দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
অপেক্ষা
অপচয়ের সেতুবন্ধ
কই জায়গায় দু’-দু’বার সেতুবন্ধন। প্রশাসনের উদ্যোগে এমনই হতে চলেছে বেহালার ব্যানার্জিপাড়ায়।
কয়েক মাস আগে বেহালার ব্যানার্জিপাড়ায় টলি নালার উপরে লোহার সেতুর একাংশ ভেঙে পড়ে। দুর্ঘটনায় স্থানীয় এক যুবক আহত হন। টনক নড়ে প্রশাসনের। ঘটনার পরে এলাকার বিধায়ক তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল, কর এবং মূল্যায়ণ) দেবব্রত মজুমদার ঘটনাস্থলে যান। যোগাযোগ করা হয় সেচ দফতরের সঙ্গে। ভেঙে পড়া সেতুর পাশেই রাজ্য সেচ দফতর একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে। মেয়র বলেন, “আপাতত বাসিন্দাদের সুবিধার জন্য কাঠের সেতু তৈরি করা হয়েছে। শীঘ্রই পাকাপোক্ত সেতু নির্মাণ করা হবে।”
কিন্তু একই জায়গায় দু’বার সেতু নির্মাণ করতে খরচ করা হবে কেন?
মেয়রের কথায়: “সেই সময়ে কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রে লোকসভা উপনির্বাচন থাকায় দরপত্র দিয়ে সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়নি। তাই পাশেই সেচ দফতর কাঠের সেতুটি তৈরি করে দেয়। পাকাপোক্ত সেতু তৈরি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে। কাঠের সেতুটি তৈরি করতে অর্থ খরচ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু কোনও বিকল্প ছিল না।” কাঠের সেতু নির্মাণ করতে কি দরপত্র ডাকা হয়েছিল? রাজ্যের সেচ ও জলপথমন্ত্রী শ্যামল মণ্ডল বলেন, “সরকারি নিয়মানুযায়ী দশ হাজার টাকার বেশি খরচ হলেই দরপত্র ডাকতে হবে। তবে, জরুরি ভিত্তিতে কোনও কাজ করতে হলে অনেক সময়ে দফতর থেকেই খরচ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সে ভাবেই কাজ হয়েছিল।”
টলিনালার উপরে এই সেতুটি বেহালার ১১৫ নম্বর ওয়ার্ড এবং টালিগঞ্জের ৯৭ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগকারী। বেহালার ব্যানার্জিপাড়া এবং নানুবাবুর বাজার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা এই সেতুর উপরে নির্ভরশীল। টালিগঞ্জে সেতুর ঠিক মুখে বাজার বসে। একটি আশ্রমও আছে। তাই অনেকেই সেতুটি ব্যবহার করেন। পুরসভা সূত্রে খবর, বছর ৪০ আগে খাল পারাপারের জন্য এলাকায় বাঁশের সাঁকো ছিল। পরে সাংসদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রকল্পে লোহার সেতু নির্মাণ করা হয়। মেয়র পারিষদ তথা ৯৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবব্রত মজুমদার বলেন, “লোহার সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গত পুরবোর্ডের সময়ে পুরসভা এবং তৎকালীন সেচ দফতরকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি। তাই সেতুটি ভেঙে পড়ে। কাজ চালানোর জন্য পাশে কাঠের নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।”
কাঠের সেতুটি নিয়ে বাসিন্দাদের একাংশের আপত্তি রয়েছে। ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পুলক মুখোপাধ্যায় বলেন, “সেতুর খুব প্রয়োজন ছিল। নতুন কাঠের সেতুটি খুব পাকাপোক্ত। কিন্তু খালে যে খুঁটি পোঁতা হয়েছে তাতে আবর্জনা আটকে যাচ্ছে।” ৯৭ নম্বর ওয়ার্ডের সেতু সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারাও জানান, খুঁটিতে আবর্জনা আটকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মশার উৎপাতও খুব বেড়েছে।
পুরসভার ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রত্না শূর বলেন, “খালে পোঁতা খুঁটির জন্য জলের স্বাভাবিক গতি নষ্ট হচ্ছে। আবর্জনা আটকে থাকছে। মশার উৎপাতও বেড়েছে। মশা মারার জন্য খালে নৌকো চালানোও সম্ভব হচ্ছে না। কাঠের সেতুর বদলে স্থায়ী সেতু নির্মাণ করলে সমস্যার সমাধান হবে। আমি মেয়রকে বিষয়টি জানিয়েছি।” সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, পাকাপোক্ত সেতু নির্মাণের জন্য মেয়রের সঙ্গে কথা হয়েছে। দরপত্র ডাকার কাজ চলছে। খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।

ছবি: পিন্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.