প্রহৃত হলেন রোগীরাও
দুর্ঘটনায় জখম যুবকের মৃত্যুতে তুলকালাম বসিরহাট হাসপাতালে
দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম এক যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সোমবার সন্ধ্যায় তুলকালাম হল বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে। চিকিৎসায় গাফিলতিতে ওই যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ তুলে তাঁর সঙ্গে আসা লোকজন ভাঙচুর চালাল জরুরি বিভাগ এবং সার্জিক্যাল বিভাগে। প্রহৃত হলেন দুই চিকিৎসক, পাঁচ স্বাস্থ্যকর্মী এবং কয়েক জন রোগীও। হামলাকারীরা রেয়াত করেনি পুলিশকেও। তাদের ঠেকাতে গিয়ে মার খান দুই কনস্টেবল। শেষমেশ হাসপাতালে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে লাঠি চালিয়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। হামলায় জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় পাঁচ জনকে।
হামলাকারীদের হাতে জখম চিকিৎসক।
মৃতের নাম কার্তিক মণ্ডল (২২)। বাড়ি বসিরহাটের ময়লাখোলা গোডাউনপাড়ায়। এ দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ তাঁকে ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। তার আধ ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান কার্তিক।
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিকেলে অনেকের সঙ্গে সরস্বতী প্রতিমা বিসর্জন দিতে যাচ্ছিলেন কার্তিক। অসর্তকতায় রেললাইন পেরনোর সময়ে হাসনাবাদগামী একটি ট্রেনের ধাক্কায় মাথায় গুরুতর চোট পান তিনি। জরুরি বিভাগে আনার সময়ে তাঁর মাথা দিয়ে প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। সেই সময়ে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ছিলেন চিকিৎসক হরিপদ মণ্ডল। তিনি দ্রুত চিকিৎসা শুরু করেন। কার্তিকের অবস্থা দেখে ডেকে পাঠান আর এক চিকিৎসক কানুপদ পণ্ডিতকে। কানুপদবাবু আসার আগেই অবশ্য কার্তিককে ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে স্যালাইন, অক্সিজেন দিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া হয় এবং তাঁর অবস্থা যে সঙ্কটজনক, তা পরিবারের লোকজনকে জানিয়ে দেওয়া হয় বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। কিন্তু কার্তিককে বাঁচানো যায়নি।
ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে চিকিৎসকেরা কার্তিকের মৃত্যুর খবর দেওয়া মাত্র এক দল লোক চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে জরুরি বিভাগ এবং সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের যাবতীয় আসবাবপত্র এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। দু’জায়গার রোগীরাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কয়েক জন রোগীও মার খান। হামলাকারীরা কানুপদবাবু এবং হরিপদবাবুর উপরে চড়াও হয়। কানুপদবাবুর মাথায় আঘাত লাগে। তিনি ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলাকারীদের ঠেকাতে গিয়ে প্রহৃত হন পাঁচ স্বাস্থ্যকর্মী। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে হাসপাতালে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা এগিয়ে আসেন। তাঁদেরও মারধর করে হামলাকারীরা। অসীম ঘটক এবং মানস মুখোপাধ্যায় নামে দুই কনস্টেবল জখম হন। অসীমবাবুর মাথা ফাটে। তাঁকেও ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
জখম পুলিশও।
এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের কর্মীরা থানায় খবর দেন। বসিরহাট থানার সাব-ইন্সপেক্টর প্রফুল্ল কুমার সাউয়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী হাসপাতালে এসে লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত পর্যন্ত মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৃতের পরিবারের এক জন বলেন, “ঠিকমতো চিকিৎসা না করার জন্যই কার্তিককে বাঁচানো গেল না। চিকিৎসকদের সঙ্গে আমরা যখন কথা বলছিলাম, তখন কিছু লোক উত্তেজিত হয়ে পড়ে হামলা চালায়। তারা কারা আমি জানি না।”
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন প্রহৃত দুই চিকিৎসকই। হরিপদবাবুর দাবি, “হাসপাতালে আনার সঙ্গে সঙ্গেই ওই যুবকের চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু তাঁর অবস্থা সঙ্গিন ছিল। সে কথা তাঁর পরিবারের লোকজনকে জানিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু যুবকের মৃত্যুর পরেই আমাকে বেধড়ক মারধর করা হল।” একই দাবি কানুপদবাবুও। তিনি বলেন, “আমার তখন হাসপাতালে থাকার কথা ছিল না। তা সত্ত্বেও জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে এসে যুবকের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা করি। তার পরেও মার খেলাম।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে হামলার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বসিরহাট থানায়। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার বিকাশচন্দ্র গাইন বলেন, “চিকিৎসায় গাফিলতি হয়নি। তা সত্ত্বেও এ ভাবে হামলায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন চিকিৎসকেরা। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে পুলিশের কাছে।” পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

ছবি: নির্মল বসু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.