জোড়াসাঁকো নয়, বিটি রোডের ক্যাম্পাসেই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক বিভাগের পঠনপাঠন চলবে বলে জানিয়ে দিলেন উপাচার্য চিন্ময় গুহ। তাঁর দাবি, নাটক নিয়ে পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো বিটি রোডেই আছে। বরং জোড়াসাঁকোতেই তার অভাব। সেই কারণে বিভাগটি সরানোর কোনও প্রয়োজন নেই বলে মনে করছেন তিনি।
২০০৭ সালে রবীন্দ্রভারতীর নাটক বিভাগটি জোড়াসাঁকো থেকে বিটি রোডে স্থানান্তরিত হয়। বিটি রোডে যথাযথ পরিকাঠামো নেই বলে অভিযোগ ওই বিভাগের এক দল ছাত্রছাত্রীর। তাঁদের দাবি, বিভাগটিকে জোড়াসাঁকোয় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বেশ কিছু নাট্যব্যক্তিত্বও এই দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন।
উপাচার্য বলেন, “বিটি রোড ক্যাম্পাসে জোড়াসাঁকোর থেকে জায়গা অনেক বেশি। যথেষ্ট পরিকাঠামোও রয়েছে সেখানে। শুধু নাটক বিভাগের পরিকাঠামো তৈরির জন্য ২০০৭-এর এপ্রিল থেকে ২০১১-এর ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। বাকি যা লাগবে, তা-ও তৈরি করে দেওয়া হবে। তা হলে কেন জোড়াসাঁকোয় ফেরার দাবি উঠছে, বুঝতে পারছি না।”
ছাত্রছাত্রীরা বলছেন, “জোড়াসাঁকোয় ফিরে যাওয়াটাই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। যত দিন না বিটি রোডে নতুন পরিকাঠামো যথাযথ ভাবে গড়ে উঠছে, তত দিন আমাদের জোড়াসাঁকোয় ক্লাস করতে দেওয়া হোক, এটাই আমার চাইছি।” ২০০৭-এর পর থেকে এখনও অবধি ‘থিওরি’ ক্লাস চলছে বিটি রোডে। ‘প্র্যাক্টিকাল’ ক্লাসগুলো যথাযথ ভাবে হচ্ছে না এবং কাটছাঁট করে যেটুকু হচ্ছে, তার জন্য জোড়াসাঁকোয় আসতে হচ্ছে বলে পড়ুয়ারা জানান। নাটক বিভাগের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী, ছাত্রছাত্রীদের নাট্যপরিচালনা অভ্যাস করতে হয়, পরীক্ষাও দিতে হয়। সেখানে সিনিয়র পড়ুয়াদের সঙ্গে জুনিয়র পড়ুয়াদের একযোগে কাজ করতে হয়। “এখন সিনিয়ররা যখন জোড়াসাঁকোয় প্র্যাক্টিকাল করছে, জুনিয়ররা থিওরি ক্লাসের জন্য থেকে যাচ্ছে রবীন্দ্রভারতীতে। ফলে পাঠ্যক্রমের উদ্দেশ্যটাই নষ্ট হচ্ছে,” বলছেন ওঁরা। নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে শনিবার অ্যাকাডেমি প্রাঙ্গণে সমাবেশেরও ডাক দিয়েছেন তাঁরা।
উপাচার্য অবশ্য এ দিন জানান, বিটি রোডে একটি মঞ্চ তৈরি করা হবে। এ জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি গড়া হচ্ছে। চিন্ময়বাবু বলেন, “ওই কমিটিতে পবিত্র সরকার, শঙ্খ ঘোষ, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, মনোজ মিত্র, কণিষ্ক সেন, শাঁওলী মিত্র, সুমন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ থাকবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, ফিনান্স অফিসার, ডিন-সহ অন্যরাও থাকবেন।” উপাচার্যের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা শাখার ডিন তথা নাটক বিভাগের প্রধান সোমনাথ সিংহ। এ দিন তিনি বলেন, “অল্প সময়ের মধ্যে উপাচার্য যত দ্রুত সম্ভব পরিকাঠামো উন্নত করতে উদ্যোগী হয়েছেন। ওঁর উদ্যোগে আমাদের আস্থা আছে।” প্রাক্তন উপাচার্য করুণাসিন্ধু দাস অবসর নেওয়ার পরে এ বছর ১৮ জানুয়ারি উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েছেন চিন্ময়বাবু। উপাচার্য জানান, জোড়াসাঁকোয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থানকে কলকাতার অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পর্যটন দফতরের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তিনি। মঞ্চ তৈরির পাশাপাশি বিটি রোড ক্যাম্পাস এবং জোড়াসাঁকোয় দু’টি অডিটোরিয়াম তৈরি হবে বলেও জানিয়েছেন উপাচার্য। |