|
|
|
|
কাজের সময় রাজনীতি নয়: মমতা |
ইউনিয়ন-বিতর্কের মাঝেই কাজের দিনে সম্মেলনে মন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সরকারি কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার প্রসঙ্গে বিতর্কের মধ্যেই তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনের জেলা সম্মেলনে হাজির হলেন শ্রমমন্ত্রী নিজেই। সরকারি কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার খর্ব করার ঘোষণা যিনি করেছেন, তিনি নিজেই কাজের দিনে এমন সম্মেলনে যোগ দেওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠছে। বলা হচ্ছে, প্রধান শাসক দলের সঙ্গে যোগ থাকার সুবাদেই কি বাম জমানার মতো এখনও এক দল আধিকারিক-কর্মচারী ‘ছাড়’ পাবেন?
শুক্রবার তৃণমূল-প্রভাবিত ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল লেবার ডিপার্টমেন্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউবিএলডিওএ) দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্মেলনে শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, নিজেদের ‘দায়িত্ব ও কতর্ব্য’ অনুযায়ী কাজ করলে ‘মা-মাটি-মানুষের সরকারে’র
অগ্রগতি হবে। তাঁর এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
এ দিনই ঘটনাচক্রে, হাসপাতাল এবং যে কোনও সরকারি কাজের জায়গায় কর্মসংস্কৃতির বিষয়টি রাজ্য সরকার যে যথেষ্ট ‘গুরুত্ব’ দিয়ে দেখছে, তা ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের উদ্দেশে এ দিন স্বাস্থ্য ভবনে এক অনুষ্ঠানে মমতা বলেন, “কাজের সময় রাজনীতি করবেন না। তাতে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হয়। শুধু ভোটের সময় রাজনীতি করুন!”
এ দিন মহাকরণে পার্থবাবুও বলেন, “কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া থাকতেই পারে। কিন্তু তা নিয়ে মিটিং-মিছিলের নামে বিশৃঙ্খলা সরকার বরদাস্ত করবে না।
গণতান্ত্রিক অধিকার নষ্ট করতে চাই না। তবে তাঁদেরও দায়িত্ববোধ থাকতে হবে।” চলতি মাসের ২৮ তারিখ সাধারণ ধর্মঘটের প্রসঙ্গে পার্থবাবু বলেন, শ্রমদিবস
নষ্ট করা যাদের কাজ, তারাই বন্ধ করে। তাঁর কথায়, “এ ভাবে শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা হয় না!”
সরকারি মহলেই প্রশ্ন উঠেছে রাজ্য সরকার যেখানে সরকারি কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রত্যাহারের কথা বলছে, মুখ্যমন্ত্রী যেখানে কাজের সময় রাজনীতি না-করার কথা বলছেন, সেই সময়েই শ্রমমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কাজের দিনে ডায়মন্ড হারবারের বেসরকারি হোটেলে এমনতর রাজনৈতিক সম্মেলন কী ‘বার্তা’ দেয়?
শ্রম দফতরের একটি সূত্রের খবর, প্রায় ৩০০ জন কর্মী এ দিনের সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। গোটা রাজ্যেই শ্রম দফতরের কার্যালয়গুলি লোকাভাবে ধুঁকছে। তারই মধ্যে কাজের দিনে এমন সম্মেলনের জন্য কার্যালয়গুলিতে ‘প্রভাব’ পড়েছে। রীতিমতো চাঁদা তুলে, পোস্টার ছাপিয়ে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক কায়দায় ওই সম্মেলনের প্রস্তুতি চালানো হয়েছিল। সচরাচর এই ধরনের কর্মসূচিতে পূর্ণ বা অর্ধ-দিবস ছুটি নিয়ে যোগ দিতে চান সরকারি কর্মচারীরা। কিন্তু নতুন সরকার যেখানে কাজের সময় রাজনৈতিক কর্মসূচি না-করার কথা বলছে, তখন এ দিনের সম্মেলনের নৈতিক যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক মহলের একাংশে। তৃণমূল শিবিরের অবশ্য ব্যাখ্যা, এই সম্মেলন পূর্বনির্ধারিত ছিল। তবে তাতেও সংশ্লিষ্ট মহলের পাল্টা বক্তব্য, রাজ্য সরকারের মনোভাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শাসক দলই ‘পরিবর্তনমূলক’ প্রথম পদক্ষেপটি করতে পারত।
এ দিন সম্মেলনে গিয়ে সংগঠনের কর্মীদের প্রতি পূর্ণেন্দুবাবুর পরামর্শ, কাজ করতে গিয়ে সরকারের সঙ্গে যেন কোনও ‘ভুল বোঝাবুঝি’ না-হয়, সেই বিষয়টিও নজর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কর্মচারীরা যেন সমন্বয়ের ব্যাপারে আরও যত্নবান হন। সংগঠনের সব সদস্যকে সার্ভিস রুল সম্পর্কে ‘অবগত’ থাকতে বলেন শ্রমমন্ত্রী। চাকরির প্রতি ‘দায়বদ্ধতা’য় গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দেন।
শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দুবাবু সম্প্রতি বলেছেন, মহাকরণ কোনও কারখানার গেট নয়। আর এ দিন তৃণমূল-প্রভাবিত সংগঠনকে মজবুত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সংগঠনের সহ-সভাপতি শিশির চক্রবর্তী বলেন, “আমরা দাবি-দাওয়া নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব কি না, তা এখনও ঠিক করিনি। মুখ্যমন্ত্রীও এই বিষয়ে বৈঠক করবেন বলে শুনেছি। তার পরে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।” শিশিরবাবুর আরও বক্তব্য, “আমরা বিভিন্ন দাবি শ্রমমন্ত্রীর কাছে পেশ করেছি। উনি আমাদের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। এই জেলায় শূন্য পদই কাজের ক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি সমস্যা। তা আমরা মন্ত্রীকে জানিয়েছি।” |
|
|
|
|
|