|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
প্রান্তবাসীর অকথিত কাহিনি ও কথা |
পূর্বালোক পাবলিকেশন থেকে তিনটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সমাজ-গবেষণার কাজে দীর্ঘ দিন যুক্ত পার্থসারথি বন্দ্যোপাধ্যায় ও দয়াবতী রায়। একদা ভিন্ন ধারার রাজনীতির সূত্রে গ্রামবাংলা ও প্রান্তিক মানুষকে নানা ভাবে দেখেছেন দু’জনেই। সম্প্রতি প্রকাশিত তিনটি গ্রন্থে সেই অভিজ্ঞতার ছোঁয়া রয়েছে। বাঙালি সমাজে ক্ষমতা ও গণতন্ত্র-এ (১৫০.০০) পার্থসারথি লিখছেন, ‘সকল বাম এবং বিপ্লবী শিবিরভুক্ত দলের ভিতরে নীতি-নির্ধারক স্তরে প্রকৃত ক্ষমতা কিন্তু উচ্চবর্ণের মধ্যবিত্ত নেতাদের হাতেই থাকে। সম্ভবত সেই কারণেই দরিদ্র জনতাকে পশ্চাদপদ ভাবার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থিত সংসদবাদী বামপন্থীদের সঙ্গে বিপ্লবী বামপন্থীদের বিশেষ মতপার্থক্য দেখা যায় না।’ দয়াবতী তাঁর পার্টি পঞ্চায়েত ও গ্রাম-রাজনীতি বইতে দেখিয়েছেন (২০০.০০), কী ভাবে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে রাজনীতি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে। গবেষণার সূত্রে হুগলি জেলার একটি গ্রামের রোজনামচা তুলে ধরেছেন তিনি। পার্থসারথি ও দয়াবতী যৌথ ভাবে লিখেছেন তাঁদের ইংরেজি গ্রন্থ কন্টেম্পরারি পলিটিক্স ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল (৩০০.০০)। এর মধ্যে অনেকগুলি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল ‘ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি’তে। বামফ্রন্টের আমলে এই রাজ্যের সমাজজীবনে রাজনীতির অনুপ্রবেশ এবং টানাপোড়েনের বিষয়টি নানা দিক থেকে দেখা হয়েছে।
এ বারেও ‘নাগরিক মঞ্চ’-র প্রকাশনায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ বেরলো। যেমন মানস জোয়ারদারের উন্নয়ন প্রহসন প্রতিবাদ সন্ত্রাস (৩৫.০০)। বিভিন্ন নিবন্ধের মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন উন্নয়নের নামে দেশের চতুর্দিকে চলছে নানা অনাচার। প্রান্তবাসীদের নানা অকথিত কাহিনি শুনিয়েছেন শুভেন্দু দাশগুপ্ত তাঁর প্রান্তপারের কথায় (৪০.০০)। ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়ের বনবাসীদের কথা, মালদহের চরের মানুষ, বীরভূমের পাথর খাদান বহু কিছু ধরে পড়েছে তাঁর লেখনীতে। তাঁর খাদ্য ও ক্ষুধা গ্রন্থে (৪০.০০) অনিন্দ্য ভুক্ত প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন সমস্যার দিকে আঙুল তুলেছেন। তথ্যের অধিকার-এ (৪০.০০) এই আইন সম্পর্কে সকলকে আগ্রহী করে তুলতে খুব সহজ ভাষায় সুব্রত কুণ্ডু বিষয়টি তুলে ধরেছেন। স্পঞ্জ আয়রন কারখানার দূষণ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সরব ‘নাগরিক মঞ্চ’। সামগ্রিক ভাবে স্পঞ্জ আয়রন কারখানার কালো দিক নিয়ে আলোচনা স্পঞ্জ আয়রন শিল্প/পুঁজির অন্যায়/রাষ্ট্রের মদত/জনগণের প্রতিবাদ (২০.০০) পুস্তিকায়।
