দয়া করে গ্রামে যান একটু, ডাক্তারদের আর্জি মমতার
গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের ঘাটতি মেটাতে বিকল্প পন্থার সন্ধান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারেরা সপ্তাহে দু’দিন গ্রামে গিয়ে কাজ করলে সমস্যার কিছুটা সুরাহা হবে। ‘জবরদস্তি’ নয়, শুক্রবার চিকিৎসকদের কাছে এই মর্মে ‘প্রস্তাব’ পেশ করেছেন মমতা।
এ দিন স্বাস্থ্য ভবনে এক অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারদের উদ্দেশে বলেন, “দয়া করে আপনারা ছোট হাসপাতালগুলোতেও সময় দিন। কোন হাসপাতালে যাবেন, আপনারা নিজেরাই ঠিক করে নিন।” তাঁর বক্তব্য, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোই আসল সেবার জায়গা। তাই যে কোনও চিকিৎসকেরই উচিত সেখানে মনপ্রাণ ঢেলে কাজ করা। ডাক্তারদের প্রতি তাঁর অনুরোধ, “দয়া করে গ্রামে যান না একটু! আপনাদের দেখা পেলে, একটু সহানুভূতির কথা শুনলেই রোগীরা অনেকটা ভরসা পাবেন।”
তবে মেডিক্যাল কলেজগুলোয় চিকিৎসক সঙ্কট সম্পর্কেও যে তিনি বিলক্ষণ ওয়াকিবহাল, তা-ও বুঝিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তাঁর ঘোষণা, রাজ্যের সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার আর্থিক প্রতিবন্ধকতার কথা ভাববে না। যেখান থেকে হোক, টাকার ব্যবস্থা হবে।
কিন্তু এত ডাক্তার মিলবে কোথা থেকে? সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক পাওয়ার জন্য ফের চিকিৎসক সমাজেরই দ্বারস্থ হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমবিবিএসদের সরকারি চাকরিতে যোগদানের আর্জি জানানোর পাশাপাশি তাঁদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথাও বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “প্রথম তিন বছর গ্রামে কাজ করলে এমডি-এমএস পড়ার সময়ে নম্বরে ছাড় পাবেন। অন্য সুযোগ-সুবিধাও থাকবে। তবে জেলার কোন অংশে যাবেন, সেটা নিজেরা বেছে নিলে চলবে না। এ রাজ্যে ডাক্তার পাওয়া না-গেলে ভিন রাজ্য থেকেও ডাক্তার আনার চেষ্টা হবে।” উল্লেখ্য, বাম আমলেও জেলায় কাজ করে আসা সরকারি ডাক্তারদের জন্য এমডি-এমএস প্রবেশিকায় আলাদা কোটার ব্যবস্থা ছিল। তা সত্ত্বেও গ্রামে ডাক্তারের অভাব মেটানো যায়নি।
স্বাস্থ্য ভবনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র
আবেদন-অনুরোধের সঙ্গে সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের কাজের সমালোচনাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘নন প্র্যাক্টিসিং’ ভাতা নিয়েও চিকিৎসকদের একাংশ সরকারি হাসপাতালে যথাযথ সময় দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, “কে কোথায় কী করছেন, আমরা নজরে রাখছি।” মুখ্যমন্ত্রী এ দিন স্পষ্ট করে দেন, কাজের সময়ে চিকিৎসকদের রাজনীতি করাটা তাঁর একেবারেই পছন্দ নয়। “কাজের সময়ে নয়, ভোটের সময়ে রাজনীতি করুন। না হলে মানুষের কথা মাথায় রাখা যাবে না।” নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর।
রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই ভাল কাজের জন্য পুরস্কার এবং কাজ না-করার জন্য তিরস্কারের নীতি নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এ দিন সেই ‘ভাল কাজের’ (প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব) জন্যই ৬৫টি গ্রামীণ হাসপাতাল ও ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে পুরস্কৃত করেন মুখ্যমন্ত্রী। শংসাপত্র, ফলকের সঙ্গে ছিল আর্থিক অনুদানও। গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের দেওয়া ওই টাকা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোর উন্নয়নে খরচ করা হবে। কাজের ক্ষেত্রে এমন স্বীকৃতিদান স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এই প্রথম। এবং মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, এর পরে ব্যক্তিগত স্তরেও ভাল কাজের ইনাম দেওয়া হবে।
ক্ষমতায় বসার পরে, গত আট মাসে এ নিয়ে দ্বিতীয় বার ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী’ হিসেবে স্বাস্থ্য ভবনে গেলেন মমতা। ইতিমধ্যে রাজ্যে শিশুমৃত্যু নিয়ে বিস্তর শোরগোল উঠেছে। যা নিয়ে প্রতি সমাবেশেই মুখ্যমন্ত্রী মুখ খুলেছেন। এ দিনও ব্যতিক্রম হয়নি। অপরিণত সন্তানের জন্ম দেওয়া অপুষ্ট মায়েদের ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়ানোর প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “স্বাস্থ্য-সচিবকে বলেছিলাম। উনি বলেছেন, অনেক খরচ। তবু আমরা দেব।” সম্প্রতি অপরিণত শিশুদের মৃত্যু প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর টিপ্পনি, “এঁরা (মায়েরা) সকলেই তো দশ মাস আগে অন্তঃস্বত্ত্বা হয়েছিলেন। তখন তো আর আমরা ক্ষমতায় ছিলাম না!”
পশ্চিমবঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার এখন ৭০%।
তা বৃদ্ধির স্বার্থে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো বাড়ানোয় জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। “আমরাও দাই মা-র হাতে জন্মেছি। তখন ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু এখন সেটা বাড়াতে হবে।” বলেন তিনি। আবার নবজাতকের ওজন সম্পর্কে বলতে গিয়ে এ দিনও তিনি ফের ‘দেড় কিলো’র প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। বলেছেন, “বাচ্চার ওজন আড়াই কিলো হলে খুব ভাল। দেড় কিলো হলেও ঠিক আছে। কিন্তু পাঁচশো-ছ’শো গ্রাম হলে কিছু করার থাকে না। সেই বাচ্চারাই মারা যাচ্ছে। সাংবাদিকেরা কিছু না-বুঝে সেটা নিয়েই নৃত্য করছেন।” মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যে দর্শকাসনের অনেককে (যাঁদের প্রায় সকলেই চিকিৎসক) হাততালি দিতেও দেখা যায়।
অন্যান্য রাজ্যের সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটে শিশুমৃত্যুর তুলনা টেনে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন এ-ও প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা খারাপ কিছু নয়। স্বাস্থ্য দফতরের সমস্ত স্তরের কর্মীদের ‘অকারণ সমালোচনা’য় কান না-দিয়ে কাজ করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার এমনিতেই কিছু নেই।” এবং এ প্রসঙ্গে একটি চালু প্রবচনের উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “তাই হারানোরও কিছু নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.