|
|
|
|
|
ফের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা |
‘যেতে পারি, কিন্তু কেন যাব’ পিছুটান শীতের
দেবদূত ঘোষঠাকুর • কলকাতা |
|
বহুরূপী বলা যেতে পারে! অথবা জাদুকর। এ বারের শীতের এমনই ভেল্কি!
যাই যাই করেও একই ভাবে ফের ‘যেতে পারি, কিন্তু কেন যাব’ মার্কা একটা রহস্য ঘনিয়ে তুলেছে শীত। হাওয়া অফিস বলছে, সে আবার ঘুরে দাঁড়াবে। ইতিমধ্যে চারটি ইনিংস খেলা হয়ে গিয়েছে তার। কোনওটা সংক্ষিপ্ত। কোনওটা বা একটু লম্বা। তা হলে কি এ বার পঞ্চম ইনিংস?
রবিবার পরিমণ্ডলের যা অবস্থা ছিল, তাতে অন্য বছর হলে আবহবিদেরা শীতের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়েই দিতেন। কিন্তু শীত যে এ বার চোরাগোপ্তা হামলা করছে! সেই হামলায় ইন্ধন জোগাচ্ছে তীব্র পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। আবহবিদেরা বলছেন, এ বার প্রথম থেকেই কিছুটা অন্য ভাবে ঘুঁটি সাজিয়েছিল শীত। বারবার তার ব্যাপারে পূর্বাভাস দিতে গিয়ে ঠকতে হয়েছে অনেককেই। বিদায়বেলায় ঘুরে দাঁড়িয়ে শীত ফের তাঁদের ঠকিয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। তাঁদের আশা, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে দক্ষিণবঙ্গে শীত ঘুরে আসতে পারে।
হাওয়া অফিস বলছে, রবিবার থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ঠান্ডা কমে যাওয়ার যে-প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করলে শীতের নতুন ভেল্কিটা অনুমান করা শক্ত হবে ঠিকই। কিন্তু সে তলে তলে নতুন খেল্ দেখানোর প্রস্তুতি চালাচ্ছেই। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ রবিবার বলেন, “বুধবার পর্যন্ত গোটা রাজ্যেই সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়বে। দক্ষিণবঙ্গে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চলতি সময়ের স্বাভাবিকের থেকে ২-৩ ডিগ্রি বেশি হয়ে যাবে। শীতটা আর প্রায় থাকবেই না। মঙ্গলবার থেকে বইতে শুরু করবে দখিনা বাতাস। প্রাক্-বসন্তের পরিবেশ তৈরি হবে। তবে উত্তরবঙ্গে তাপমাত্রা বাড়লেও সেখানে শীত থাকবে।”
তার পরেই শুরু হবে শীতের নতুন ভেল্কি। বৃহস্পতি-শুক্রবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রা ফের নামবে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। গরম পোশাকের প্রয়োজন হবে মাঘের শেষ সপ্তাহেও। তবে শীতের সেই ইনিংস কত দিন স্থায়ী হবে, তা নিয়ে এখনই কোনও পূর্বাভাস করে ঠকতে চান না আবহবিদেরা।
শীত এ বার আবির্ভাবেই দেরি করেছিল। তার পরে দোর্দণ্ডপ্রতাপ দেখিয়ে, শৈত্যপ্রবাহ বইয়ে দিয়েই ঝিমিয়ে পড়েছে সে। এবং সেটা দফায় দফায়। যখনই মনে হয়েছে সে বিদায় নেবে, তখনই অন্য বেশে হাজির হয়েছে শীত। কখনও উত্তুরে হাওয়ার সওয়ারি হয়ে। কখনও বা পশ্চিমী ঝঞ্ঝার হাত ধরে। আবার কখনও দার্জিলিঙের পাহাড় থেকে হিম-বাতাস তাপমাত্রা হুহু করে নামিয়ে দিয়েছে হিমালয় সংলগ্ন উত্তরবঙ্গে। তার জের এসে পৌঁছেছে দক্ষিণবঙ্গেও।
রবিবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে শীত হঠাৎ যেন নিজেকে ঘরে বন্দি করে রেখেছে। উত্তুরে হাওয়া আর বিশেষ নেই। তাপমাত্রা বেড়ে পরিমণ্ডলে কেমন যেন একটা বসন্ত-বসন্ত ভাব। দিনের তাপমাত্রা বাড়ছে চড়চড় করে। সূর্য ওঠার পরে লেপ-কম্বল গায়ে রাখা যাচ্ছে না। শীত কেমন যেন পালাই পালাই শুরু করেছে।
শীতের বিদায়বেলায় পরিমণ্ডলের অবস্থা যা হওয়া উচিত, ইতিমধ্যেই সেই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, শীতের বিদায় এবং বসন্তের আগমনের সময় ঝাড়খণ্ডের উপরে একটি উচ্চচাপ এলাকা তৈরি হয়। উত্তর ভারত থেকে আসা উত্তুরে হাওয়াকে আটকে দেয় সেই উচ্চচাপই। আবহবিজ্ঞনের পরিভাষায় যাকে বলে ‘ব্লকিং হাই’ বা ‘উচ্চচাপ বাধা’। ঝাড়খণ্ডে ওই পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। বইতে শুরু করে বসন্তের দখিনা বাতাস। অর্থাৎ শীত চলে গিয়ে বসন্তের আগমনী শোনা যায় ওই ‘উচ্চচাপ বাধা’ থেকেই।
বছরের এই সময়টায় উত্তর ভারতে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা হানা দিলেও তার তীব্রতা সাধারণত কম থাকে। তাই ঝাড়খণ্ডের ‘উচ্চচাপ বাধা’ পেরিয়ে তা দক্ষিণবঙ্গে ঢুকতে পারে না। বারবার উচ্চচাপ বাধায় ধাক্কা খেতে খেতে উত্তুরে হাওয়ার লড়াই এক সময় শেষ হয়ে যায়। হেরে যায় শীত। চলে আসে বসন্ত। রবিবার তৈরি হওয়া ওই ‘উচ্চচাপ বাধা’র প্রতিক্রিয়া মালুম হচ্ছে ইতিমধ্যেই। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়ছে। তবে উত্তরবঙ্গে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই কম। তাই তাপমাত্রা তিন থেকে চার ডিগ্রি বাড়লেও তা সেখানে শীতের অনুভূতিতে কোনও হেরফের ঘটাবে না বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
তা হলে শীত ফিরবে কী ভাবে?
আবহাওয়া অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, এই মুহূর্তে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা রয়েছে উত্তর ভারতে। তার শক্তি খুবই বেশি। তার ফলে কাশ্মীর, হিমাচলপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে তুষারপাত শুরু হয়েছে। সেই তুষারপাতের তীব্রতা আরও বাড়বে। তার উপরে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে পঞ্জাব-হরিয়ানায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি। মধ্য ভারত থেকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সরে গেলেই ফের শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে যাবে গোটা উত্তর ভারতে। আর উত্তুরে হাওয়া প্রবল শক্তি নিয়ে মধ্য ভারত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে পূর্ব ভারতের উপরে।
ঝাড়খণ্ডের ‘উচ্চচাপ বাধা’ সেই উত্তুরে হাওয়ার শক্তি অনেকটা কমিয়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত হেরে যাবে বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা।
শীতের সেই জয়ের আশাতেই আছে বাংলা। |
|
|
|
|
|