তুলো সরবরাহের অভাবে গত ৮ মাস থেকে উৎপাদন বন্ধ। গত দু মাস থেকে কর্মীরা বেতন পাচ্ছে না। সমস্যার কথা কয়েকবার রাজ্য সরকার ও জেলা প্রশাসনের কাছে জানিয়েও লাভ হয়নি। ওই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে শুক্রবার থেকে রাজ্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের অধীন উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের স্পিনিং মিলের কর্মীরা আন্দোলনে নামলেন। মিলের ডান ও বাম ৬টি শ্রমিক সংগঠন এবং একটি অফিসার সংগঠনের সদস্যরা ‘ট্রেড ইউনিয়ন অ্যান্ড অফিসার্স ওয়েলফেয়ার ফোরাম’ গঠন করে ওই আন্দোলন পরিচালনা করছেন। মিলের উৎপাদন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করে কর্মীদের মাস পয়লা বেতন দেওয়ার দাবিতে এ দিন ফোরামের কয়েকশো সদস্য রায়গঞ্জ শহরের হাসপাতাল রোড থেকে শিলিগুড়ি মোড় পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তায় মিছিল করে বিক্ষোভ দেখান। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে মিলের উৎপাদন স্বাভাবিক করে কর্মীদের বকেয়া বেতন না দেওয়া হলে কর্মীরা টানা বিক্ষোভ আন্দোলনে নামার হুমকিও দেন। |
ফোরামের তরফে সিটু অনুমোদিত ওয়েস্ট দিনাজপুর স্পিনিং মিল ওয়ার্কার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র দেব বলেন, “কর্তৃপক্ষ সরবরাহকারী দুই সংস্থাকে দাম না মেটানোয় মিলে তুলো সরবরাহ বন্ধ হয়েছে। গত ৮ মাস ধরে মিলে সুতো তৈরির কাজ বন্ধ। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে কর্মীরা নিয়মিত বেতন পাচ্ছে না। আর্থিক সঙ্কটে পড়ে তাঁদের সংসার চালানো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারকে পরিস্থিতির কথা জানিয়ে লাভ হচ্ছে না। তাই আন্দোলনে নামতে হল।” ফোরামের তরফে আইএনটিইউসি অনুমোদিত ওয়েস্ট দিনাজপুর স্পিনিং মিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিলচন্দ্র সরকার বলেন, “ফ্রেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে শহর জুড়ে আন্দোলন শুরু হবে।” মিলের চেয়ারম্যান তথা রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, “আমি কয়েকবার রাজ্য সরকারের কাছে মিলের সমস্যার কথা জানিয়েছি। কিন্তু লাভ হয়নি। মিলের উৎপাদন বন্ধ। বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মীরা চরম আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছেন। রাজ্য সরকার অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।” মিল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছর থেকে তুলো সরবরাহকারী দুই সংস্থার মিল কর্তৃপক্ষের কাছে পাওনার পরিমান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকা। বকেয়া টাকা না মেলায় গত বছরের জুন মাস থেকে ওই দুই সংস্থা মিলে তুলো সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। কাঁচামালের অভাবে মিলে সুতো তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বেকার হয়ে পড়েন ৫২৪ জন স্থায়ী ও ১৮০ জন অস্থায়ী কর্মী। উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে তাঁদের বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। অক্টোবর মাসের বেতন গত ১৯ ডিসেম্বর এবং নভেম্বর মাসের বেতন তাঁরা গত ১৩ জানুয়ারি হাতে পেয়েছেন। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের বেতন কর্মীরা পায়নি। আর্থিক সঙ্কটে পড়ে সম্প্রতি মানসিক অবসাদে মিলের এক কর্মী ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। ওই পরিস্থিতিতেও মিলের উৎপাদন এবং কর্মীদের বেতন কবে নাগাদ নিয়মিত হতে পারে তা জেলা প্রশাসনের কর্তারা স্পষ্টভাবে জানাতে পারেননি। উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “মিলের কর্মীরা কয়েকবার সমস্যার কথা জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের তরফে রাজ্য সরকারকে লিখিতভাবে সবকিছু জানানো হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।” |