পুর-পরিষেবার দুর্দশায় গৌরব ম্লান ‘রাজধানী’র
থচারীদের জন্য ফুটপাথের বালাই নেই। শহর জুড়ে ভাঙাচোরা রাস্তায় স্তূপাকৃতি জঞ্জালের পাশে আবর্জনায় ভরা খোলা নর্দমা। পরিস্রুত পানীয় জলের জন্যও মানুষকে হামেশা মাথা কুটতে হয়।
এ হল খাস রাঁচি শহর। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রাজধানী। শতাব্দী-প্রাচীন রাঁচির মাথায় ‘রাজধানী শহরের’ মুকুট বসেছে এক যুগ আগে। কিন্তু নাগরিক-পরিষেবার নিরিখে তা এখনও যেন পড়ে আছে মামুলি জেলা সদরের স্তরে। এবং তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কার্যত নির্বিকার। ফলে আম-নাগরিকের মধ্যে হতাশা দানা বাঁধছে। প্রায় সত্তর বছরের রাঁচিবাসী, প্রাক্তন কাউন্সিলর বরুণ রায়ের সুরে অনেকেই বলছেন, “পুরো ব্যাপারটা গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। ধরে নিচ্ছি, এ ভাবে থাকাটাই আমাদের ভবিতব্য।”
একদা বিহারের জেলা সদর রাঁচি রাতারাতি রাজধানীতে উন্নীত হওয়ার পরে শহরে জনসংখ্যার চাপও হু হু করে বাড়ছে। চাকরি-বাকরি, রুজি-রুটির সন্ধানে ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জেলা ও গ্রাম-গঞ্জ থেকে হাজারো মানুষ এসে ডেরা বেঁধেছেন রাজধানীতে। কোথাও কোথাও জমির দাম বেড়েছে অন্তত দশ গুণ! নির্মাণশিল্প ও ইমারতি পণ্যের কারবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। জায়গায় জায়গায় খুলেছে ঝাঁ চকচকে অফিস, শো-রুম। সব মিলিয়ে প্রাচীন শহরটির বাহ্যিক চেহারা বেমালুম বদলে গেলেও পুর-পরিষেবার বিবর্ণ ছবিটা বদলায়নি।
১৮৬৯ সালে স্থাপিত রাঁচি পুরসভার ১১০তম প্রতিষ্ঠাবর্ষে, অর্থাৎ ১৯৭৯-এর ১৫ সেপ্টেম্বর একে কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়। ২০০০-এর ১৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘রাজধানী’র শিরোপা লাভ করে রাঁচি। কিন্তু আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা ঝাড়খণ্ডে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে রাজধানীর নাগরিক পরিষেবা ঢেলে সাজার পরিকল্পনা পুরবোর্ড এখনও নিয়ে উঠতে পারেনি।
ছবি: প্রশান্ত মিত্র
এবং রাজ্য সরকারের কাঁধেই তার দায় চাপাচ্ছেন রাঁচির নির্দল মেয়র রমা খালখো। যাঁর আক্ষেপ, “১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এখানে সরকরাই পুরসভা চালিয়েছে। তখন উন্নয়নের কোনও কাজ হয়নি। ২০০৮-এর এপ্রিলে মেয়র হিসেবে শপথ নিয়ে কাজ শুরু করি। কিন্তু উন্নয়নের কাজে সরকারের আর্থিক সহায়তা পাচ্ছি না।” সরকার কী বলছে?
মেয়রের অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করে ঝড়খণ্ড পুর দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, পুরকর্মীদের বেতনের বেশিটাই সরকার জুগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকার পুরসভাকে পরিষেবা চালানোর টাকা দেয় না। পুরসভাকে নিজেদের আয় বাড়াতে হবে। আর তাতে রাঁচি নগর নিগম সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলে সরকারি কর্তাদের অভিযোগ। জবাবে মেয়রের ব্যাখ্যা, “পুর-আয়ের মূল উৎস সম্পত্তি-কর। অথচ ১৯৯২-৯৩ সালের পরে নতুন করে সম্পত্তির মূল্যায়ন হয়নি। দু’দশক আগের মূল্যায়নের ভিত্তিতে কর নিতে হচ্ছে। আয় বাড়বে কী ভাবে?” পুর-কমিশনার বিনয় চৌবে জানাচ্ছেন, তাঁদের করদাতার সংখ্যা ৮৩ হাজার, এবং সম্পত্তিকর বাবদ বার্ষিক আদায়ের পরিমাণ সাকুল্যে ১০ কোটি টাকা। পুনর্মূল্যায়নের প্রস্তাব ২০০৭-এ সরকারকে পাঠানো হলেও তা নাকচ হয়ে গিয়েছে।
পরিস্থিতির হাল ফেরাতে রাজনৈতিক দলগুলোর কেনও উদ্যোগ নেই?
বস্তুতই, বিপর্যস্ত নাগরিক পরিষেবা নিয়ে রাজনীতিকদের বিশেষ মাথাব্যথা নেই। বিরোধীদের প্রতিবাদও নিস্তেজ। কেন?
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জ্ঞানশঙ্কর মজুমদার বলেন, “পুর-প্রশাসনের গাফিলতি আছে ঠিকই। তবে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে রাঁচির কিছু নিজস্ব সমস্যা রয়েছে। ২২০০ ফুট উচ্চতার এ শহরে ভুগর্ভস্থ নিকাশি গড়ে তোলা কঠিন। রাতারাতি সমাধান হবে না। তাই বাস্তবতার নিরিখে আন্দোলন করারও যুক্তি নেই।” প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র শৈলেশ সিনহার কথায়, “এটাই আমাদের নিয়তি বলে মেনে নিয়েছি।”
আর রাজের জোট সরকারের প্রধান শরিক বিজেপি-ও যে এ বিষয়ে এত দিন উদ্যোগী হয়নি, দলের রাজ্য সভাপতি দীনেশানন্দ গোস্বামী তা একবাক্যে মানছেন। যদিও তাঁর আশ্বাস, “দলে আলোচনা চলছে। খুব শিগগিরই উন্নত পরিষেবার দাবি নিয়ে রাজধানীর পথে নামবে বিজেপি।”

রাঁচি এক ঝলকে
• আয়তন — ১৭৫.১২ বর্গকিলোমিটার
• ওয়ার্ড — ৫৫
• রাস্তার পরিমাণ — ৪৭৬.২৭ কিমি
(
পাকা — ৩৪৬.২৭ কিমি, কাঁচা — ১৩০ কিমি)
• নিকাশি নালা — ৪৪১.০৪ কিমি
(
পাকা — ১৮৭.৭২ কিমি, কাঁচা — ২৫৮.৩২ কিমি)

রাঁচির ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা
১৯৯১ ২০০১ ২০১১
৫,৯৯,৩০৬ ৮,৪৭,০৩৯ ১০,৫৬,৬৪০

রাঁচিতে দৈনিক আসেন ৬০,০০০


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.