সেখানে আগুন লাগলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে বহু বিখ্যাত মানুষের জন্ম-মৃত্যুর নথি-সহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাগজপত্র। অথচ, কলকাতা পুরসভার শতাব্দী-প্রাচীন ওই সেন্ট্রাল রেকর্ড রুমের অগ্নি-সুরক্ষা নিয়ে কর্তৃপক্ষ একেবারেই চিন্তিত নন বলে মনে করেন সেখানকারই অনেক কর্মী।
পুরসভা সূত্রের খবর, বহু গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক নথি রয়েছে সেখানে। কিন্তু, এখন ওই ঘরের যা অবস্থা, তাতে আগুন লাগলে কোনও ভাবেই রক্ষা করা যবে না সেখানকার নথিপত্র। বিশেষ করে আগুন মোকাবিলায় ওই রেকর্ড রুম একেবারেই নিরাপদ নয়।
শ্রীরামকৃষ্ণ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, উত্তমকুমার, সত্যজিৎ রায়, ছবি বিশ্বাসের মতো বহু বিখ্যাত মানুষের মৃত্যুর নথি আছে ওই রেকর্ড রুমে। যে নথি থেকে মৃত্যুর কারণ ছাড়াও অনেক তথ্য জানা যায়। পুরসভার সিইও হিসেবে সুভাষচন্দ্র বসুর সার্ভিস রেকর্ডও রয়েছে ওই ঘরে। রয়েছে বহু ঐতিহ্যমণ্ডিত বাড়ির নকশাও। যেমন ইডেন হাসপাতাল, যা এখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। এ ছাড়াও বিভিন্ন হাসপাতালের নকশা আছে সেখানে। ব্রিটিশ আমল থেকে এ পর্যন্ত কলকাতা পুর-এলাকার সমস্ত বাড়ির মূল্যায়ন সংক্রান্ত নথিপত্র, পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের নানা রিপোর্ট, পুর-এলাকার ভোটার-তালিকাও রয়েছে সেখানেই।
সেই সেন্ট্রাল রেকর্ড রুমে ঢোকা এবং বেরোনোর একটি মাত্র দরজা। তা ছাড়া, ঘরটির অবস্থান এমন জায়গায় যে, আগুন নেভানোর সুযোগও নেই বললেই চলে। সেন্ট্রাল রেকর্ড রুম সূত্রেই জানা গিয়েছে, সেখানে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র থাকলেও তা ব্যবহার করার প্রশিক্ষণ কারও নেই। পরপর শহরে এতগুলি অগ্নিকাণ্ডের পরেও সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের হেলদোল নেই বলে অভিযোগ কর্মীদের একাংশের। এই পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ জানান, আগুন, পোকামাকড় ও ধুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র রক্ষা করতে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবছেন তাঁরা।
অগ্নি-সুরক্ষার ক্ষেত্রে ওই সেন্ট্রাল রেকর্ড রুমের পরিস্থিতি যে ভয়াবহ, তা পরোক্ষে মেনে নেন পুরসভার সচিব রীতেন্দ্রনাথ বসু রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ দফতর সমীক্ষা করছে। কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে ডিজি-কে (বিদ্যুৎ) প্রস্তাব দিয়েছি।” তা ছাড়া, যে সংস্থার থেকে যন্ত্রগুলি কেনা হয়েছে, তারাও ওই যন্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিতে পারে বলে জানান সেন্ট্রাল রেকর্ড রুমের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি ম্যানেজার তপন চক্রবর্তী। আগুন ছাড়াও পুরনো নথির বড় শত্রু পোকা ও ধুলো। তাই পুরনো ‘ক্যালকাটা গেজেটিয়ার’-সহ সব গুরুত্বপূর্ণ নথি ‘ডিজিটালাইজ’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। এ বিষয়ে এশিয়াটিক সোসাইটিকে অনুরোধ করা হয়েছিল সাহায্যের জন্য। সেখানকার বিশেষজ্ঞেরা ইতিমধ্যে সেন্ট্রাল রেকর্ড রুম প্রাথমিক ভাবে দেখে গিয়েছেন। |