ভাড়া চার টাকা না ছ’টাকা, বিবাদ শুরু সেখান থেকে। এর পরে তর্কাতর্কি। আর তারই জেরে বাসের এক কন্ডাক্টরকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল কিছু ‘মদ্যপ’ যুবকের বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রতিবাদে ও অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে শুক্রবার বন্ধ ছিল শ্রীরামপুর-বাগবাজার রুটের ওই বাস। আজ, শনিবারও এই রুটের বাস বন্ধ রাখা হবে বলে শ্রমিক-কর্মচারী সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে।
ওই বাসের মালিকের ভূমিকা নিয়েও ক্ষুব্ধ কর্মীদের অভিযোগ, কন্ডাক্টর জ্ঞান হারিয়েছেন শুনেও মালিক বাস নিয়ে বাগবাজারের টার্মিনাসে চলে যেতে বলেন। ওই বাসের মালিক দুলাল সামন্তের মন্তব্য, “যা বলার অ্যাসোসিয়েশন বলবে।”
|
অলোক আঢ্য |
পুলিশ সূত্রের খবর, রিষড়ার সন্ধ্যাবাজার এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে কিছু যুবকের হাতে বেধড়ক মার খান চুঁচুড়ার বাসিন্দা অলোক আঢ্য (৪০)। এ দিন সকালে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতাল থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। নিহতের ভাই রঞ্জন আঢ্য খুনের অভিযোগ দায়ের করেন রিষড়া থানায়। রাত পর্যন্ত ওই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত এসপি (শিল্পাঞ্চল) অমিতাভ বর্মা বলেন, “তল্লাশি শুরু হয়েছে।”
আইএনটিটিইউসি সমর্থিত ৩ নম্বর বাসের কর্মী-শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি অন্বয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা সরকারের কাছে অপরাধীদের দ্রুত ধরা এবং নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।” পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “মর্মান্তিক ঘটনা। তবে বাসকর্মীদের অনুরোধ, যাত্রীস্বার্থে বাস বন্ধ করবেন না। সোমবার অলোকবাবুর বাড়িতে যাব। দোষীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শ্রীরামপুর স্টেশন সংলগ্ন স্ট্যান্ড থেকে রাত ১০টা ১০ মিনিটে ওই রুটের শেষ বাস ছাড়ে। ওই বাসেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবাজারের জনা সাতেক যুবক ওঠেন। অলোকবাবুর সঙ্গে ভাড়া নিয়ে তাঁদের গোলমাল বাধে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বাসটি মৈত্রী পথ পেরোতেই ওই যুবকেরা অলোকবাবুকে মারতে মারতে বাস থেকে টেনে রাস্তায় নামায়। বাসের (নম্বর ৯০৮৯) চালক গতি বাড়িয়ে ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ান। ওই রুটেরই অন্য একটি বাসের কন্ডাক্টর গৌতম রায়ের অভিযোগ, “তখনই মোবাইলে বাসের মালিককে চালক বিষয়টি জানালে ‘ট্রিপ’ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তিনি বাগবাজারে বাস নিয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তখন চালক আর অন্য কন্ডাক্টর বাধ্য হয় অলোককে ছেড়ে চলে যেতে।” অলোকবাবু অবশ্য ওই নম্বরের বাসটির ‘স্থায়ী’ কন্ডাক্টর ছিলেন না বলে কর্মী ইউনিয়ন সূত্রের খবর। কিছু পরে শ্রীরামপুরগামী একটি বাস সেখানে পৌঁছয়। সেটির কন্ডাক্টর সেখ সওকতের কথায়, “নর্দমার পাশে অলোক পড়ে ছিলেন। রক্তবমি করছিলেন। রাস্তার লোকের সাহায্যে ওঁকে তুলে ওয়ালশ হাসপাতালে নিয়ে যাই।” এ দিন সকালে অলোকবাবুকে এসএসকেএম নিয়ে যাওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যু হয়। দেহ ময়না-তদন্তের জন্য ওয়ালশ হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয়। ওই ঘটনার জেরে শ্রীরামপুরে ৩ নম্বর বাসের টার্মিনাসেও এ দিন উত্তেজনা ছড়ায়। কেন আহত সহকর্মীকে রাস্তায় ফেলে বাস নিয়ে চলে যান অন্য কন্ডাক্টর ও চালক, সে প্রশ্নে দু’জনকে মারধরও করেন বাসকর্মীদের একাংশ। কর্মী-সংগঠনের কর্তারা পরিস্থিতি সামলান। চুঁচুড়ার বড়বাজারে অলোকবাবুর বাড়ি। দারিদ্রের সংসার। একমাত্র রোজগেরের মৃত্যুতে কী ভাবে কী হবে, কেউ বুঝতে পারছেন না। |