হরেক অভিযোগে উত্তপ্ত হাসপাতাল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির একাধিক অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল। শুক্রবার সকালে দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের পরিদর্শনের সময়েই এক সদ্যোজাতকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে হইচই হয়। পরে দেখা যায়, প্রসবের পরে মায়ের মৃত্যু হওয়ায় শিশুটিকে আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, বাড়ির লোকজনদের বক্তব্য, কয়েকজন প্রতিবেশীর হাতে জবরদস্তি শিশুটিকে তুলে দেন কর্তৃপক্ষ। ওই শিশুটির মা প্রসবের পরে গুরুতর অসুস্থ হলে তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। অস্বাভাবিক ভাবে মৃত এক ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ হিসেবে হাসপাতালের ‘ডেথ সার্টিফিকেট’-এ যা লেখা হয়েছে তার সঙ্গে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট মিলছে না। এই অভিযোগে বিক্ষোভ দেখিয়ে তদন্তের দাবি করে কংগ্রেস। জেলাশাসক বলেন, “হাসপাতালের পরিস্থিতি ৪-৫ মাসে অনেকটা পাল্টেছে। আরও কাজ করতে হবে। ২৪ ঘণ্টা রোগী সহায়তা কেন্দ্র ও সুলভ শৌচালয় খোলা রাখতে বলেছি। অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্যও জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে বলা হয়েছে।” |
শিলিগুড়ি হাসপাতালের নানা অনিয়ম নিয়ে দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক
সৌমিত্র মোহনের কাছে অভিযোগ জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
হাসপাতাল সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে আদর্শনগরের বাসিন্দা আসমিনা বিবি (২২) নামে এক প্রসূতিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে শিলিগুড়ি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিন সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। রোগীর আত্মীয়রা সদ্যোজাতকে নিতে শিলিগুড়ি হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন তাঁকে অপর কেউ নিয়ে গিয়েছে। তার খোঁজ না পেয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। পরে অবশ্য আদর্শনগরের এক বাসিন্দা শিশু নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানান। এদিন হাসপাতালের অবস্থা খতিয়ে দেখতে যান জেলাশাসক। সঙ্গে ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক, ডেপুটি স্বাস্থ্য আধিকারিক অশোক বিশ্বাস প্রমুখ। হাসপাতালে ঢুকেই রোগী সহায়তা কেন্দ্র নিয়ে খোঁজখবর নেন জেলাশাসক। এর পর তিনি সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তিনি নির্দেশ দেন, সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের সামনে গলিতে রাখা দুটি শয্যা সরিয়ে দিতে হবে। কেউ যাতে কোথাও পানের পিক বা গুটকা খেয়ে হাসপাতাল অপরিষ্কার করতে না পারেন সেদিকে লক্ষ্য রাখতে। এ ছাড়াও লেবার রুমে প্রসূতিদের জন্য শয্যার সামনে রেলিং দেওয়ার ব্যপারেও উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান তিনি। রাত বাড়লেই হাসপাতালে চত্বরে মদ্যপদের দাপাদাপি শুরু হয় বলে অভিযোগ ওঠে। রাত ৯টার পরে শৌচাগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোগীর আত্মীয়রা সমস্যায় পড়েন বলে জেলাশাসককে অভিযোগ জানান অনেকে। দুক্ষেত্রেই জেলাশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। হাসাতালের নিরাপত্তারক্ষী শীঘ্রই বাড়ানো হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, “হাসপাতালের প্রত্যেকটি ওয়ার্ড আধুনিক মানের করে গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এবং এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান হাসপাতালের উন্নয়নে সাহায্য করছেন।” হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর মৃত প্রসূতির পরিজনরা শিশু নিখোঁজের অভিযোগ তুলে জেলাশাসককে অভিযোগ জানান। সেখানে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর স্বপন চন্দ বলেন, “জেলাশাসককে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।” সেখানে থাকা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “বিষয়টি দেখা হচ্ছে।” এ দিনই দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সুপারকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। কংগ্রেসের জেলার সাধারণ সম্পাদক বিকাশ সরকারের অভিযোগ, গত ৮ জানুয়ারি রাতে কয়েক জন প্রতিবেশির মহম্মদ সালাউদ্দিনকে মারধর করেন। ৯ জানুয়ারি তাঁকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে তিনি মারা যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত্যুর কারণ হিসেবে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দেন। পরিজনরা বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ জানালে ময়নাতদন্ত হয়। তার রিপোর্ট অনুযায়ী, মাথায় আঘাতে মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, “মারধরের ফলে তাঁর মৃত্যু বলে মানতে চাননি চিকিৎসক। ঘটনার তদন্ত চাই।” শিলিগুড়ি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার অশোক বিশ্বাস বলেন, “ওই রোগীকে মারধর করা হয়েছে তা জানানো হয়নি। চিকিৎসক মেডিক্যাল ডায়াগনসিসের উপর রিপোর্ট দিয়েছেন। পরে মারধরের বিষয়টি উঠে আসায় ময়না তদন্তে অন্য রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে।” |