দিল্লিতে ফেরত পাঠানো পাঁচ কোটি টাকা আনিয়ে মল্লিকঘাট ফুলবাজারের ফাইলবন্দি প্রকল্প রূপায়ণে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য সরকার। বছর আটেক আগে রাজ্যের অনুরোধে সেখানে একটি আধুনিক ফুলবাজার ও গবেষণাকেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। কিন্তু সে সময়ে নানা জটিলতায় রূপায়িত করা যায়নি প্রকল্পটি।
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি মহাকরণে একপ্রস্ত বৈঠক হয়েছে। প্রস্তাবিত নয়া বাজারে ফুল সংরক্ষণের জন্য হিমঘর, প্রশিক্ষণকেন্দ্র, নষ্ট ফুল থেকে রং ও আবির তৈরির প্রকল্প, বর্জ্য থেকে সার তৈরির প্রকল্প, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও আধুনিক শো-রুম থাকবে। মোট মঞ্জুর ২০ কোটি টাকার মধ্যে প্রথম কিস্তির বরাদ্দ ৫ কোটি টাকা আসে ২০০৬ সালে। ২০০৯-এ দিল্লিতে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয় সেই অগ্রিম পাঁচ কোটি টাকা। রাজ্যে নতুন
সরকার আসার পরে আগেকার বাজার পরিচালন কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। প্রকল্পটি রূপায়ণের লক্ষ্যে এ বার দ্রুত নতুন বাজার পরিচালন সমিতি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য।
হাওড়া ব্রিজের নীচে এশিয়ার এই বৃহত্তম ফুলবাজারে একাধিক বার আগুন লেগেছে। বর্ষায় অগম্য হয়ে ওঠে বাজারের নানা অংশ। নয়া মন্ত্রিসভা আসার প্রায় আট মাস পরেও কেন এই অবস্থা? রাজ্যের উদ্যানচর্চা উন্নয়ন নিগমের কর্তা সুব্রত বসুর যুক্তি, “উদ্যানচর্চামন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পরে বিভিন্ন স্তরে আলোচনা চালাচ্ছিলেন। এর মধ্যে মন্ত্রী বদল হয়ে যায়। দেরির অন্যতম প্রধান কারণ এটিই।” নয়া মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, “শীঘ্রই নয়া বাজার পরিচালন কমিটি তৈরি হবে। এর পরে রূপায়িত হবে উন্নয়ন প্রকল্পটি।” |
ফুলবাজারের কাজ দেখভাল করতে ২০০৪-এর ১৬ নভেম্বর তৈরি হয়েছিল কমিটি। দৈনিক তিন হাজারের উপরে চাষি ফুলের পসরা নিয়ে আসেন ওই বাজারে। তাঁদের কাছ থেকে ভাড়া বাবদ নেওয়া হত সাত টাকা করে। গত বছর জুলাই মাসের গোড়া থেকে ওই ভাড়া আর আদায় করা হচ্ছে না। এই হিসেবে অনাদায়ী রয়ে গিয়েছে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। একই সঙ্গে ২৪৪ জন স্টলের ভাড়াটে ও আরও ৩২২ জন পাইকারি বিক্রেতার কাছ থেকেও ভাড়া নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। উদ্যানচর্চা উন্নয়ন নিগমের হিসেবে ওই খাতে বকেয়া রয়ে গিয়েছে আরও প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। সেই ভাড়া নেওয়ার কাজ ফের শুরু করেছে নিগম।
কেন এই অবস্থা? বাম-আমলে ফুলবাজার পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান করা হয়েছিল সুধাংশু শীলকে। তাঁর বক্তব্য, “এটি একটি রেজিস্টার্ড সোসাইটি। সরকার বদলের পরে আমাদের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এর পরের দায়িত্ব ওঁদের হাতে।” ফুলবাজারের আধুনিকীকরণের পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি ছিল সেখানকার দোকানিদের একাংশের। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলন শুরু হলে প্রভাব পড়ে ফুলবাজারেও। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল আন্দোলন শুরু করে সেখানেও।
কেন ওই বাজারে নয়া কমিটি তৈরি করে উন্নয়নের চেষ্টা হচ্ছে না?
পার্থবাবু বলেন, “বাম-আমলে পরিচালন কমিটির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সে সব খতিয়ে দেখার কথা হচ্ছে।” সরকারি নির্দেশে ওই কমিটির অ্যাকাউন্ট ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের বড়বাজার শাখায় ওই অ্যাকাউন্টে রয়েছে নগদ ১৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এবং মোট ২৯.১৮ লক্ষ টাকার চারটি স্থায়ী আমানত। ‘মল্লিকঘাট ফুলবাজার বাঁচাও কমিটি’র নেতা গৌতম সমাদ্দার জানান, “আগের কমিটির অনিয়মের ব্যাপারে উত্তর বন্দর থানায় ২০১১-র ১৬ জুন আমরা এফআইআর করেছি। এ ব্যাপারে সুধাংশু শীলের বক্তব্য, “তদন্ত হোক না! ওখানকার মোট ৬০ জন কর্মীর নিয়মিত বেতন দিয়ে এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেও প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা কমিটির অ্যাকাউন্টে আছে। আয়-ব্যয়ের সব হিসেব আমরা উদ্যানচর্চা উন্নয়ন নিগমকে দিয়েছি।” নয়া সরকার আধুনিকীকরণ প্রকল্প রূপায়ণের যে পরিকল্পনা করেছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন সুধাংশুবাবু। |