|
খুশিতে বাঁচুন |
|
সফল করুন সঙ্কল্প
করা সহজ। মেনে চলা কঠিন।
কিন্তু উপায় আছে। জানাচ্ছেন চিন্ময় রায় |
|
নতুন বছরের দ্বিতীয় মাস শুরু হয়ে গেল। নতুন বছরে অনেকেই মেদ ঝরিয়ে ঝকঝকে শরীর তৈরির সংকল্প নেন। এ বারও আশা করি ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু সংকল্প নিতে যত সময় লাগে ভাঙতে লাগে আরও কম। একটি সমীক্ষায় প্রকাশ, শপথ যাঁরা নেন তাঁদের চার ভাগের এক ভাগ প্রথম সপ্তাহেই হাল ছেড়ে দেন।
এর তিনটে কারণ হল:
১) দীর্ঘসূত্রতা,
২) শৃঙ্খলার অভাব
এবং
৩) সুনির্দিষ্ট ও বাস্তববাদী পরিকল্পনার অভাব।
৩০-৫০ বছরের মধ্যে এই ধরনের সংকল্প বেশি নেওয়া হয়। এই বয়সে অনেকে বিপাকজনিত এবং ওজনের সমস্যায় ভোগেন। বার বার শুনতে হয় ডাক্তারের সাবধানবাণী, ‘ওজনটা এ বার কমান।’ ফিটনেসের প্রতি সহজাত টান না থাকলে ডাক্তারের সাবধানবাণীর চাপ বা বছর শুরুর রেজলিউশন কোনওটিই শরীরচর্চাকে দীর্ঘমেয়াদি অভ্যাসে পরিণত করতে পারবে না।
১) দীর্ঘসূত্রতা: কালক্ষেপ যে কোনও কাজেরই বড় শত্রু। নেহাত অল্প হলেও আজই ওয়ার্কআউট শুরু করুন। স্রেফ নিজের মনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে আজই পাঁচ-দশ মিনিটের হাঁটা বা জগিং শুরু করে দিন। অথবা ঘরের মধ্যে আয়নার সামনে পাঁচ মিনিটের স্পট জগিং করুন আর নিজেকে বলুন আমাকে রোজ এ ভাবে করতেই হবে। সংকল্পকে জোরদার করুন।
২) শৃঙ্খলার অভাব: ‘মুড’ হল তো এক দিন করলাম আবার তিন দিন করলাম না। সকালে ওয়ার্কআউট করার কথা, অ্যালার্ম বাজল, ঘুমিয়েই রইলাম। সপ্তাহে ওয়ার্কআউটের জন্য নির্ধারিত দিনগুলিতে ওয়ার্কআউট করবই, এমন জেদ আনতে ধনুরাসন আর মৎস্যাসন করতে পারেন। ২০-৩০ সেকেন্ড করে করুন। একটু বিশ্রাম নিয়ে তিন বার করে রিপিট করুন। সময় থাকলে ২-৫ মিনিট প্রাণায়াম করুন। চোখ বন্ধ করে শুধু নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন পেট পর্যন্ত আবার নাক দিয়েই শ্বাস ছাড়ুন।
শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়ার আর একটি উপায় হল সমমনোভাবাপন্ন সঙ্গী খুঁজে নেওয়া। একে অপরকে উৎসাহ দেবেন। আপনি লেপের উষ্ণতা ছেড়ে বেরোতে চাইছেন না, সঙ্গী এসে টেনে তুলবেন। অথবা একটু খরচ করুন। এক মাসের জন্য কোনও পেশাদার ট্রেনারের সাহায্য নিন। ফর্মুলাটি সহজজোট বেঁধে নামলে আসবে ‘জোশ’।
শপথ নিলে পরিকল্পনা হতে হবে সুনির্দিষ্ট। ঘোর বাস্তবকে সামনে রেখে পরিকল্পনার ঘুঁটি সাজান। আজ আপনি এক মাইল দৌড়তে পারেন না তা হলে ম্যারাথনে অংশ নেবেন কী ভাবে? এক মাসেই পাঁচ কিলোগ্রাম ওজন কমিয়ে ফেলা কোনও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নয়। বরং গোটা মাসে সপ্তাহে চার দিন করে ওয়ার্কআউট করব, পরের মাসে এক দিন বাড়িয়ে পাঁচ দিন করে করব। এই হল বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা। কর্পোরেট দুনিয়ার ভাষায় লক্ষ্য নয়, মনোনিবেশ করুন