সিনেমা সমালোচনা ১...
মজার গন্ডগোল
মেয়ের প্রেমিক মোটা মাইনের চাকরি করে। ভাল মানুষ। মৃদুভাষী।
এমন পাত্র শ্বশুরমশাইদের সাধারণত পছন্দই হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হল না। পাত্রের যে সাতকুলে কেউ নেই। তার ওপর কেমন যেন মিনমিনে গোবেচারা। বোকা বোকা ভাব। জুল জুল করে তাকায়। কথায় কথায় থতমত খায়। মেয়ের বাবার পছন্দ হম্বিতম্বিওয়ালা উচ্চবংশের ছেলে। যৌথ পরিবার হবে। হাঁকডাক দাপট থাকবে। জাঁদরেল সব পূর্বপুরুষের ছবি থাকবে ঘরে ঘরে। তবে না মেয়ের শ্বশুরবাড়ি।
এ সব কোনও কিছু না মেলায় পাত্রী সম্পূর্ণার সঙ্গে পাত্র রাহুলের বিয়েটা প্রায় যখন ফসকে যায় যায় পাত্রীর মামাবাবু (প্রদীপ চক্রবর্তী) হাজির। মেয়ের বাপকে বলেন কোনও চিন্তা নেই জামাইবাবু। এ পাত্র অত্যন্ত উচ্চবংশের। বর্ধমানে বাড়ি। বিঘা বিঘা জমি। খেত ভরা সবুজ ফসল। গোলা ভরা ধান। পুকুরে টাটকা মাছ। গোয়ালে দুধেল গাই। বাড়ি ভর্তি জেঠা-জেঠি, কাকা-কাকি, বিধবা পিসি আর তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে বিরাট জ্ঞাতিগুষ্টি জমজমাট পরিবার। কলকাতা শহরেও হালফিল সাতমহলা বাড়ি...
গোড়ায় গন্ডগোল
রাহুল, সম্পূর্ণা, দীপঙ্কর দে, রজতাভ, খরাজ, রুদ্রনীল,
বিশ্বজিৎ, শাশ্বত, মানসী, লকেট, কনীনিকা, কাঞ্চন, লামা, রাজেশ
এ ভাবে একটা মিথ্যে ঢাকতে অন্য একটা মিথ্যে। মিথ্যের ওপর মিথ্যে। তার ওপর মিথ্যে। সত্যি মিথ্যে গুলিয়ে গোড়াতেই একেবারে গন্ডগোল করে দেন মামাবাবু। গল্পের গরু গাছে চড়ানো এমন মামাবাবু না থাকলে এমন একটা কমেডি ছবি যে শুরুই হয় না!
পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় এই মামাবাবু-জাতীয় স্ল্যাপস্টিক কমেডিকেই নিজের ঘরানা বানিয়ে ফেলছেন এক দঙ্গল শিল্পী নিয়ে পরপর কমেডি ছবি করে। বাংলা ছবিতে যখন শহুরে নারী-পুরুষের সম্পর্কের জটিলতার আধারে ঝকঝকে ছবির ঢল তখন এ এক অন্য রকম ঘরানা তো বটেই!
যেখানে যুক্তির ধার না ধেরে মনোযোগ দেওয়া হয় ‘রোজ কত কী ঘটে যাহা তাহা এমন কেন সত্যি হয় না আহা!’ জাতীয় অবাস্তব আনন্দে। যেমন? মধ্যবিত্ত ড্রইংরুমে গল্পটা শুরু হয়েও চলে যায় ঝুপড়ির দুনিয়ায়। যেখানে থাকে ভারী ভাল সব কিডন্যাপার, তোলনবাজ, পকেটমার, চুল্লু কারবারি, গণিকাপল্লির যৌনকর্মীরা। তারা আবার চোরাই হিরে নিয়ে শেষ পর্যন্ত বড়লোকও হয়ে যায়। অথচ কোনও পুলিশ আসে না। যাকে বলে হ্যাপি এন্ডিং আর কী। চরিত্ররাও খুশি, দর্শকও খুশি।
আরও আছে। জাঁদরেল শ্বশুরমশাই মানে মেয়ের বাবা দীপঙ্কর দে-কে খুশি করতে কিডন্যাপার গোলাম মুস্তাফা ওরফে রজতাভ দত্ত তাঁর প্রান্তিক বন্ধুদের বস্তি থেকে জড়ো করে পাত্রের বাড়ির লোকজন সাজানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বারে বারে বলেন,
খেল খিলাড়ি হঠ আনাড়ি
জোরাজুরি মারকাটারি...।

মিথ্যের ওপর মিথ্যে যত সাজানো হয়, ততই বাড়ে আনাড়িপনা। ততই বাড়ে মারকাটারি নাটক তৈরির অবকাশ।
ওই দুনিয়ায় কিডন্যাপার, পকেটমার, চোলাই ব্যবসায়ী, টিকিট ব্ল্যাকারেরা বনেদি পাত্রপক্ষ সেজে সাতমহলা অভিজাত বাড়িতে যদি বিয়ের জোগাড়ে মাতে হুলুস্থুল কাণ্ড বাধে। একে তো তাঁদের হঠাৎ সাজপোশাক বদলে, মুখের ভাষা বদলে তথাকথিত ভদ্দরলোক সাজার বিপদ, তায় মিথ্যের জাল বুনতে গিয়ে এই-ধরা-পড়ি-কি-সেই-ধরা-পড়ির পেট গুড়গুড়, বুক দুরদুর করা টেনশন। তাতেই দমকা হাসি, ফিচেল হাসি, মুচকি হাসি, পাচ্ছে হাসির পেঁজা পেঁজা তুলো। সজ্জন বাঙালি ইমেজ ছেড়ে গলায় রঙিন রুমাল। চকরাবকরা সিন্থেটিক শার্ট পরে, খসখসে গলায় কথা বলে টিকিট ব্ল্যাকারের রোলে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে দেখে চমকাবেন দর্শক। চোলাই ব্যবসায়ীর চরিত্রে খরাজ তার দুলকিচালের অভিনয়ে নিপাট। অন্তেবাসী চরিত্রে রুদ্রনীল ঘোষ আগেও বহু বার অভিনয় করেছেন।
তাঁর কাজ এ ছবিতে আর একটু উজ্জ্বল হলে পারত। ভিতু পুলিশের ভূমিকায় কাঞ্চন মল্লিকের চেকনাইও আরও বাড়তে পারত। বহু চরিত্রের ভিড়ে আড়াল হয়ে যায়নি পাত্র রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিমিত অভিনয়ের ছোট ছোট ‘স্ট্রোক’। তবে নায়িকা হিসেবে সম্পূর্ণা লাহিড়ির প্রতিশ্রুতি আছে কিন্তু ঘষামাজা দরকার। ‘গোড়ায় গন্ডগোল’-এ হাল্কা হাসির বাতাবরণের মধ্যে পরিচালক ধরিয়ে দিতে চেয়েছেন কিছু মহৎ সত্য। সেই সুবাদে হাসতে হাসতেও চোখের কোণে মাঝে মাঝে টলটলে জল আনা অভিনয় করেছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। মানসী সিংহ, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়রাও দারুণ। এক দিকে পেশাদার কিডন্যাপার, অন্য দিকে পাত্রের বড় জেঠা সাজতে গিয়ে দু’টো স্তরের অভিনয়, দু’ধরনের ভাষা-ভঙ্গি নিয়ে সাবলীল অভিনয় করার সুযোগ চুটিয়ে ব্যবহার করেছেন রজতাভ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.