সুশান্তের জামিনে স্বস্তি ও সংশয় দুই শিবিরে
জানতেন, এ দিনই রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট। সকাল থেকেই ‘অস্থির’ অশীতিপর মৃন্ময়ী ঘোষ। বেনাচাপড়ার বাড়িতে সুশান্ত ঘোষের মা মৃন্ময়ীদেবী বেলা বাড়তেই ঠায় চোখ রেখেছিলেন টিভিতে দুপুরে খবরটা আসার আগে পর্যন্ত খেতেও চাননি। যখন শুনলেন, ছেলের জামিন মঞ্জুর হয়েছে, বৃদ্ধার প্রতিক্রিয়া, “ও লোক মেরে পুঁতে দেবে, এমন কাজ করতেই পারে না।” এ বার ছেলেকে দেখার অপেক্ষাতেই দিন কাটবে, জানালেন বৃদ্ধা।
প্রাক্তন মন্ত্রীর স্ত্রী করুণাদেবীর প্রতিক্রিয়া, “বিনা দোষে জেল খাটছিলেন। কাউকে কখনও মারার কথা উনি
স্বস্তিতে মা মৃন্ময়ীদেবী।
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
বলেননি। জামিন হবে বলেই আশা ছিল। খবর শুনে ভাল লাগছে।” করুণাদেবী নিজেও সিপিএম সদস্য। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার ছিলেন কলকাতায়। ফোনে ধরা হলে দীপকবাবু বলেন, “গণতন্ত্রের জয় হল। দেরিতে হলেও জামিনের নির্দেশে খুশি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালত বুঝতে পেরেছে।” মেদিনীপুরে সুশান্তবাবুর আইনজীবী বিশ্বনাথ ঘোষের দাবি, “ঘটনার সঙ্গে সুশান্তবাবুর প্রত্যক্ষ যোগ নেই। প্রতিহিংসা থেকেই মামলা।”
গত বুধবারই দলের জেলা সম্মেলন উপলক্ষে মেদিনীপুরে সমাবেশে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রের মতো সিপিএম নেতারা তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ‘প্রতিহিংসা-সর্বস্ব’ রাজনীতিরই অভিযোগ করেছিলেন। সমাবেশের দু’দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ‘স্বস্তি’ সিপিএম-শিবিরে। সুশান্তবাবুর জামিনে দলের সাধারণ কর্মীদের মনোবল অনেকটাই চাঙ্গা হবে বলে আশা করছেন নেতৃত্ব। ঠিক উল্টো ছবি শাসক-শিবিরে। প্রকাশ্যে বলতে না চাইলেও একান্তে জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতার ‘আশঙ্কা’, দাসেরবাঁধ কঙ্কাল-কাণ্ডের অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত সুশান্তবাবুর জামিন মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা হলেও সংশয় তৈরি করল। তাঁদের বক্তব্য, প্রভাবশালী অভিযুক্ত মুক্ত থাকলে সাক্ষীদের উপরে ‘চাপ’ বাড়ে। তাঁরা ছোট আঙারিয়া মামলার প্রসঙ্গও টেনেছেন। যেখানে সাক্ষীরা অধিকাংশ ‘বিরূপ’ হওয়ায় অভিযুক্তরা খালাস পেয়েছিলেন।

সুশান্ত ঘোষের জামিন দুই শিবিরের প্রতিক্রিয়া
এটাই আশা করেছিলাম
দোষীদের শাস্তি চাই
ওঁর জামিন হবে, এটাই আশা করেছিলাম। বিনা দোষে জেল খাটছিলেন। কাউকে কখনও মারার কথা উনি বলেননি। কারও উপরে অত্যাচার করেননি। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বাড়ল। জামিনের খবর শুনে ভাল লাগছে।
বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আমরা দোষীদের শাস্তি চাই। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলব। যদি এই জামিনের বিরোধিতার সুযোগ থাকে, তা হলে সেটাই করব।
গণতন্ত্রের জয়, খুশি গুমখুন তো হয়েইছে
গণতন্ত্রের জয় হল। এই রায় গণতন্ত্রের বিকাশের পক্ষে সহায়ক। দেরিতে হলেও এই জামিনের নির্দেশে আমরা খুশি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালত ুঝতে পেরেছে।
আমরা আইনি লড়াই করব। সর্বোচ্চ আদালত নিঃশর্ত জামিন দেয়নি। শর্তাধীনে দিয়েছে। ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টে গুমখুন প্রমাণিত হয়েছে। সাক্ষীদের যাতে প্রভাবিত করা না যায়, সে দিকে লক্ষ্য থাকবে।
প্রতিহিংসা থেকেই মামলা জামিন মানে খালাস নয়
সুপ্রিম কোর্টে ঠিক রায় হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সুশান্তবাবুর প্রত্যক্ষ যোগ নেই। আগেই বিচার হয়েছিল। অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস পেয়েছিলেন। পালাবদলের পরে প্রতিহিংসা থেকেই নতুন করে মামলা হয়।
আইন আইনের পথে চলবে। সর্বোচ্চ আদালত শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছে। জামিন মানে খালাস পাওয়া নয়। বিচার চলবে। অভিযুক্তদের দোষ প্রমাণ ও শাস্তি হওয়াটাই আসল কথা।

২০০২-এর ২২ সেপ্টেম্বর কেশপুরের পিয়াশালায় সিপিএমের হামলায় ২ জন নিহত হন বলে অভিযোগ। নিখোঁজ হন ৫ তৃণমূল সমর্থক। সে সময়েও সিপিএম নেতা-কর্মীদের নামে মামলা হয়েছিল। কিন্তু ‘প্রমাণাভাবে’ তাঁরা বেকসুর খালাস পান। কেশপুরের খেতুয়ার অজয় আচার্যও তখন থেকেই নিখোঁজ। অজয়বাবুর ছেলে শ্যামলই গত জুনে নতুন মামলা করেন। সুশান্তবাবুর জামিন প্রসঙ্গে শ্যামলের বক্তব্য, “আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করব। সুযোগ থাকলে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করব। আমার বাবাকে যে গুমখুন করা হয়েছিল, তা দাসেরবাঁধে উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়ের ডিএনএ-রিপোর্টেই স্পষ্ট। আমরা চাই দোষীরা শাস্তি পাক।” দুই মেদিনীপুরে দলের অন্যতম ‘কাণ্ডারী’, যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া, “আইনি লড়াই চলবে। শর্তাধীনে জামিন, সেটাও মনে রাখা জরুরি।” সুশান্তবাবুর জামিন কি চার্জশিটের কোনও ‘খামতি’ তুলে ধরছে? মানতে চাইছেন না সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার পূর্ণশিব মুখোপাধ্যায়। যিনি এই জামিনের আবেদনের শুনানির সময়ে ছিলেন দিল্লিতেই। ফোনে বললেন, “জামিন মানে কিন্তু খালাস পাওয়া নয়। বিচার চলবে।”
এ দিন দুপুরের পর থেকে চায়ের দোকান, পাড়ার মোড়ে ঘুরেফিরে এসেছে প্রাক্তন মন্ত্রীর জামিন-পরবর্তী সময়ে কী হবে, কী হতে চলেছে সেই আলোচনা। বেনাচাপড়ায় সুশান্তবাবুদের আদিবাড়ির এলাকার এক বাসিন্দার বক্তব্য, “এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিন্তু পাল্টেছে। ছোট আঙারিয়া মামলার সময়ে অভিযুক্তরা যে দলের, তারাই ছিল ক্ষমতায়। এখন কিন্তু তা নয়।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.