প্রক্রিয়ায়। পরিকল্পনাকে আরও জোরদার করতে ঠিক করুন এ মাসে প্রতি দিন ২৫ মিনিট ওয়ার্কআউট করবেন। পরের মাসে সময় বাড়িয়ে ৩০ মিনিট হোক। তার পরের মাসে যোগ হোক আরও ৫ মিনিট। শুধু প্রক্রিয়ায় জোর দিয়ে নিষ্ঠা ভরে ওয়ার্কআউট উপভোগ করলে দেখবেন অজান্তে কখন ওজন কমে গিয়েছে। এ বারে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার নমুনা দেওয়া যাক। শরীরচর্চাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। এক, কার্ডিওভাসকুলার কন্ডিশনিং। দুই, শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম। তা হলে এক দিন ছাড়া সপ্তাহভিত্তিক একটা প্রোগ্রাম করা যাক। এটি এক মাসের জন্য, ব্যায়ামের মোট সময় ২৫ মিনিট। এক দিন অন্তর কার্ডিও বা শক্তি বাড়ানোর ব্যায়ামগুলি করুন। দুটি একই দিনে করবেন না।
|
শক্তি বাড়ানোর চারটি ব্যায়াম এমন হতে পারে: |
|
স্টেশনারি লাঞ্জ: দু’টি দু’লিটারের জলের বোতল হাতে নিন। একটি পা সামনে, অন্য পা পিছনে রাখুন। এ বার শরীর সোজা রেখে হাঁটু ভাঁজ করে মাটি স্পর্শ করুন। আবার সোজা হয়ে দাঁড়ান। এক পায়ে ১০ বার করে। দু’পায়ে হয়ে গেলে একটু বিশ্রাম নিয়ে তিন বার রিপিট করুন।
|
|
|
পুশ-আপ অ্যান্ড রোটেশন: সাধারণ পুশ-আপ সবাই জানেন। এ ক্ষেত্রে পুশ-আপ দিয়ে ওঠার পরে একটা হাত শূন্যে তুলে পিছন দিকে তাকান। আবার পুশ-আপে যান এবং অন্য হাতটা তুলে ঘোরান। মোট ১০টি পুশ-আপ। ঠিক আগের মতো তিন বার রিপিট করুন। মেয়েরা সাধারণ পুশ-আপ না পারলে হাঁটু মাটিতে রেখে পুশ-আপ দিন।
|
|
|
|
প্ল্যাঙ্ক: ঠিক ছবির মতো দুই কনুই আর পায়ের পাতায় ভর করে ‘প্রোন’ অর্থাৎ উপুড় হওয়া অবস্থায় শরীরটাকে শূন্যে ধরে রাখুন। পেটের গভীরের মাংসপেশিকে সচল করতে প্রস্রাবের ইচ্ছা দমানোর ভাব করুন। একটু বিশ্রাম নিয়ে তিন বার রিপিট করুন।
|
|
|
এক পায়ে ডেড লিফট: হাতে একটি দু’লিটারের জলের বোতল নিয়ে পিঠ টানটান রেখে এক পায়ে ভর করে সামনে ঝুঁকুন। অন্য পা’টি সোজা করে পিছনে তুলুন। যে পায়ে ভর রাখছেন তার হাঁটু সামান্য ভাঁজ থাকবে। লক্ষ রাখুন যেন হ্যামস্ট্রিং-এ চাপ পড়ে। প্রতি পায়ে দশ বার। একই ভাবে তিন বার রিপিট করুন। |
|
|
|
কার্ডিওভাসকুলার ওয়ার্কআউট: এক দিন এক মিনিট হাঁটুন আর দু’মিনিট জগিং করুন। এ ভাবে মোট ২০-২৫ মিনিট। শারীরিক সক্ষমতা ভাল হলে এক মিনিট জগিং করুন আর ৩০ সেকেন্ড দৌড়ন। এ বার ৩০ সেকেন্ড হাঁটুন। আবার এক মিনিট জগিং, ৩০ সেকেন্ড দৌড়, ৩০ সেকেন্ড হাঁটা। ব্যাপারটি চলবে সাধ্যমতো।
অন্য দিন, করুন খেলাচ্ছলে কার্ডিও। ফুটবলের আকারে বল নিন। বাড়ির অথবা পার্কের দেওয়ালে বলটি ছুড়তে ছুড়তে আর লুফতে লুফতে দেওয়ালের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যান। এ ভাবে ৩০-৪০ সেকেন্ড করুন। এক মিনিট বিশ্রাম নিন। ৬-৭ বার ড্রিলটি রিপিট করুন। |
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|