আবার চাপান-উতোর
জেলা হাসপাতালে চিকিৎসক দল পাঠাচ্ছে কংগ্রেস
শিশুমৃত্যু নিয়ে শাসক-বিরোধী চাপানউতোরের মধ্যেই ময়দানে নেমে পড়ল সরকারের জোট শরিক কংগ্রেস।
জেলা হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোগত ত্রুটি খতিয়ে দেখতে আগামী সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শনে চিকিৎসক দল (মেডিক্যাল টিম) পাঠাচ্ছে কংগ্রেস। প্রাথমিকভাবে বাঁকুড়া, বর্ধমান, মালদহ জেলা হাসপাতালের অবস্থা দেখে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রিপোর্ট পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শরিক দল। প্রদেশ নেতৃত্বের বক্তব্য, হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নতিতে সরকারকে সাহায্য করার ‘সদিচ্ছা’ নিয়েই কংগ্রেস টিম পাঠাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে প্রদেশ নেতৃত্ব সামনে রাখছেন শুক্রবার এআইসিসি-র মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বক্তব্যকে, “শিশুমৃত্যুর ঘটনা মর্মান্তিক। এই ঘটনা যাতে ঠেকানো যায়, তা দেখা উচিত। এ নিয়ে দোষারোপের খেলায় নামা উচিত নয়। রাজনীতি করাও উচিত নয়।”
রাজ্যে একের পর এক শিশুমৃত্যু ও ‘বেহাল’ স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে প্রধান শাসকদল তৃণমূল এবং বিরোধী সিপিএমের মধ্যে দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপ চলছেই। এ দিনও ফের স্বাস্থ্য পরিষেবার দুর্দশার জন্য সিপিএমকে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যভবনে তিনি বলেন, “রাজ্যের স্বাস্থ্যের হাল খারাপ প্রমাণ করতে সিপিএম নানারকম ষড়যন্ত্র করছে।” নাম না-করলেও কংগ্রেসের সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেন, “আগে একা (সিপিএম) ছিল, এখন আবার এক বন্ধু জুটেছে!” স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগের কোনও জবাব দেওয়া অবশ্য ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মনে করেননি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। এ দিন তিনি দলের চিকিৎসক শাখার সঙ্গে বৈঠকের পর জানান, জেলা হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে ৭ ফেব্রুয়ারি বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাবে চিকিৎসকদের দল। ১৫ ফেব্রুয়ারি তারা যাবে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তার ক’দিন পর মালদহ জেলা হাসপাতালে। প্রদীপবাবু বলেন, “আপাতত এই তিনটি হাসপাতাল ঘুরে দেখে মেডিক্যাল টিম যে রিপোর্ট দেবে, তা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।”
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ দিনও অভিযোগ করেছেন, “শিশুমৃত্যুর নাম করে ষড়যন্ত্র চলছে। সবটাই সাজানো ঘটনার নোংরা খেলা। স্যালাইনের বোতলে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়া হচ্ছে! নিজেদের অপকীর্তি ফাঁসের ভয়েই ওরা এ সব করছে।” যার জবাবে প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, অধুনা বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র কটাক্ষ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর প্যারানইয়া’ (সন্দেহজনিত আতঙ্ক) দেখা দিয়েছে। সূর্যবাবুর কথায়, “উনি(মমতা) বলছেন, সব অপপ্রচার হচ্ছে। কৃষকের আত্মহত্যা, শিশুমৃত্যু উদ্বেগজনক কি না, সেটা আগে ঠিক করুন! বামফ্রন্ট আমলে সব ঠিক ছিল, এটা কখনও দাবি করিনি। এখনও সব ঠিক চলবে, এমন আশা করি না। কিন্তু কৃষক মৃত্যু, শিশুমৃত্যু, অনাহারে মৃত্যু, ছাঁটাই রোজ যে ভাবে শিরোনামে আসছে, সেটা তো আগে ছিল না। উনি মনে করছেন, সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সবাই চক্রান্ত করছে! ইংরেজিতে একে বলে ‘প্যারানইয়া’। সেটা হলে কী বলার আছে?”
বিরোধীদের ‘ষড়যন্ত্র’ সম্পর্কে ‘নিঃসন্দেহ’ হতে সব হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সকে ‘সাবধান’ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, “আমাদের সাবধান থাকতে হবে। রোগীকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার আগে তার মেয়াদ ভাল করে দেখে নিতে হবে।” রাজ্যে শিশুমৃত্যুর প্রেক্ষিতে মমতা বলেন, “৩০% শিশুই বাড়িতে জন্মায়। বাড়িতে প্রসব হলে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেওয়া যায় না এবং সে সব ক্ষেত্রে শিশুমৃত্যু ঠেকানো মুশকিল হয়।” যে প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যবাবু বলেন, “উনি ঠিকই বলেছেন। কিন্তু আগে ওই হার ৭০%-এর বেশি ছিল। অনেক চেষ্টায় হাসপাতালে প্রসবের হার ৭০%-এ নিয়ে যেতে পেরেছিলাম। সেই ধারা রক্ষা করতে পারেন কি না, সেটা আগে দেখুন।”
কংগ্রেস-তৃণমূল ‘টানাপোড়েন’ নতুন মাত্রা যোগ করেছে বৃহস্পতিবার ক্যানিংয়ে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে প্রদেশ সভাপতি প্রদীপবাবুর মন্তব্য। তিনি বলেছিলেন, “সেই সময় তৃণমূলের সঙ্গে আমরা সামিল হতে পারিনি। কারণ, তখন সিপিএমের সমর্থনে দিল্লিতে আমাদের সরকার চলছিল।” যদিও প্রদীপবাবুর দাবি, তিনি ওই কথা বলেননি। তাঁর কথায়, “আমি বলেছিলাম, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সময় কেন্দ্রে সিপিএমের সমর্থনে আমাদের সরকার চলছিল বলে অনেকে ভেবেছিলেন, আমরা প্রতিবাদ করব না। কিন্তু কংগ্রেসের তরফে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি-সহ কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নেতারা তখন আক্রান্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সে দিনও যেমন ভূমিকা ছিল কংগ্রেসের, আজও তেমন চাষিরা বঞ্চিত হলে প্রতিবাদ করবই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.