ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে ধৃত সেখানকার ছয় ডিরেক্টর জেলে খাওয়া, শোয়া-সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ সুবিধা পাবেন। কারণ তাঁদের প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা দিয়েছে আলিপুর আদালত। শুক্রবারেই এই সংক্রান্ত নির্দেশ জারি হয়েছে।
জেলে প্রথম শ্রেণির বন্দিরা বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন। প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা দেওয়ার আবেদন মঞ্জুর হওয়ায় এখন থেকে আমরি হাসপাতালের ছয় ডিরেক্টর শ্রবণকুমার তোদি, রবি তোদি, রাধেশ্যাম গোয়েনকা, মণীশ গোয়েনকা, প্রশান্ত গোয়েনকা এবং দয়ানন্দ অগ্রবালও ওই সব সুবিধা পাবেন। ওই ছ’জন এখন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে রয়েছেন।
প্রথম শ্রেণির বন্দি হিসেবে কী কী অতিরিক্ত সুবিধা পেতে পারেন আমরির ওই ছয় ডিরেক্টর? |
শ্রবণ |
দয়ানন্দ |
মণীশ |
প্রশান্ত |
রাধেশ্যাম |
রবি |
|
জেল সূত্রে বলা হয়, প্রথম শ্রেণির বন্দিরা জেলে লোহার খাট পাবেন। পাবেন গদি, কভার দেওয়া তুলোর বালিশ, কম্বল, মশারিও। তাঁদের সেলে চেয়ার-টেবিল ও আয়না থাকবে। পাবেন দু’টি সংবাদপত্র, পছন্দের বইপত্র, বাঁধানো খাতা, কলমও। খাবারের ক্ষেত্রেও তোদিরা বিশেষ সুবিধা পাবেন জেলে। প্রথম শ্রেণির বন্দিরা সকালে টিফিনে পান চা, পাউরুটি, ডিম, দুধ ও মোসাম্বি। দুপুরে পরিমাণমতো ভাত, ডাল, সব্জি, মাছ (সপ্তাহে চার দিন), মাংস (সপ্তাহে তিন দিন) এবং দই। রাতে ছ’টি হাতরুটি বা চাপাটি, সব্জি ও ডাল। আমরির ছয় ডিরেক্টরই নিরামিষাশী। তাই তাঁদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা হবে। তোদিদের আইনজীবী আগেই তাঁর মক্কেলদের জন্য রাজমা ও পনিরের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন। এ বার প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা পাওয়ায় তোদিদের জন্য ওই খাবারের ব্যবস্থা করতে জেল-কর্তৃপক্ষের কোনও সমস্যা হবে না।
সাধারণ বন্দিরা অত্যন্ত সাদামাঠা খাবার পান। বালিশ ছাড়া মেঝেতেই শুতে হয় তাঁদের। মশারিও দেওয়া হয় না। পাছে তা কোনও অঘটনের কারণ হয়ে ওঠে। থাকে না চেয়ার-টেবিল, আয়নাও। আদালত ছয় আমরি-কর্তাকে জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে তাঁরা সাধারণ বন্দি হিসেবেই জেলে থাকছিলেন। তাতে যে তাঁদের সমস্যা হচ্ছিল, তা আদালতকে জানান তোদিদের আইনজীবী শেখ সেলিম রহমান। তাঁর মক্কেলদের প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা দেওয়ার জন্য সম্প্রতি মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট চৌধুরী হেফাজত করিমের এজলাসে আবেদন জানিয়েছিলেন সেলিম।
তোদিদের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, দাগি অপরাধী না-হলে যে-সব বিচারাধীন বন্দি উচ্চশিক্ষিত, যাঁরা
সামাজিক মর্যাদা ও উন্নত মানের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত, জেল-বিধি অনুযায়ী তাঁদের প্রথম শ্রেণির বন্দির সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা। তাই তাঁর মক্কেলদের প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা দেওয়া হোক।
আদালতে এই আবেদন আসার পরে বিচারক চৌধুরী হেফাজত করিম মামলার তদন্তকারী অফিসারকে অভিযুক্তদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে বলেন। আদালতে রিপোর্ট পেশ করে তদন্তকারী অফিসার জানিয়ে দেন, আমরির ছয় ডিরেক্টর প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। তার পরেই শুক্রবার আদালত ওই ছয় অভিযুক্তকে প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
|
অন্তর্বর্তী জামিন পাওয়ার পরেও এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন না আমরির ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ৯৩ বছরের চিকিৎসক মণি ছেত্রী। শুক্রবারেও তিনি ওই হাসপাতালের আইসিসিইউ-এই ছিলেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, জামিন পেলেও এখনই ওই চিকিৎসকের বাড়ি যাওয়া হচ্ছে না। কারণ মণিবাবু দাঁড়াতেই পারছেন না। দাঁড়ালেই রক্তচাপ নেমে যাচ্ছে। আজ, শনিবার মেডিক্যাল বোর্ড বসবে। মণিবাবু কবে ছাড়া পাবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেবে ওই বোর্ডই। |