প্রাক্তন-বর্তমান তরজা
শ্যামলের কটাক্ষ, পাল্টা তদন্তের ইঙ্গিত মদনের
রাজ্যের প্রাক্তন ও বর্তমান পরিবহণমন্ত্রীর মধ্যে তরজা বাধল দুর্নীতি এবং ‘বেনিয়মে’র প্রশ্নে। পরিবহণ ক্ষেত্রের সঙ্কট এবং সরকারি কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার প্রত্যাহারের প্রসঙ্গে শুক্রবার রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র এবং শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুকে কটাক্ষ করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী। তারই জবাবে প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী শ্যামলবাবুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত করার কথা বলেন বর্তমান পরিবহণমন্ত্রী মদনবাবু। যার প্রতিক্রিয়ায় আবার শ্যামলবাবু মন্তব্য করেন, “সমুদ্রে পেতেছি শয্যা, শিশিরে কী ভয়!” যার ফলে, দিনের শেষে তরজা তুঙ্গে!
পরিবহণ দফতরের দুর্নীতির তদন্তে প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামলবাবুর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার ভিজিল্যান্স দফতরকে দিয়ে তদন্ত করাতে পারে বলে মহাকরণে ইঙ্গিত দেন পরিবহণমন্ত্রী মদনবাবু। বলেন, “সুশান্ত ঘোষ জামিন পাওয়ায় শ্যামল চক্রবর্তী উৎসাহিত হয়ে পড়েছেন। ভাবছেন, আবার বন্দুক-কঙ্কাল ফিরিয়ে আনবেন! কিন্তু পরিবহণ দফতরের দুর্নীতি নিয়ে শ্যামলবাবুর বিরুদ্ধেও যে ভিজিল্যান্স তদন্ত হবে না, সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত হচ্ছেন কী করে? জল শ্যামল চক্রবর্তী পর্যন্ত গড়াবে!” মদনবাবুর অভিযোগ, “পরিবহণ দফতরের দুর্নীতিতে শ্যামলবাবুই নাটের গুরু। শুধু সুভাষ চক্রবর্তীর কথা বলে কী হবে?”
বর্তমান পরিবহণমন্ত্রীর ‘হুঁশিয়ারি’র পর প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামলবাবুর প্রতিক্রিয়া, “তদন্ত করুন। তদন্ত করে কথা বলুন! এই সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতিতে চলছে। এগুলো যে হবে, ধরেই নিয়েছি।” তিনি বলেন, “সমুদ্রে পেতেছি শয্যা, শিশিরে কী ভয়!”
বস্তুত, চাপানউতোরের সূত্রপাত এ দিন শ্যামলবাবুর মন্তব্য ঘিরেই। তিনি প্রথমে বলেন, “শ্রম আইন এবং শ্রম-বিরোধ নিষ্পত্তি আইন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ দুই মন্ত্রীকে মাথার উপরে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে! তাঁরা যত মুখ খুলবেন, ততই বিপদ বাড়বে। তাঁদের দু’জনের পরামর্শদাতা নিয়োগ করা উচিত। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, দয়া করে এঁদের হয়ে কথা বলার লোক দিন!” ক্লাবগুলিকে সরকারি অর্থ সাহায্য দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘বেআইনি কাজ’ হয়েছে বলেও তাঁর অভিযোগ ছিল। শ্যামলবাবুর ব্ক্তব্যের ‘প্রতিক্রিয়া’য় মদনবাবু প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভিজিল্যান্স তদন্তের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেন। মদনবাবু বলেন, “শ্যামলবাবু সিপিএম পার্টির কে, আমি জানি না! এ বিষয়ে তাঁর কিছু বলার এক্তিয়ার আছে কি না, তা-ও জানি না। শ্যামলবাবুদের মানুষের মুখোমুখি হতে হবে।” ক্রীড়ামন্ত্রী মদনবাবুর প্রশ্ন, সিপিএমের ক্লাবকে টাকা দেওয়া হলেই কি সবটা ‘আইনি’ হয়ে যেত? মদনবাবুর বক্তব্য, সব খতিয়ে দেখেই সব ক্লাবকে টাকা দেওয়া হয়েছে। কোথাও ‘বেআইনি’ হয়ে থাকলে তার জবাব দেওয়া হবে অর্থ দফতর এবং রাজ্যের মানুষের কাছে।
সিপিএমের শ্রমিক নেতা শ্যামলবাবুর এ দিন মুখ খোলার কারণ রাজ্যের দু’টি সাম্প্রতিক ঘটনা। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমে (এনবিএসটিসি) ঠিকাদারদের আওতায় নিযুক্ত কিছু শ্রমিককে ছাঁটাইয়ের নোটিস দেওয়া হয়েছে। পরিবহণমন্ত্রী মদনবাবু বলেছিলেন, ঠিকাদারদের নিযুক্ত শ্রমিকদের দায়িত্ব রাজ্য সরকার নেবে না। এরই সূত্রে সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামলবাবু এ দিন ২০১১ সালের ১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের উল্লেখ করে বলেন, ঠিকাদারদের যে সংস্থা বা দফতর নিয়োগ করছে, তাদেরই মূল নিয়োগকারী হিসাবে ধরতে হবে। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে রাজ্য দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না। একই ভাবে, শ্রম-বিরোধ নিষ্পত্তি আইনের ২ (এস) ধারা উল্লেখ করে বামনেতার বক্তব্য, ‘মানসিক’ বা ‘কায়িক’ যে শ্রমই করুন, কর্মচারীরা ওই আইনের আওতায় পড়বেন। এবং ওই আইনের আওতাভুক্ত হলে ট্রেড ইউনিয়নের স্বীকৃতির অধিকারও থাকবে। সুতরাং, সরকারি কর্মচারীরা ‘কায়িক শ্রম’ করেন না বলে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার তাঁদের উপরে প্রযোজ্য নয় বলে যে যুক্তি শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দুবাবু দিয়েছেন, তা আইনত ঠিক নয় বলে শ্যামলবাবুর দাবি। আগে এই আইনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের বেতনের ঊর্ধ্বসীমা ধরা ছিল। পরে আদালতের রায়ে তা আর নেই।
মদনবাবুর ঘোষণামতো এ দিন থেকেই সরকারি পরিবহণে ‘চেকিং’ শুরু হয়েছে। রুবির মোড় এবং শিয়ালদহে সিএসটিসি-র ১৪৫টি বাসে চেকিং করে বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে জরিমানা বাবদ ১১০০ টাকা উঠেছে বলে রাষ্ট্রীয় পরিবহণ কর্তৃপক্ষের ডেপুটি চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন। বৈশ্বানরবাবু ও পরিবহণ দফতরের বিশেষ সচিব তারাপদ মাঝি রুবির মোড়ে চেকিং-এর সময় উপস্থিত ছিলেন। সিটিসি-র চেকিং হয়েছে হাওড়া এবং রেসকোর্সের কাছে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের সামনে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.