ও লোকটাক ঘিরে জীবন-জীবিকা চালানো বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করা হয়। ভেঙে দেওয়া হয় তাদের সব মাছ ধরার সরঞ্জামও। এরপরেই লোকটাক লেক মৎসজীবী কমিটি ও অল মণিপুর থাংগা পিপল্ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বিক্ষোভ কর্মসূচি গ্রহণ করে। ১৫ থেকে ২৫ নভেম্বর অবধি ফের উৎখাত চলে। উৎখাত হওয়া মানুষ চিংগ্যাং ও নিংথৌখং মাখা লেইকাইয়ের কমিউনিটি হলে আশ্রয় নেন। উচ্ছেদ-বিরোধী আন্দোলনে পুলিশ লাঠি চালানোয় ১১ জন মহিলা জখম হন। মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হন লোকটাকের মৎসজীবীরা। মানবাধিকার কমিশন লোকটাক সাফাই নিয়ে বিশদ জানতে চেয়ে মণিপুরের মুখ্যসচিব ডি এস পুনিয়াকে ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠিয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থের নয়ছয় নিয়ে ওঠা অভিযোগের তদন্ত সিবিআই-এরহাতে তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে মানবাধিকার কমিশন। |