দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কারের অভাবে খানাখন্দে ভরা কাশীপুর-সুপুর রাস্তা বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, রাস্তা খারাপ হওয়ার কারণে প্রায় দিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু বার বার প্রশাসনের কাছে দরবার করেও কাজ হয়নি। তাঁদের আশঙ্কা, প্রশাসন অবিলম্বে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু না পারলে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটবে। তবে প্রশাসনের আশ্বাস, শীঘ্রই রাস্তাটি সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে।
কাশীপুর বাসট্যান্ড থেকে সুপুর মিনিবাজার পর্যন্ত এই রাস্তা প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা হলেও রাস্তাটির গুরুত্ব অনেকখানি। অজয়-সুপুর অধুনা জাতীয় সড়ক ২বি এবং বোলপুর-ইলামবাজার রাস্তা দু’টির মধ্যে সংযোগ রক্ষা করছে এই রাস্তা। প্রতি দিন এই রাস্তা দিয়ে বহু গাড়ি যাতায়াত করে। বর্ধমানগামী রুটের বাসও চলে। বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করা রোগীদের এই রাস্তা দিয়েই নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু রাস্তাটির বর্তমান অবস্থা ভয়াবহ। অনেক জায়গায় পিচ, পাথর উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই রাস্তায় যাত্রীবাহী বাস কিংবা অ্যাম্বুল্যান্সে রোগী নিয়ে যাওয়া খুবই ঝুঁকির। |
তাই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে বার বার আন্দোলন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে বার বার রাস্তা সংস্কারের জন্য বিভিন্ন দফতরে লিখিত আবেদন করা হয়। এমনকি তাঁরা রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত অফিসেও অবস্থান বিক্ষোভ পর্যন্ত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাস, মোজাম্মেল হক, সুজিত গড়াই জানান, এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। রাস্তায় এত গর্ত যে পায়ে হেঁটেও নিশ্চিন্তে চলাচল করা যায় না। ছড়িয়ে থাকা পাথর গাড়ির চাকায় লেগে ছিটকে আসে। গর্তে জমে থাকা জল ছিটকে আসায় জামা-কাপড় নোংরা হয়। ভাঙাচোরা রাস্তায় সাইকেল, মোটরবাইক মাঝে মধ্যে বেসামাল হয়ে উল্টে পড়ে। এ রকম বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাই স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী এবং অন্যান্য নিত্যযাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।
রাইপুর-সুপুর গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালে তৎকালীন রাজ্যসভার সাংসদ আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্যের এবং স্থানীয় বিধায়ক আরএসপি-র তপন হোড়ের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় ওই রাস্তা সংস্কার করে পাকা করা হয়েছিল। রাস্তাটির গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় গাড়ির চাপ অত্যাধিক পরিমাণে বেড়ে যায়। কিন্তু নিয়মিত সংস্কার হয়নি। ফলে রাস্তাটি ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। বাসিন্দারা জানিয়েছে, গত বছর থেকে ওই রাস্তার বিভিন্ন অংশে খানাখন্দ তৈরি হয়। জল জমতে থাকে। বিপর্যস্ত হতে থাকে যান চলাচল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ তখন থেকেই বেহাল রাস্তার সংস্কারে বার বার প্রশাসনের দারস্থ হচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে বাসিন্দারা স্থানীয় রাইপুর-সুপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এবং বীরভূম জেলা পরিষদের দারস্থ হন। চিঠি দেন স্থানীয় বিধায়ক তথা তৎকালীন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহকেও। কাজ না হওয়ায় দু’মাস পরে নভেম্বরে তাঁরা আবার স্থানীয় পঞ্চায়েত-সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দফতরে গণস্বাক্ষরিত চিঠি পাঠান। কিন্তু, এরপরেও প্রশাসনের তরফ থেকে কোনও সদিচ্ছা দেখা যায়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। সমস্যার সমাধান না হওয়ায় বাসিন্দারা ১২-১৯ ডিসেম্বর বোলপুর-বর্ধমান রুটের যাত্রীবাহী বাস ও জরুরিকালীন পরিষেবার যানবাহন ব্যতীত অন্যান্য যান চলাচল এই রাস্তায় বন্ধ করে দেন। ১৯ ডিসেম্বর আন্দোলনকারীরা রাইপুর-সুপুর গ্রাম পঞ্চায়েত দফতরে অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেন। এরপরেই তাঁদের দাবি নিয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। সম্প্রতি রাস্তার কয়েকটি জায়গায় পাথর ফেলা হয়েছে।
রাইপুর-সুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূল কংগ্রেসের মিনা বিশ্বাস বলেন, “আমরা বিষয়টি শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ (এসএসডিএ) কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ঠিক হয়েছে ওই রাস্তা ঢেলে সংস্কার করা হবে। বিষয়টি বাসিন্দাদের জানিয়েছি।” সমস্যার কথা জানেন বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি সিপিএমের অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ পেয়েছিলাম। শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এসএসডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৫৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ওই রাস্তা সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ‘টেন্ডার’ও হয়ে গিয়েছে। বোলপুরের বিডিও তথা এসএসডিএ-র নির্বাহী আধিকারিক অমল সাহা বলেন, “ওই রাস্তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা এবং বাসিন্দাদের দাবি মেনে কাজের ‘টেন্ডার’ হয়েছে। সরকারি নিয়মনীতি মেনে, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে রাস্তার কাজ সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।”
|