|
|
|
|
|
|
ভরসা জেদই |
প্রাপ্তিহীন সাফল্য |
উত্তম রায় |
ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দিদির মতো হবেন। তাই ডুমুরজলার মাঠে দিদির সঙ্গে শটপাট ও ডিসকাসে হাতেখড়ি। স্কুল স্পোর্টস মিটে কোচ নিখিল সাহার নজরে পড়েন রাখি ফাদিকার। চলে আসেন ভারোত্তলনে। ২৪তম জাতীয় প্রতিযোগিতায় ভারোত্তলনের ৭০ কেজি বিভাগে তিনি জিতলেন সেরার খেতাব।
বাবা শিবপুর বাজারে ফুল বিক্রি করেন। যা আয় হয় তাতে কোনও রকমে সংসার চলে। উচ্চমাধ্যমিকের পরে পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যাওয়া বা বিদেশে প্র্যাকটিস তো দূর অস্ৎ। ভারোত্তলনে আসার পরে বছর খানেক সাঁতরাগাছি শীতলা ব্যায়াম সমিতিতে অনুশীলন করেন। ২০০৪-এ প্রথম রাজ্য প্রতিযোগিতায় নামেন। দিদি মীরা ফাদিকার জুনিয়রে সোনা জেতেন। রাখি সাব-জুনিয়রে জেতেন রুপো। এর পরেই উৎসাহ বেড়ে যায়। বিয়ের পরে দিদি খেলা ছেড়ে দিলেও রাখি খেলা চালিয়ে যান। ২০০৬ থেকে টানা রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন রাখি। পাশাপাশি ২০০৮ থেকে টানা সাব-জুনিয়র, জুনিয়রে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন।
|
|
অরুণাচল প্রদেশের ইটানগরে অনুষ্ঠিত ২৪তম ন্যাশনাল মিটে অনূর্ধ্ব কুড়ির ৭০ কেজি বিভাগে চ্যাম্পিয়ন এবং এই বিভাগে স্ন্যাচে ক্লিন অ্যান্ড জার্ক টোটালে তিনটি সোনা জিতেছেন রাখি। কোচ অশোক মাজী বলেন, “ও অনেক দূর যাবে। বাংলার ওয়েট লিফটিংয়ে প্রথম তিনটি সোনা।” বাবা রতন ফাদিকারের কথায়: “এই সাফল্যে কোচ আর কোচিং সেন্টারগুলির পাশাপাশি ওঁর মায়ের বড় ভূমিকা আছে। ওঁর মা সব সময় উৎসাহ জোগাত। সঙ্গে করে প্র্যাকটিসে নিয়ে যেত। কিন্তু এ বার জাতীয় প্রতিযোগিতায় যাওয়ায় আগে মাকে হারায়।” আন্দুল পুঁইলা কিশোর ব্যায়াম সমিতির সচিব গোপাল আড়ু বলেন, “মা মারা যাওয়ায় মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছিল। যেতে চাইছিল না। আমরা সাহস জুগিয়ে জোর করে পাঠিয়েছি।”
সাফল্যের পরেও রাখির গলায় আক্ষেপের সুর। বললেন, “জানি না কত দিন টানতে পারব। দু’বেলা পাঁচ-ছ’ঘণ্টা অনুশীলন। পাশাপাশি সংসারের যাবতীয় কাজ। এখনও কোনও সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য পাইনি। শিবপুর হিন্দু গার্লস হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে পড়াশোনাও বন্ধ করে দিতে হয়েছে।”
|
ছবি: রণজিৎ নন্দী |
|
|
|
|
|