ডুমুরজলা
রূপান্তরের আশায়
খেলার জন্যই স্টেডিয়াম। অব্যবস্থা, দখলদারি, রিয়ালিটি শো-এর শ্যুটিং নয়, শুধু খেলার জন্যই হাওড়ার ডুমুরজলা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে তৈরি হতে চলেছে ‘স্পোর্টস হাব’।
এই প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যান তৈরি হয়ে গিয়েছে। খরচ পড়েছে এক কোটি টাকা। হাওড়া উন্নয়ন সংস্থার (এইচআইটি) তত্ত্বাবধানে মাস্টার প্ল্যানটি তৈরি করেছে রাজ্য সরকারের বেঙ্গল আরবান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (বিইউআইডিএল)। এইচআইটি-র দাবি, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে ২০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে কার্যত ভোল বদলে যাবে এই এলাকার। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন বাকি রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেত পেলেই কাজ শুরু হবে।
ডুমুরজলায় ৫৬ একর জমিতে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম তৈরির পরিকল্পনা প্রায় ২৫ বছরের পুরনো। স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরিও হয়। অভিযোগ, গোটা কমপ্লেক্সটি এখন অসামাজিক কাজের আখড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেদখল হয়ে গিয়েছে স্টেডিয়ামের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ জায়গা। কোনও অনুমতি ছাড়াই তৈরি হয়েছে ক্রিকেট কোচিং সেন্টার, সাঁতার ও ফুটবল ক্লাব। মাঠের মধ্যেই বানানো হয়েছে মন্দির, ঘরবাড়ি, দোকানপাট।
স্টেডিয়ামের বাইরের অবস্থাও খারাপ। ড্রেনেজ ক্যানাল রোডের উল্টো দিক এবং স্টেডিয়ামের উত্তর দিক বেদখল হয়ে গিয়েছে বহু দিন আগেই। সেখানে গড়ে উঠেছে বস্তি। এ ছাড়া কংক্রিটের যে চক্রাকার রাস্তা স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে গিয়েছে তার দু’পাশে গজিয়ে উঠেছে অজস্র গ্যারাজ, ইট-বালি-সিমেন্টের গুদাম, দোকান, বাজার, গ্যাস সিলিন্ডার রাখার গুদাম, জেনারেটর বিক্রির কারখানা ইত্যাদি।
১৯৯১-তে স্টেডিয়ামের এক পাশে ইন্ডোর স্টেডিয়াম তৈরি করে এইচআইটি। পরে তা হাওড়া পুরসভার হাতে তুলে দেওয়া হয়। হাওড়া পুর কর্তৃপক্ষ খেলা বন্ধ করে স্টেডিয়ামটি ভাড়া দিয়ে দেন একটি সংস্থাকে। এখন ওখানে প্রতি দিন টেলিভিশনের নানা অনুষ্ঠানের শু্যটিং হয়। এইচআইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগের সরকারের আমলে স্পোর্টস হাব তৈরির একটি পরিকল্পনা করা হয়।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে মাস্টার প্ল্যান তৈরির জন্য বিইউআইডিএল-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এইচআইটি সূত্রে খবর, যত সম্ভব পরিবেশকে অক্ষুণ্ণ রেখে, জলাশয় নষ্ট না করে এই বিশাল ময়দানে একই সঙ্গে গড়ে উঠতে চলেছে ফুটবল স্টেডিয়াম, টেনিস কোর্ট, ইন্ডোর স্টেডিয়াম, জলক্রীড়ার কমপ্লেক্স-সহ অত্যাধুনিক জিমন্যাসিয়াম। পরিকল্পনা অনুযায়ী আবাসন প্রকল্পের জন্য ২০ শতাংশ, জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য ৮, জলাশয়ের জন্য ২৩, রিয়েল এস্টেটের জন্য ১৬ এবং খেলার জন্য ৩৩ শতাংশ জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, মূল ফুটবল স্টেডিয়ামটি হবে ৩০ হাজার আসনের। টেনিস কোর্টে থাকবে ৩ হাজার আসন। আধুনিক শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ইন্ডোর স্টেডিয়ামে থাকবে ৫ হাজার আসন। ৫ হাজার আসনের জলক্রীড়াকেন্দ্রে সাঁতার ও পোলো খেলার ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি তৈরি হবে স্পোর্টস সেন্টার, স্টাফ কোয়ার্টার্স ও আবাসন।
এলাকার মানুষ ও বর্তমানে স্টেডিয়ামে থাকা বিভিন্ন ক্লাব ও সংস্থার কথা ভেবে সকলের জন্য কয়েকটি মাঠ রাখা হবে। সবাই ব্যবহার করবেন এমন অডিটোরিয়ামও থাকছে। সেটি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাড়াও নেওয়া যাবে। এ ছাড়া দালালপুকুরের কাছে মহেন্দ্র ভট্টাচার্য রোডে এইচআইটি-র একটি জায়গায় গড়ে তোলা হবে খেলোয়াড়দের জন্য হস্টেল।
এইচআইটি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার মৃন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে আয়ের দিকটিও বিবেচনা করা হচ্ছে। তাই স্টেডিয়ামের বাইরের জমিতে বহুতল আবাসন গড়ে তোলা হবে। তৈরি হবে শপিং মল, অফিস কমপ্লেক্সও।”
প্রকল্পটি অনুমোদনের ব্যাপারে সরকারি স্তরে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। গত জানুয়ারি মাসেই স্টেডিয়ামটি পরিদর্শন করে গিয়েছেন রাজ্যের ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। সঙ্গে ছিলেন মধ্য হাওড়ার বিধায়ক ও রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়। তাঁরা অবিলম্বে জবরদখলকারীদের সরানোর জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। ক্রীড়ামন্ত্রী জানিয়েছেন, খেলার মাঠের পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য গোটা স্টেডিয়ামটি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে।

ছবি: রণজিৎ নন্দী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.