এক দিন পরেও ওঁদের ঘোর কাটছে না!
শনিবার সকালে হাওড়ার সাঁকরাইলের জরি-হাবের সামনে অস্থায়ী ছাউনিতে ‘ঢাড্ডা’ (যেখানে জরির কাজ হয়) পেতে এক মনে শাড়িতে জরির কাজ করছিলেন বন্যা মণ্ডল। পিছন থেকে আচমকা প্রশ্ন, “শাড়িটার দাম কত হবে?”
চমকে গিয়েছিলেন সীতারা মল্লিকও। পরের প্রশ্নটা যে তাঁর উদ্দেশে, “কত মজুরি পাও?”
দীপালি রায় তাজ্জব। যিনি এত ক্ষণ প্রশ্ন করছিলেন, সেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে তাঁর হাত থেকে সূচ নিয়ে কাঠদানা (নকশা করা পুঁতি) তুলে নিজেই শাড়িতে অবলীলায় গাঁথলেন।
সকলেই জানতেন, মুখ্যমন্ত্রী জরি হাবের উদ্বোধন করতে আসছেন। কিন্তু সরকারি অনুষ্ঠানে এসে মুখ্যমন্ত্রী যে তাঁদের মতো নিতান্ত সাধারণ মানুষের সঙ্গে ওই ভাবে মিশে যাবেন, ভাবতে পারেননি বন্যা, সীতারা, দীপালিরা। তাঁরা তাই অভিভূত। পরে মুখ্যমন্ত্রী যখন অনুষ্ঠান মঞ্চে বলছেন, “আমি নিজে দেখছিলাম, কী সুন্দর জরির কাজ করে ওঁরা,” তখন মাইকে তা শুনে ওঁরা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন। পরে বন্যা, দীপালিরা বলেন, “দিদি আমাদের হাতের কাজ দেখে মঞ্চে ওই মন্তব্য করলেন। দারুণ গর্ব হচ্ছে।”
অপর্ণা পাত্র, বন্যা মণ্ডল, দীপালী রায়, কাশ্মীরা মোল্লা, সীতারা মল্লিক সব মিলিয়ে সাঁকরাইলের জনা দশেক জরিশিল্পীর জন্য অনুষ্ঠান মঞ্চের কাছে চারটি ‘ঢাড্ডা’ পেতে অস্থায়ী ছাউনি বানিয়ে দেয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। প্রত্যেকে বাড়িতে জরির কাজ করে সংসার চালান। বেলা আড়াইটে নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় ঢুকে পড়ে সাঁকরাইলে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের তৈরি ফুড পার্কে। এখানেই তৈরি হয়েছে জরি-হাব। কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠান-মঞ্চের দিকে না গিয়ে চলে যান ওই অস্থায়ী ছাউনিতে। যেখানে গোল হয়ে বসে মাথা নিচু করে কাজ করছিলেন অপর্ণা, সীতারারা। |
জরি-হাবে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: রণজিৎ নন্দী |
ঘুরে ঘুরে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি ‘ঢাড্ডা’র কাছে আসেন। সরাসরি কথা বলেন জরিশিল্পীদের সঙ্গে। জানতে চান, তাঁদের সুবিধা-অসুবিধা। খোঁজ নেন ঘর-পরিবারের। রাজগঞ্জের জরিশিল্পী অপর্ণাদেবীকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “কাজ করতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না তো! কোনও অসুখ-বিসুখে পড়তে হয় না তো! এ কাজে চোখের সমস্যা হয় জানি।” অপর্ণাদেবী বলেন, “বসে কাজ করতে হয় বলে ঘাড়ে ব্যথা করে। চোখেও সমস্যা হয়।” এমনই সব প্রশ্ন-উত্তর চলতে থাকে মিনিট সাতেক ধরে।
সব শেষে ‘আমি ছোটবেলায় জরির কাজ করেছি’ বলে আন্দুলের দীপালিদেবীর কাছে যখন মুখ্যমন্ত্রী ঝুঁকে পড়েন, তখন তা দেখতে রীতিমতো ভিড় জমে উঠেছে। সকলকে অবাক করে দিয়ে দীপালিদেবীর হাত থেকে সূচ নিয়ে শাড়িতে কাজ করেন মমতা। যা দেখে দীপালিদেবীর ‘শংসাপত্র’, “দিদি মোটামুটি কাজটি করতে পেরেছেন।”
মঞ্চের অনুষ্ঠানের পরে কিছু ক্ষণের জন্য ফের জরিশিল্পীদের কাছে আসেন মমতা। সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গাড়িতে উঠে পড়েন।
দিন কয়েক আগে সুন্দরবন সফরে গিয়ে স্টিমারের ‘স্টিয়ারিং হুইল’ ঘুরিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বার জরি-হাবে শাড়িতে কাজ। আপ্লুত জরিশিল্পীদের একটাই আফসোস আনন্দের চোটে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য আনা ফুল দিতে ভুলে গেলেন যে! |