|
|
|
|
জারোয়া নাচাচ্ছে উর্দিধারীই, মিলল নয়া ভিডিও টেপ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
জারোয়া নাচানোর আরও দু’টি ভিডিও টেপ প্রকাশ্যে আনল একটি ব্রিটিশ পত্রিকা। ভারতের কিছু পর্যটন সংস্থা দেশের আদিম বনবাসীদেরও জঙ্গলের জীবজন্তুর মতোই দ্রষ্টব্য হিসেবে তুলে ধরছে, এমন অভিযোগ উঠেছে আগেই। ‘হিউম্যান সাফারি’-র আয়োজন করার অভিযোগে তিন জনের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে ব্রিটেনে। বিচারও চলছে দু’জনের। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সে দেশের আইন অনুযায়ী তাদের সাত বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। কিন্তু এ বারের টেপ দু’টি নতুন মাত্রা যোগ করেছে এই বিতর্কে। কারণ আগের ভিডিও টেপে অভিযোগ উঠেছিল, খাবারের জন্য জারোয়াদের নাচতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে উর্দিধারী ফৌজিই জারোয়াদের নগ্ন নাচের আয়োজন করেছে। বিষয়টি ভারত সরকারের কাছে যথেষ্টই অস্বস্তিকর। স্থানীয় সাংসদ টেপটিকে অনেক পুরনো বলে দাবি করলেও ভারত সরকার ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে খোঁজখবর শুরু করেছে। প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
ওই ব্রিটিশ পত্রিকার প্রকাশ করা এ বারের ভিডিও ক্লিপ দু’টি মোবাইল ক্যামেরায় তোলা। প্রথমটি ৩ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের। তাতে দেখা যাচ্ছে, অর্ধনগ্ন জারোয়া মেয়েরা নাচছে। বসে বসে তা উপভোগ করছে এক ফৌজি। মাঝে মাঝে নির্দেশ দিচ্ছে হিন্দিতে। দ্বিতীয় ভিডিও ক্লিপটি আরও অল্প সময়ের। তবে এটায় মোবাইল ক্যামেরার মূল নজর জারোয়া-কন্যার নগ্নতার দিকে। কিছু দিন আগেই ওড়িশার বোন্দা জনজাতির মানুষজনকে এই রকম বিকৃত ভাবে পর্যটকদের কাছে হাজির করার অভিযোগ ওঠার পরে রাজ্য প্রশাসন কিছুটা সতর্ক হয়েছে।
কিন্তু সেই বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই এই নতুন বিতর্ক। এ বার দেখা যাচ্ছে, আন্দামানের লুপ্তপ্রায় এই জনজাতিকে রক্ষা করাই যাদের কাজ, তারাই নাচতে বাধ্য করছে তাদের। ভিডিও দু’টি কবে তোলা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। জারোয়া নাচানোর অভিযোগ এর আগেও একাধিক বার অস্বীকার করেছে আন্দামান-নিকোবরের প্রশাসন। তাদের দাবি ছিল, বছর দশেকের পুরনো ভিডিও টেপ ইচ্ছাকৃত ভাবে এখন সামনে আনা হচ্ছে। তাদের পাল্টা অভিযোগ ছিল, জারোয়াদের ভিডিও তুলে এবং তা প্রকাশ করে আইন ভাঙছে সংবাদমাধ্যমই। এ বারও আন্দামান-নিকোবরের সাংসদ বিষ্ণুপদ রায় বলেছেন, “এটা পুরনো ভিডিও। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আন্দামানের নামে কালি ছেটাতে চাইছে।”
নতুন বা পুরনো ভিডিও দু’টি যে সময়েরই হোক, তাতে উর্দিধারীর উপস্থিতি অবশ্য বেজায় অস্বস্তিতে ফেলেছে প্রশাসনকে। আন্দামান প্রশাসন জানিয়েছে, ভিডিও দু’টি দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আন্দামানের মুখ্যসচিব জানান, ভিডিওয় উর্দিধারী যে ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছে, তাঁর পরিচয় জানার জন্য তদন্ত করা হবে। তাঁর কথায়, “ওই উর্দিধারী যদি পুলিশের কোনও অফিসার হন, তবে তাঁর পরিচয় শীঘ্রই জানা যাবে। এটা অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। দ্রুত ব্যবস্থা নেব।” এই ভিডিওটি নিয়ে সরব হয়েছে তফসিলি উপজাতি কমিশনও। কমিশনের চেয়ারম্যান রামেশ্বর ওঁরাও বলেন, “এটা গুরুতর অপরাধ। ভিডিওতে এক উর্দিধারীর গলার স্বরও শোনা যাচ্ছে। কালই আন্দামান প্রশাসনের কাছে নোটিস পাঠানো হবে।”
ব্রিটিশ পত্রিকাটির অবশ্য দাবি, আদৌ পুরনো নয়, ভিডিও টেপ দু’টি সম্প্রতিই তোলা হয়েছে। তাদের পাল্টা অভিযোগ, যখনই এই ধরনের কোনও টেপ সামনে আসে, প্রশাসন তাকে পুরনো বলে চালাতে চায়। ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, জারোয়াদের এলাকায় যাওয়া কিংবা জোর করে তাদের নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে আনা বেআইনি। শুধু তা-ই নয়, যে সব এলাকায় জারোয়াদের বাস, সেই সব অঞ্চলের জলপথ বিশেষ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে প্রশাসন। লুপ্তপ্রায় এবং বর্তমানে বিশ্বের প্রাচীনতম উপজাতিদের অন্যতম জারোয়ারা জঙ্গলে থাকতেই স্বচ্ছন্দ। তাই শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, তাদের জঙ্গলে থাকার অধিকার পুরোপুরি রক্ষা করতে হবে প্রশাসনকে। এ কারণেই পর্যটকদের ওই সব এলাকায় যাওয়া এবং ছবি তোলাও পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ফলে প্রশ্ন উঠছে কে তুলেছে ওই ভিডিও। কী ভাবেই বা তা ব্রিটিশ পত্রিকাটি হাতে পৌঁছেছে। |
|
|
|
|
|