বাঁধা গতের অজুহাত, পরিকাঠামো নেই।
তারই ফাঁক গলে মহেশতলা পুর-এলাকায় রমরম করে চলছিল ‘বেআইনি’ স্টুডিও, আর খাস কলকাতায় লালবাজার-মহাকরণের ঢিল-ছোড়া দূরত্বে বৌবাজারে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ও ছাড়পত্র ছাড়াই বহাল তবিয়তে দাহ্যে ঠাসা গুদাম। বৃহস্পতিবার রাতে দু’টি অগ্নিকাণ্ডের পরে যাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে টনক নড়ল সংশ্লিষ্ট দু’টি পুরসভা ও দমকলের। ঘটনাচক্রে, মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাস এবং কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে শ্বশুর-জামাই।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য ইতিমধ্যেই এই ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বৌবাজারের ঘটনায় কলকাতা পুরসভার বক্তব্য, গুদামটির লাইসেন্স ছিল কি না, খতিয়ে দেখা হবে। দমকল বলল, সেখানে অগ্নিনির্বাপক লাইসেন্স তো দূরের কথা, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাটুকুও নেই।
মহেশতলার মতো জায়গায় খালি গুদামে তৈরি হয়েছে স্টুডিও। সেখানে নিয়মিত শু্যটিং হয়। অথচ স্টুডিওটির যে বৈধ ছাড়পত্র নেই, পুরসভা তা জানল স্টুডিও ও লাগোয়া অন্য গুদামে আগুন লাগার পরে। কেন? পুর-চেয়ারম্যান দুলাল দাসের দাবি, “আমি ওই পথে আসা-যাওয়া করলেও ওখানে যে একটি স্টুডিও রয়েছে, তা জানতামই না। কারণ এ সব ক্ষেত্রে নজরদারি করার মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই। তার জেরেই ওখানে বেআইনি ভাবেই স্টুডিওটি চলছিল। পুরসভার তরফে ওই গুদাম মালিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। |
ওই গুদামে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থাও নেই।” আলিপুরের মহকুমাশাসক তনবীর আফজল বলেন, “শুল্ক দফতরকে ওই গুদামের বিষয় নোটিস জারি করা হয়েছে।”
বৌবাজারে ডামজেন লেন এবং শ্রীনাথবাবু লেনের সংযোগস্থলে প্যাকিং বাক্সের ওই গুদামে আগে চামড়া রাখা হত বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বহু পুরনো ওই গুদামে এখন কাগজের প্যাকিং বাক্স মজুত করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে অগ্নিকাণ্ডের পরে দমকল দাবি করেছে গুদাম চলছিল অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই। দমকলের তরফে ওই গুদামকে কোনও ছাড়পত্রও দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন দমকল কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় পুর-ছাড়পত্রও থাকার কথা নয়।
তা হলে গুদাম চলছিল কী করে? দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়া বলেন, “আমাদের নজরদারির অভাব রয়েছে। আসলে নজরদারির জন্য যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী আমাদের নেই। সে কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।” কী করছিল পুরসভা? মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অনেকে এক অজুহাতে লাইসেন্স নিয়ে অন্য ব্যবসা করে। অনেক ক্ষেত্রে সময়ে লাইসেন্সই নেন না ব্যবসায়ীরা। জানতে পারলে আমরা ধরি। পুরসভার সেই পরিকাঠামো নেই, যাতে প্রতিটি জায়গায় গিয়ে নজরদারি করা যায়।”
মহেশতলার স্টুডিওয় এখন যে সিরিয়ালের শু্যটিং চলছিল, তার কাজ আগে হত প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওয়। মাস কয়েক আগে সেখানে আগুন লাগার পরে মহেশতলায় আসে গোটা ইউনিট। এখানেও ফের আগুন। তা সত্ত্বেও অবশ্য দমে যায়নি শু্যটিং ইউনিট। শুক্রবার সিরিয়ালটির অন্যতম অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরী বলেন, “কাল রাতের ঘটনার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে শু্যটিং আবার শুরু হচ্ছে। স্টুডিওয় যেহেতু সম্ভব নয়, আপাতত কিছু দিন আউটডোরে কাজ করেই সামাল দেওয়া হবে।” |