শুক্রবার সকালে অনুশীলন শুরুর খানিক আগে থেকেই প্রচুর সমর্থক হাজির মোহনবাগান গ্যালারিতে। তাঁদের আলোচনায় ঘুরপাক খাচ্ছিল একটাই বিষয়, এ মরসুমে ডার্বি ম্যাচে কি ৩-০ হবে?.
তার জন্য গোলের আব্দারগুলো জমা পড়ছিল সেই দু’জনের কাছেই। তাঁদের এক জন যুব বয়সে গ্রেমিও-র অ্যাকাডেমিতে কোচ হিসাবে পেয়েছিলেন লুই ফিলিপ স্কোলারিকে। তিনি হোসে রামিরেজ ব্যারেটো। মোহনবাগানের সবচেয়ে দায়িত্বশীল। ভাল কয়েকটা পাস, দু’-একটা মুভ এখনও চোখ টানে। সঙ্গে রয়েছে কার্যকর ফ্রি-কিক। আর মোহনবাগানের এই দলে সবচেয়ে বেশি ডার্বি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাও তাঁর ঝুলিতে। তবে ইদানীং তাঁর বিরুদ্ধে যাচ্ছে বয়স। হাঁটুর বয়সি ডিফেন্ডারদের ঠান্ডা মাথায় ডজ করার ক্ষমতা না-হারালেও ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন তাড়াতাড়ি।
আর দ্বিতীয় জন আই লিগে তিন বারের সর্বোচ্চ গোলদাতা--ওডাফা ওকোলি। কলকাতা ডার্বির প্রথম দুই ম্যাচেই গোল তাঁকে অবশ্যই বাড়তি চনমনে রাখবে। তিন-চার জন ডিফেন্ডারকে ঘাড়ের কাছে বয়ে এগিয়ে যাওয়ার অসামান্য ক্ষমতা ভারতে আর ক’জনের আছে?
জল্পনা এখন যা নিয়ে তা হল, মরসুমের প্রথম ডার্বির মতো ব্যারেটো প্রথম থেকেই খেলবেন? না কি কলকাতা লিগের বড় ম্যাচের মতো মাঠে আসবেন বদলি হিসাবে? বৃহস্পতিবার বল পায়ে প্র্যাক্টিস করেননি ব্যারেটো। ম্যাচের আগের দিন--শুক্রবার কিন্তু বেশ ফিটই দেখাল তাঁকে। মাঝমাঠ থেকে বেশ কিছু থ্রু-ও বাড়ালেন ওডাফা-সুনীলদের লক্ষ্য করে। জানেন, এই ম্যাচের গুরুত্ব। সে আই লিগের অঙ্কের বিচারেই হোক বা কলকাতার আবেগের কথা মাথায় রেখে। তাঁর বক্তব্য, “এই ম্যাচ জিতলে আই লিগের লড়াইয়ে থেকে যাব। তা ছাড়া অনেক ব্যর্থতা চাপা পড়ে যায় ডার্বি জিতলে।”
এই ম্যাচে যে অভিজ্ঞতার গুরুত্ব অনেক সেটাও জানিয়েছিলেন বৃহস্পতিবারই। আর নাইজেরীয় স্ট্রাইকার ওডাফা? তাঁর মুখে কুলুপ। বেরোনোর সময় সমর্থকদের উদ্দেশে দু’আঙুলে ভিকট্রি-চিহ্ন দেখিয়ে গেলেন। জনতা আব্দার জানালেন দু’গোলের।
তবে প্র্যাক্টিসে ওডাফাকে খুব ফিট দেখাল না। দু-একটা লম্বা পাস ধরতে গিয়ে পারলেন না। একবার রাকেশ মাসির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে চোটও পেলেন ডান পায়ে। তার পর বসে ছিলেন মাঠের মধ্যেই। তখন অন্যরা ডেড বল সিচুয়েশনের মহড়া দিচ্ছেন। যদিও কোচ প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়েছেন, প্রথম থেকেই সুনীল ছেত্রীর সঙ্গী হচ্ছেন ওডাফা।
ব্যারেটো-ওডাফাকে আটকাতে এ বার কিন্তু বেশ সতর্ক ইস্টবেঙ্গল কোচ ট্রেভর মর্গ্যান। বিশেষ আলোচনা সেরে নিয়েছেন তাঁর ডিফেন্ডারদের সঙ্গে। গুরবিন্দর সিংহ আর উগা ওপারা তো নজরদারি করছেনই। তার সঙ্গে বলেছেন, বল রিসিভ করার পর ওডাফাকে কিছুতেই ঘুরতে দেওয়া যাবে না। তা হলেই গোলমুখে আছড়ে পড়বে গোলার মতো শট। অথচ লাল-হলুদের ব্রিটিশ কোচ সেই চিন্তা সবাইকে জানান দিতে চান না। মুখে তাই বললেন, “দু’টো ম্যাচে দু’টো গোল করলেও ওডাফা আমাদের কাছে ভীতির কারণ হয়ে উঠতে পারেনি কখনও। প্রথম ম্যাচে গোল পেয়েছে পেনাল্টিতে। আর পরেরটা হয়েছে গোলকিপারের পায়ের তলা দিয়ে বল গলে গিয়ে।” এই ম্যাচে হঠাৎ করেই পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে আগের ডার্বির নায়ক মণীশ ভার্গব। হাদসন লিমা, রহিম নবির জন্য স্বাভাবিক উৎসাহ রয়েছেই। কিন্তু গোলের অনুরোধ আসছে সেই নাইজেরীয় এবং ব্রাজিলীয়র দিকেই। |