সিনেমা সমালোচনা ২...
এই অগ্নিপথে আগুন নেই, নেশা আছে
সিনেমার হিরো বা ভিলেনরা সব সময় একটা ভুল ‘রিপিট’ করে। ডায়লগ ঝাড়তে গিয়ে লড়াইটা অহেতুক লম্বা করে ফেলা। হিরোর বক্তৃতার সুযোগে ভিলেনের শাগরেদরা আক্রমণ বাড়িয়ে ফেলে। ভিলেন কথা বলতে গিয়ে হিরোকে দম নেওয়ার সুযোগ দেয়।
কিন্তু কর্ণ জোহর (প্রযোজক) এবং কর্ণ মলহোত্রকে (পরিচালক) নিশ্চয়ই ভাবতে হয়েছে, কী ‘রিপিট’ করা হবে আর কী করা হবে না! ‘অগ্নিপথ’-এর নতুন সংস্করণে, কী কী ‘রিপিট’? অবশ্যই ছবির নাম, গল্পের আদল, ‘অগ্নিপথ’ নামে হরিবংশ রাই বচ্চনের সেই কবিতা আর কিছু চরিত্র।
কোন কোন চরিত্র? উত্তরের অনেকটা লুকিয়ে আছে একটা সংলাপে। সংলাপটাও ‘রিপিট’, যদিও মাত্র এক বারের জন্য।
নাম, বিজয় চহ্বান। পুরা নাম বিজয় দীননাথ চহ্বান। বাবা কা নাম মাস্টার দীননাথ চহ্বান। মা কা নাম, সুহাসিনী চহ্বান। গাঁও কা নাম, মান্ডওয়া। হ্যাঁ, হৃতিক রোশনের নাম বিজয় চহ্বান অবশ্যই। তাঁর বাবা-মা-বোনের নামও অপরিবর্তিত। এবং আছে মান্ডওয়া গ্রাম এবং কাঞ্চা চিনা (সঞ্জয় দত্ত)। আছেন মুম্বইয়ের সৎ পুলিশ অফিসার গায়তোন্ডে (ওম পুরী)। আছে গণেশ পুজো। যা নেই তার মধ্যে প্রথমেই বলতে হয়, মিঠুনের কৃষ্ণন আইয়ার। নেই। মান্ডওয়ার মাতাল টিনু আনন্দ নেই। বিজয়ের বোন শিক্ষা এখানে বয়সে আরও ছোট, ফলে তার ভূমিকায় নীলমের মতো কাউকে দরকার হয়নি। বিজয়ের প্রেমিকা কালী (প্রিয়াঙ্কা চোপড়া) নার্স নয়, বস্তির মেয়ে। আর কাঞ্চার আস্তানা এ ছবিতে মরিশাস নয়, মান্ডওয়া-ই। কাঞ্চার ডেরায় নাচাগানার বন্দোবস্ত থাকলেও (ক্যাটরিনার ‘চিকনি চামেলি’র জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত স্থান আর হতে পারত না!) তাদের মধ্যে কোনও অর্চনাপূরণ সিংহ নেই, যে বিজয়কে সাহায্য করতে চাইবে।
অগ্নিপথ
হৃতিক, সঞ্জয়, ঋষি, প্রিয়াঙ্কা
এই ‘আছে’ আর ‘নেই’-এর ফর্দটায় নজর করলেই সম্ভবত বোঝা যাবে, কর্ণরা কী চেয়েছিলেন। সেই ‘চাওয়া’টা কিন্তু ‘রিপিট’ না। পরিষ্কার করে বলে দেওয়া যাক, মুকুল আনন্দের ‘অগ্নিপথ’ আর কর্ণ মলহোত্রর ‘অগ্নিপথ’ বাহ্যিক ভাবে বেশ কিছুটা এক হলেও আসলে একদমই আলাদা।
পুরনো ‘অগ্নিপথ’ (১৯৯০) ছিল অমিতাভের ‘অ্যাংরি ইয়ংম্যান’ ঘরানার শেষ লপ্তের ছবি। ‘অগ্নিপথ’ সে সময় ভাল না চললেও যত সময় গড়াল, ততই ‘কাল্ট’-এর মর্যাদা যে পেতে থাকল, সেটাও অমিতাভের জন্যই। তাঁর এক একটা সংলাপ জাতির অভিধানে ঢুকে গেল। অমিতাভকে তাঁর অবতারে ‘সেলিব্রেট’ করাই ছিল ‘অগ্নিপথ’-এর লক্ষ্য। পাশাপাশি মিঠুন-অমিতাভকে একসঙ্গে আনাটাও ছিল চমক।
