চালু পাঠ্যক্রম যেমন চলছে চলবে। সেই সঙ্গেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে পাঁচ বছরের একটি ‘ইন্টিগ্রেটেড’ বা সুসংহত পাঠ্যক্রম চালু করছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এই পাঠ্যক্রমের সুবিধা হল, দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা পাশ করে স্নাতক স্তরে কোনও পাঠ্যক্রমে ভর্তি হয়ে একেবারে স্নাতকোত্তরের পাঠ শেষ করে বেরোতে পারবেন ছাত্রছাত্রীরা। ২০১২-’১৩ শিক্ষাবর্ষেই এই ব্যবস্থা চালু হবে বলে জানান শুক্রবার জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস।
উপাচার্য বলেন, “সব বিভাগের প্রধানকে চিঠি লিখে জানানো হবে, যথাযথ পরিকাঠামো থাকলে তাঁরা যেন এই বছর থেকেই সুসংহত পাঠ্যক্রম চালু করে দেন। প্রথম বার যদি তিনটি বিভাগও এটা শুরু করতে পারে, তা হলেও ভাল। পরের বছর আরও ১০টি বিভাগে সুসংহত পাঠ্যক্রম চালু হবে বলে আশা করা যায়।” বিশ্ববিদ্যালয়ের শূন্য শিক্ষক-পদগুলি দ্রুত পূরণ করা হবে বলে জানান উপাচার্য। তাঁর কথায়, “সুসংহত পাঠ্যক্রমে ভর্তি হলেও তিন বছর পরে ডিগ্রি নিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার সুযোগ থাকবে। এর পাঠ্যক্রমও আলাদা ভাবে তৈরি হবে। প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভর্তি হবে ছাত্রছাত্রীরা। আশা করা যায়, দ্বাদশ শ্রেণির পরে বেশ কিছু ভাল ছাত্রছাত্রী এই পাঠ্যক্রমে ভর্তি হবে।”
ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি বিভাগ সুসংহত পাঠ্যক্রম চালু করার ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়েছে বলে জানান উপাচার্য। তবে সেই সব বিভাগের নাম বলতে চাননি তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিভাগে সুসংহত পাঠ্যক্রম চালু আছে।
এখনকার পৃথক স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পদ্ধতির ছাত্রছাত্রীরা যেমন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পান, নতুন সুসংহত পাঠ্যক্রমের পড়ুয়ারাও তা-ই পাবেন। তা হলে নতুন পদ্ধতিতে বাড়তি সুবিধা কী হবে? কেনই বা ভাল ছাত্রছাত্রীরা এই পাঠ্যক্রমে ভর্তি হবেন বলে আশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ?
সুরঞ্জনবাবু বলেন, “সুসংহত পাঠ্যক্রমটি আরও উন্নত ভাবে তৈরি করা হবে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে ভাল ছাত্রছাত্রীরা তাতে ভর্তি হবে। তাদের মার্কশিটেও সুসংহত পাঠ্যক্রমের স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বলে উল্লেখ করা হবে।” মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি সুসংহত পাঠ্যক্রমের উপরেই জোর দিচ্ছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের আশা, বিভিন্ন বিষয়ে এই পাঠ্যক্রম চালু হলে তা প্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়নের সহায়ক হবে।
সুরঞ্জনবাবু জানান, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অ্যান্ড্রু হ্যামিল্টন মার্চে বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে আসছেন। ঐতিহ্যবাহী ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যৌথ ভাবে নানা বিষয়ে গবেষণা চালাবে। এই খাতে অনুদানও পেয়েছেন তাঁরা। উপাচার্য বলেন, “শিল্পের সঙ্গে উচ্চশিক্ষার সম্পর্ক স্থাপন, আধুনিক ওষুধপত্রের ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা হবে। হ্যামিল্টন এলে ওঁর সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা হবে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওফিজিক্স, মেরিন সায়েন্স বিভাগও গবেষণার জন্য বিদেশি অনুদান পেয়েছে বলে জানান তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি উৎকর্ষ কেন্দ্র চালু আছে। আরও একটি চালু হচ্ছে। তার নাম ‘ইলেকট্রোফিজিক্যাল অ্যান্ড নিউরো ইমেজিং স্টাডিজ’। শারীরবিদ্যা, মনস্তত্ত্ব, ফলিত গণিত প্রভৃতি বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্রেরা যৌথ ভাবে কাজ করবেন ওই কেন্দ্রে। সুরঞ্জনবাবু বলেন, “নতুন সেন্টার অফ এক্সেলেন্স বা উৎকর্ষ কেন্দ্রের জন্য ইউজিসি-র কাছ থেকে সওয়া ছ’কোটি টাকা অনুদান মিলেছে।” |