দক্ষিণ কলকাতা
পুর-প্রস্তাব
আঁস্তাকুড়ে প্রকল্প
ব সময় পরিষ্কার রাখার জন্য বড় ভ্যাটগুলির সামনে বিজ্ঞাপন সংস্থার মাধ্যমে হোর্ডিং লাগিয়ে তাদের দিয়েই ভ্যাট পরিষ্কার রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও পুরসভার এই প্রকল্প এখনও কার্যকর হল না।
এই প্রকল্প রূপায়ণে এত দেরি কেন? পুরসভার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জঞ্জাল অপসারণ দফতরের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার বলেন, “ভ্যাট পরিষ্কার রাখতে যে সমস্ত বিজ্ঞাপন সংস্থার কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল তারা ভ্যাটের সামনে হোর্ডিং দেওয়ার জন্য অত্যন্ত কম পয়সা পুরসভাকে দিচ্ছে। ফলে, পুরসভার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এই কারণেই সমস্ত বিষয়টি এখনও আটকে রয়েছে। তবে হোর্ডিং সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনাও চলছে।”
সাদার্ন অ্যাভিনিউ নিউ আলিপুর
সব সময় ভ্যাট পরিষ্কার রাখার জন্য বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলিকে পুরসভা ভ্যাটে হোর্ডিং লাগাতে ও নিজেদের উদ্যোগে সেই ভ্যাট সব সময় পরিষ্কার রাখতে বলেছিল। বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলিকে এ জন্য পুরসভাকে প্রয়োজনীয় কর দিতে হবে। কিন্তু সে সময় বিতর্ক ওঠে, ভ্যাট পরিষ্কার করতে না পারার দায় এড়াতেই পুরসভার এই উদ্যোগ। দেবব্রতবাবু জানান, সব সময়ে ভ্যাটের সামনে লোক রেখে তা ঝাঁ-চকচকে রাখার মতো পরিকাঠামো পুরসভার নেই। বিজ্ঞাপন সংস্থার হোর্ডিং থাকলে ভ্যাট পরিষ্কার রাখা যেমন সম্ভব, তেমনই এই হোর্ডিং থেকে পুরসভার আয়ও হবে।
শহরে এই মুহূর্তে ছোট-বড় মিলিয়ে ছ’শোটির মতো ভ্যাট আছে। পুরসভার সমীক্ষা থেকে জানা যায়, এর মধ্যে ৩৬টি বড় এবং খোলা ভ্যাট। সমীক্ষাতেও প্রকাশ, বেলা ১২টার পরে ময়লা পরিষ্কার করলেও অনেক জায়গাতেই ময়লা পড়ে থাকে। বিশেষ করে শহরের বাজার এলাকায় এই সমস্যা খুবই প্রকট। বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরসভার কাছে অনেক অভিযোগও এসেছে। সেই কারণেই পুরকর্তৃপক্ষের এই অভিনব সিদ্ধান্ত। দক্ষিণ কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটের ভ্যাটটিকেই মডেল ভ্যাট হিসেবে বাছা হয়েছিল।
সেই সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ভ্যাটের ঠিক মুখেই একটি লোহার রড এবং পাইপ বসিয়ে দেওয়া হবে। সেখানেই হোর্ডিং লাগানো হবে। কেউ যদি আবর্জনা ফেলে যায় তা হলে সেই আবর্জনা পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব থাকবে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলির উপরেই। কিন্তু সে সময়ে যে আলোচনা হয়েছিল তা আজও ফলপ্রসূ হয়নি। সেই প্রস্তাব ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে পুরসভায়। মাঝেমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলেচনা হয়েছে।
নিউমার্কেট গিরিশ পার্ক
পুরসভার বিজ্ঞাপন দফতরের এক আধিকারিক জানান, প্রস্তাবটি এসেছিল পুরসভার জঞ্জাল বিভাগ থেকেই। কিন্তু এখানে বিজ্ঞাপন দিতে গেলে কী দর পুরসভা নেবে তা এখনও ঠিক নেই। এই নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য জঞ্জাল দফতরের সঙ্গে শীঘ্রই আলোচনায় বসা হবে।
পুরকর্তৃপক্ষ জানান, একশো দিনের কাজে যে সমস্ত কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে তাঁদের কাজে লাগিয়ে এখন বিকেলেও ভ্যাট পরিষ্কার করা হচ্ছে। এ ছাড়া, শহরের মোট ৬৬টি বড় ভ্যাটে ৮১ জন পুরকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে সেখান থেকে জঞ্জাল পড়লেই তুলে নিচ্ছেন। কিন্তু সব সময়ে লোক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি, শহরের অনেক জায়গায়, বিশেষত সাদার্ন অ্যাভিনিউ, তারাতলা, নিউ আলিপুর, গল্ফগ্রিন, ক্যামাক স্ট্রিট-সহ অনেক জায়গাতেই ‘কভার্ড ভ্যাট’ বসানো হচ্ছে। শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে রঙিন ছবি আঁকা ডাস্টবিন বসানোর কাজও চলছে। ভ্যাটগুলির পাশে সুদৃশ্য গাছ লাগানো হচ্ছে যাতে বাইরে থেকে বোঝা না যায় ওখানে ভ্যাট রয়েছে।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হল শহর থেকে ধীরে ধীরে খোলা ভ্যাট তুলে দেওয়া। ভ্যাটের সামনে হোর্ডিং দিয়ে তা পরিষ্কার রাখা এই অভিযানের অন্যতম পদক্ষেপ। বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। হোর্ডিং সংস্থাগুলির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। আশা করছি, প্রকল্পটি তাড়াতাড়ি ফলপ্রসূ করা সম্ভব হবে। তবে, শহরে ভ্যাটের আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়েছে।”
পোস্তা গোলতালাও
শহরের এক বিজ্ঞাপন সংস্থার পক্ষ থেকে সুদীপ শ্রীমল বলেন, “পুরসভা ভ্যাটের গায়ে বিজ্ঞাপন লাগানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু কী ভাবে তা কার্যকরী করা হবে সেই ব্যাপারে এখনও কিছু জানায়নি। ফলে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি।” আউটডোর আ্যাডভারটাইজিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কৃষ্ণকান্ত সাহা বলেন, “পুরসভার এই প্রকল্প এখনও প্রস্তাব আকারেই রয়েছে। আলাপ-আলোচনা চলতেই পারে। যত ক্ষণ না এই প্রস্তাব চুড়ান্ত হচ্ছে তত ক্ষণ এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.