কিন্তু নতুন ‘অগ্নিপথ’-এ এ সব নেই। কারণ, নতুন ‘অগ্নিপথ’ বিজয় চহ্বানকে সেলিব্রেট করার জন্য বানানোই হয়নি। হৃতিকের মুখে তাই ‘দমদার’ ডায়লগের ফুলঝুরি দরকারই হয়নি। অমিতাভের জুতোয় হৃতিক পা গলাতে যাননি, চরিত্রটাকে নিজের মতো করে করেছেন এগুলো কোনও কথাই না। কারণ, দু’টো বিজয় আসলেই আলাদা চরিত্র। হৃতিকের বিজয় ভাল, কিন্তু ‘বিজয় দীননাথ চহ্বানে’র উচ্চতা তার নেই। নতুন ‘অগ্নিপথ’ বরং অনেক বেশি সেলিব্রেট করে ভিলেনকে এবং ভায়োলেন্সকে। সেই জন্যই কাঞ্চা চিনা অমন দৈত্য হয়ে ওঠে, রউফ লালা (অসাধারণ অভিনয় করেছেন ঋষি কপূর) বলে এক নতুন ভিলেনের অবতারণা হয়, গায়তোন্ডে ছাড়া বিজয়ের অন্য সহযোগীরা (মিঠুন-টিনু আনন্দ-অর্চনা) সব্বাই বাদ হয়ে যায়। বিজয়ের মা-এর (জারিনা ওয়াহাব) চরিত্রটা কম গুরুত্ব পায়। গাঁয়ের লোকেরা শেষ দৃশ্যেও প্রায় চুপচাপই দাঁড়িয়ে থাকে। হিংস্রতার অনন্তলীলা চলতে থাকে, চলতেই থাকে। এই বীভৎসতা অনেকটাই অপ্রয়োজনীয় ছিল।
কিন্তু ‘অগ্নিপথ’ যদি বিজয় চহ্বানের ধর্মযুদ্ধ হয়, সেখানে ভিলেনকে সেলিব্রেট করার সুযোগ কোথায়? গণ্ডগোলটা এখানেই ঘটে গিয়েছে। ছবিটা হিরোর না ভিলেনের, সেটাই স্থির করতে পারেননি পরিচালক। এখানে বিজয় নয়, রউফ আর কাঞ্চাই ‘লার্জার দ্যান লাইফ’! আবার দুই ভিলেনের মধ্যেও আকাশপাতাল তফাত। রউফ লালা এক জাতের ভিলেন। তাকে মুম্বইয়ের ড্রাগ-মাফিয়া বলে চেনা যায়। কাঞ্চা আবার অতিলৌকিক চেহারায়, কথাবার্তায়, হিংস্রতায় (অনেক ছবিতেই হিরো কী করে বেধড়ক মার-গুলি-ছুরি খেয়েও লড়াইয়ে টিকে থাকল এবং জিতল, সেটা একটা প্রশ্ন। এ ছবিতে তার সঙ্গে আরও একটা প্রশ্ন আছে। কাঞ্চা যে কী করে শেষ মুহূর্তে অত সহজে ভূপতিত হল! সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে দেখানো ‘লাজার্র দ্যান লাইফ’ কাঞ্চার এই ঠুনকো পতন ছবির ছন্দেরও পতন ঘটায়।) সঞ্জয় নিজে যত না ভয়াল অভিনয় করেছেন, তার চেয়ে ঢের বেশি অভিনয় করেছে ক্যামেরার পরাবাস্তব অ্যাঙ্গলে দেখানো তাঁর অতিকায় শরীর আর মেক-আপ। আর পুরনো ছবির থেকে এই ছবিতে কাউকে যদি বেশি ভাল লেগে থাকে সে হচ্ছে ছোট বিজয়ের চরিত্রের শিশু অভিনেতা।
যে বলিউড রামগোপাল বর্মা বা বিশাল ভরদ্বাজ দেখে ফেলেছে, সেখানে আজ নতুন করে অন্ধকার জগতের কাহিনি-কাঠামোয় ‘বিজয় দীননাথ চহ্বান’কে পুরে দেওয়াটা এমনিই কঠিন ছিল। সেই সঙ্গে কাঞ্চাকে একটা আধিভৌতিক রূপ দিতে গিয়ে ভারসাম্যটা আরও ঘাঁটল। তিন ঘণ্টার হাই-ভোল্টেজে বাস্তববাদ, রূপক আর মেক-বিলিফ, সব একসঙ্গে জড়িয়ে গেল। বক্স অফিস যা-ই বলুক, নতুন ‘অগ্নিপথ’-এর কপালে ‘কাল্ট’-এর তকমা জোটা মুশকিল! বাবা যশ জোহরের থেকে অমরত্বের দৌড়ে ছেলে কর্ণ জোহর তাই পিছিয়েই রইলেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.