নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
দার্জিলিং জেলায় এইচআইভি সংক্রমণ কতটা ছড়িয়েছে তা খতিয়ে দেখতে রক্ত পরীক্ষার মোবাইল ভ্যান চালু হল স্থায়ী কাউন্সিলর ছাড়াই। প্রায় দু’মাস আগে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর দার্জিলিং জেলার জন্য ওই মোবাইল ভ্যানটি বরাদ্দ করলেও স্থানীয় কাউন্সিলর বরাদ্দ করেনি। কেবল একজন চালক এবং ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান বরাদ্দ করেছে। এতদিন অপেক্ষা করার পরেও কাউন্সিলর না-মেলায় শুক্রবার শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়িতে ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি হেলথ অ্যাসোসিয়েশনে এক অনুষ্ঠানে মোবাইল ভ্যানটি চালু করেন দার্জিলিঙের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক। তিনি বলেন, “জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মোট ১৪টি ‘ইনটেনসিভ কাউন্সেলিং অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টার’ রয়েছে। সেখানকার কাউন্সিলদের সাহায্য নিয়েই ভ্যানটি প্রত্যন্ত এলাকায় রক্ত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সচেতনতা অভাবে রাজ্য জুড়েই এইচআইভি সংক্রমণ বাড়ছে। তার মধ্যে যে সমস্ত জেলার বাসিন্দাদের কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে সেখানে এই রোগ দ্রুত বাড়ছে। রক্ত পরীক্ষার কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ায় দার্জিলিঙেও রোগী বাড়ছে। তার পরেও চা বাগান থেকে প্রত্যন্ত এলাকার বহু বাসিন্দা এখনও রয়ে গিয়েছেন যাঁদের মধ্যে রোগের সম্ভাবনা থাকলেও রক্ত পরীক্ষা সম্ভব হয়নি। ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই এই ধরনের মোবাইল ভ্যান চালু করা হল। কিন্তু রক্ত পরীক্ষায় যাঁদের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়বে তাঁদের কাউন্সেলিং করানোর বিষয়ে সংশয় থেকেই গেল। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্য, “আশা করছি, স্বাস্থ্য দফতর থেকে দ্রুত কাউন্সিলর নিয়োগ হবে।” এদিন শিলিগুড়িতে ভ্যানটি চালু করার কথা ছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যের। পাশাপাশি, দার্জিলিঙে এইচআইভি সংক্রমণে হার সংক্রান্ত জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তৈরি একটি রিপোর্টও তার হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুলসি প্রামাণিক জানান, রিপোর্টটি শিলিগুড়ির বিধায়কের হাতে তুলে দেওয়া হবে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০১১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দার্জিলিং জেলায় সংক্রমণের হার ২.৮৫ শতাংশ। তার মধ্যে শিলিগুড়িতে ৬.৭৬ ও মাটিগাড়ায় ৩.৪ শতাংশ। শিলিগুড়ির এই হিসাবে উত্তরবঙ্গ, বিহার, নেপাল ও সিকিমের সেই সমস্ত আক্রান্তেরও রয়েছেন যাঁরা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করেছেন। তবে মাদকাসক্তদের মধ্যে কমেছে সংক্রণের হার। ২০০৫ সালে শিলিগুড়িতে মাদকাসক্তদের মধ্যে যেখানে সংক্রণের হার ছিল ১৬ শতাংশ, ২০০৮-০৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১০ শতাংশে। সিরিঞ্জ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রচার চালানোয় সংক্রণের হার কমেছে বলে দাবি স্বাস্থ্য দফতরের। শিলিগুড়িতে অস্থায়ী যৌন কর্মী হিসাবে কাজ করেন এমন মহিলা ও পুরুষদের এদিন ওই কেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষা করা হয়। ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের শিলিগুড়ির প্রজেক্ট ডিরেক্টর তরুণ মাইতি জানান, ৩০ জনের রক্ত পরীক্ষা হয়। একজনের রক্তে এইচআইভি সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে। তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। |