একশো দিনের কাজের মজুরি আটকে প্রায় দেড় মাস। যার জেরে শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে গোঘাট ১ ব্লক প্রশাসনকে। সংশ্লিষ্ট বালি পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকেও সামলাতে হচ্ছে সেই ক্ষোভের আঁচ। শুক্রবার সকালে মজুরির দাবিতে শ্রমিকেরা স্থানীয় বালি দেওয়ানগঞ্জ উপডাকঘর ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। ডাকঘর কর্তৃপক্ষের ‘আচরণে’ ক্ষোভ আছে প্রশাসনের কর্তাদের একাংশেরও। আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “ডাকবিভাগের অসহযোগিতার জন্য একশো দিনের প্রকল্প ব্যাহত হচ্ছে মহকুমার বেশ কিছু জায়গায়। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর করা হয়েছে।”
প্রত্যন্ত গ্রামগুলির জবকার্ডধারী শ্রমিকদের উপডাকঘর ও শাখা ডাকঘরগুলিতে অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা হয়েছে। চেকের মাধ্যমে মজুরি দেওয়া হয় শ্রমিকদের। কিন্তু কাজ করেও নির্দিষ্ট সময়ে মজুরি না পেয়ে ক্রমে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন শ্রমিকেরা। সে কথা স্বীকার করে নিয়ে বালি পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের ভূমেন্দ্রমোহন রায়ের অভিযোগ, “আমরা যথা সময়ে শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট নম্বর-সহ প্রাপ্য মজুরির তালিকা ডাকঘরে পাঠিয়েছি। সেখানে ৭-১৪ দিনের মধ্যে মজুরি দেওয়া বাধ্যতামূলক। দেড় মাস হতে চলল, ডাকঘরের গাফিলতিতে অনেকে এখনও মজুরির টাকা পাননি। সমস্ত বিষয়টি বিডিও এবং মহকুমাশাসককে জানিয়েছি।”
গোঘাট ১ বিডিও জয়ন্ত মণ্ডল বলেন, “মজুরি পেতে দেরি হলে আমাদের কাছে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ ছিল, সংশ্লিষ্ট ডাকঘরের সুপারিন্টেন্ডন্টের সঙ্গে কথা বলতে।” জয়ন্তবাবুর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার তিনি টেলিফোনে যোগাযোগ করেছিলেন ওই পদাধিকারিকের সঙ্গে। কিন্তু ফোন রেখে দেন তিনি। মহকুমাশাসককে বিষয়টি জানিয়েছেন বিডিও। এ ব্যাপারে ডাকবিভাগের হুগলি জেলা উত্তর ডিভিশনের (গোঘাট এর অন্তর্গত) তরফে বিডিওর দাবি অস্বীকার করা হয়েছে। দক্ষিণ ডিভিশন থেকে কোনও মন্তব্যই করা হয়নি।
গোঘাটের বালি অঞ্চলে প্রায় পাঁচশো শ্রমিকের বিভিন্ন ডাকঘরে অ্যাকাউন্ট আছে। দিঘরা, বালি, জগৎপুর, দামোদরপুর, মির্জাপুর, উদয়রাজপুর, কলাগাছি প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দা কাশীনাথ পোড়েল, শ্যামল মণ্ডল, দিলীপ ভঞ্জ, রতন চক্রবর্তী, শেখ হানিফ প্রমুখের অভিযোগ, কখনওই ১৪ দিনের মধ্যে মজুরি মেলে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ২০-২৫ দিন পেরিয়ে যায়। এ বার দেড় মাস হতে চলল। এ ভাবে সংসার চালানো দায় হয়ে যাচ্ছে। বাজারে ধার-বাকিও হচ্ছে। বিক্ষোভ দেখিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। শুক্রবার বিক্ষোভের পরেও কবে টাকা মিলবে, তা নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে পারেননি বালি দেওয়ানগঞ্জ উপডাকঘরের পোস্টমাস্টার। তবে মজুরি-সংক্রান্ত কাগজপত্র তিনি যে আরামবাগ মহকুমার প্রধান ডাকঘরে পাঠিয়েছে, তার প্রামাণ্য নথি দেখিয়েছেন শ্রমিকদের। তাঁর দিক থেকে কোনও ত্রুটি নেই বলেই দাবি করেছেন ওই পোস্টমাস্টার অজিত সরকার। মহকুমাশাসককেও সেই-সংক্রান্ত নথি পাঠিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। আরামবাগ মহকুমার হেড পোস্টমাস্টার অশ্বিনী শীল বলেন, “আমরা কাগজপত্র রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে দিই। চেক ক্লিয়ারে দেরি হচ্ছে।” |