ডোডো কিংবা ভ্যাম্প, অ্যাডিশনাল কিংবা এইচএমটি, নানচাকু কিংবা কর্কেট বল নিরুদ্দেশদের সম্পর্কে স্মৃতি আর সত্তা হাতড়ে বেড়িয়েছেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। মধুর গদ্য, বহু কাল পরে এমন রমণীয় উপস্থাপন আর পাতায় পাতায় কৃষ্ণেন্দু চাকীর ছবি, তিনে মিলে পড়ুয়ার জমজমাট সুখের কারণ হবে নিরুদ্দেশ সম্পর্কে ঘোষণা (৩০০.০০)। এ ঘোষণা নৈর্ব্যক্তিক। আর ব্যক্তিগত যা কিছু হারিয়ে গিয়েছে তারই মধুর স্মৃতিচারণ করেছেন যোগেন চৌধুরী, তাঁর হারিয়ে গেছি আমি (গন্ধর্ব, ৩০.০০)-তে। প্রচ্ছদ ও পাতায় পাতায় মিষ্টি অলংকরণগুলোও তাঁরই করা।
সেতু প্রকাশনী থেকে সদ্য প্রকাশিত হয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রেড স্টার ওভার ইন্ডিয়া (২৯৫.০০)। সুইডেনের লেখক জান মিরডাল বিবৃত করেছেন ‘দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সব থেকে বড় শত্রু’ মাওবাদী রাজনীতি নিয়ে। বসন্তের সেই বজ্রনির্ঘোষের পরে কেটে গিয়েছে সুদীর্ঘ চুয়াল্লিশটি বছর। নানা ঘাত-প্রতিঘাত, এই আন্দোলনের নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সে কিন্তু কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়নি। বাম-রাজনীতির লেখক জান দণ্ডকারণ্যের গহন অরণ্যেও গিয়েছেন। নব্য যুবকের আগ্রহ নিয়ে মাওবাদী রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতার উপরে আলোকপাত করেছেন ছিয়াশি বছরের জান। মাওবাদী রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে আগ্রহীদের কাছে এই গ্রন্থ সংগ্রহযোগ্য।
বটতলা নিয়ে অনেক দিনের চর্চা জীবানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর ছড়িয়ে থাকা লেখাগুলি এ বার একত্র হল বটতলার ভোরবেলা (পারুল, ১২০.০০) বইয়ে। মুখবন্ধে গৌতম ভদ্র লিখেছেন, জীবানন্দ চট্টোপাধ্যায় ‘বটতলায় সরেজমিন ঘুরে কথা-কণিকা (anecdote) ও গালগল্প সংগ্রহে’ পারদর্শী, আর ‘বটতলা-জাত সাহিত্যে চরিত্র-বিচারেও জীবানন্দবাবু অনুসন্ধিৎসু’।
আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চায় যে উৎসাহ-উদ্যম কয়েক দশক ধরেই সঞ্চারিত হয়েছে, তার নতুন নতুন ফসল ক্রমশই প্রকাশিত হচ্ছে। গুণমানেও পরিণতির ছাপ তার অনেকগুলির মধ্যেই স্পষ্ট। আঞ্চলিক ইতিহাস ও তার সম্ভাবনা (সম্পা: শেষাদ্রিপ্রসাদ বোস, আশাদীপ ও পরিমল মিত্র স্মৃতি মহাবিদ্যালয়, মালবাজার-এর যৌথ প্রকাশনা, ৩০০.০০) শীর্ষকে একটি দ্বিভাষিক প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। গুরুত্ব পেয়েছে উত্তরবঙ্গের ইতিহাসের নানা অনালোকিত প্রসঙ্গ। মহিষাদল রাজ কলেজের ইতিহাস বিভাগ ও ইন্দিরা-র যৌথ উদ্যোগে প্রকাশ পেয়েছে ইতিহাসচর্চা/সাম্প্রতিক প্রবণতা (সম্পা. সমীরকুমার পাত্র, শেখর ভৌমিক, অরিন্দম চক্রবর্তী, ২০০.০০)। নারায়ণী গুপ্ত, তপন রায়চৌধুরী, ব্রজদুলাল চট্টোপাধ্যায়, হিতেন্দ্র পটেল, অমলশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মঞ্জু চট্টোপাধ্যায় প্রমুখের লেখায় এই সংকলন সমৃদ্ধ।
বাঙালির মঞ্চকে আলোকিত করেছেন তাপস সেন। কিন্তু থিয়েটারে-সিনেমায় আলো নিয়ে তাঁর লেখালেখি এত কাল ছড়িয়ে ছিল পত্রপত্রিকাতেই। সে সব নিয়েই সংকলন ছায়ায় আলোয় (সম্পাদনা জয়ন্তী সেন, করুণা প্রকাশনী, ৪৫০.০০)। লিভার নিয়ে সহজপাচ্য গদ্যে আড্ডার ঢঙে লেখা শ্যামল চক্রবর্তীর লিভার: আয়ুর্বেদ থেকে আধুনিক (সাহিত্যম, ১০০.০০)। শুধু কোন অসুখের কী চিকিৎসা নয়, লিভারের রীতিমতো ইতিহাস ঘেঁটেছেন লেখক। |
|
|
|
|
|