উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থায় ঠিকাদার নিযুক্ত কর্মীর সংখ্যা কমানোর নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবিতে এ বার ডিপোয় তালা ঝুলিয়ে দিল কংগ্রেস। শুক্রবার বিকেলে বালুরঘাট ডিপোয় ঘটনাটি ঘটেছে।
ডিপো সূত্রের খবর, বেলা ৩টে নাগাদ দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায়ের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন কংগ্রেস কর্মী-সমর্থক ডিপোয় ঢুকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁরা বালুরঘাট ডিপো ইনচার্জ ও টিকিট কাউন্টারের কর্মীদের বার করে দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন। বিকেল থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টা ডিপো অচল হয়ে যায়। ফলে, যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। পরে সংস্থার তরফে জেলা পুলিশ-প্রশাসনকে জানানো হলে আঞ্চলিক পরিবহণ অফিসার পুলিশ নিয়ে সেখানে যান। জেলা প্রশাসনের অনুরোধে সন্ধ্যায় কংগ্রেস সভাপতি চাবি দিলেও রাত পর্যন্ত তালা খোলেনি। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হয়েছে।”
নীলাঞ্জনবাবু বলেন, “আমরা যাত্রীদের দুর্ভোগের জন্য দুঃখিত। কিন্তু আমরা নিরুপায়। ঠিকাদার নিযুক্ত ২৯ জন কর্মীকে ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারব না। প্রশাসনের অনুরোধে সন্ধ্যায় চাবি ডিপোর অফিসারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই নির্দেশ প্রত্যাহার না-করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কাউকে অনাহারের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য পরিবর্তন আনা হয়নি।” |
এনবিএসটিসি সূত্রের খবর, বালুরঘাটে ডিপোয় তালা ঝুলিয়ে যাত্রী পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগন। সংস্থার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আন্দোলনের নামে যাত্রীদের দুর্ভোগে ফেলার ঘটনা কখনও বরদাস্ত করা যায় না। এমডি-কে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” পাশাপাশি, জোরাজুরি না-করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংস্থাকে লাভজনক করে তোলার জন্য অফিসার-কর্মীদের সহযোগিতা চেয়েছেন চেয়ারম্যান। আজ, শনিবার কোচবিহারে সংস্থার সদর দফতরে তিনি জরুরি বৈঠকের ডাক দিয়েছেন।
এনবিএসটিসি সূত্রের খবর, সংস্থায় ঠিকাদার নিযুক্ত মোট ১০৮৫ জন কর্মী রয়েছেন। বাম আমলে ওই ঠিকাদার নিযুক্ত কর্মীর সংখ্যা একবার কমানো হয়। কিন্তু, বছর পাঁচেক আগে ফের কয়েকশো কর্মীকে ঠিকাদারের মাধ্যমে নিযুক্ত করা হয়। সংস্থার এক কর্তা জানান, ঠিকাদারের মাধ্যমে কর্মীদের মাইনে দিতে গিয়ে পিএফের টাকায় পর্যন্ত হাত পড়েছে। ফলে প্রায় ৯০ কোটি টাকা পিএফ বাবদ জমা দিতে পারেনি এনবিএসটিসি। সংস্থার চেয়ারম্যান বলেন, “সব দিক ভেবেই সংস্থাকে বাঁচাতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তাতে বাধা দিলে সংস্থার সাড়ে ৩ হাজারের বেশি অফিসার-কর্মী বিপন্ন হয়ে পড়বেন।”
সংস্থার ডিরেক্টর তৃণমূল কংগ্রেসের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কার্যকরী সভাপতি বিপ্লব খাঁ বলেন, “কংগ্রেস আন্দোলনের নামে অশান্তি করছে।” প্রাক্তন বোর্ড সদস্য তথা সিপিএম নেতা গৌতম গোস্বামীও কংগ্রেসের আন্দোলনের পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “এ ভাবে যাত্রী পরিষেবা বন্ধ করে আন্দোলন সমর্থন করা যায় না। তবে আমরাও কর্মী ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে।” |