হাসপাতাল বলেছিল মৃত। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সেই রোগীই হাত নাড়িয়েছে, এমন দাবি তুলে এবং গাফিলতির অভিযোগে হাসপাতালে ভাঙচুর চালালেন মৃতের আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা। সোমবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। এ দিন কার্যত লন্ডভন্ড করে দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। রোগীর দেহ নিয়ে হাসপাতালের চার তলায় মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে বিক্ষোভও দেখানো হয় দীর্ঘক্ষণ। মৃত রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশ বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত কোনও অভিযোগ হয়নি।
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় পুরুলিয়া শহরের নিমট্যাঁড় এলাকার বাসিন্দা বিনোদ বাউরিকে (১৪)। তার বাবা, পেশায় দিনমজুর পুলক বাউরি জানান, রবিবার ভোর থেকেই বিনোদের পেটে ব্যথা হচ্ছিল। যন্ত্রণা অসহ্য হয়ে ওঠায় এ দিন দুপুরে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেই সময় জরুরি বিভাগে কর্ত্যরত ছিলেন মদন কিস্কু নামে চিকিৎসক। পুলকবাবুর দাবি, “মদনবাবু ছেলেকে পরীক্ষা করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ও মারা গিয়েছে। আমরা ওর দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরি। কিন্তু হঠাৎই ওর হাত নড়ে ওঠে।” |
এর পরেই বিনোদের ‘দেহ’ নিয়ে আত্মীয়স্বজন ও এলাকার লোকজন হাসপাতালে এসে জরুরি বিভাগে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করেন। তছনছ করা হয় ওই বিভাগের আসবাব ও নথিপত্র। ঘণ্টাখানেক ধরে কার্যত ‘তাণ্ডব’ চলে সেখানে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। অভিযোগ, চিকিৎসক মদনবাবুকে শারীরিক নিগ্রহও করা হয়। দৃশ্যতই আতঙ্কিত ওই চিকিৎসকের দাবি, প্রথমবার জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার আগেই ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছিল। মদনবাবু বলেন, “প্রয়োজনীয় সমস্ত পরীক্ষা করে অন্য এক চিকিৎসক ডেকে নিয়ে আসি। তিনিও নিশ্চিত হওয়ার পরেই জানিয়েছিলাম ছেলেটি মারা গিয়েছে।” ময়নাতদন্ত না করে দেহ ছাড়া হল কেন? মদনবাবুর দাবি, “নিয়ম অনুযায়ী ময়নাতদন্তের পরেই দেহ ছাড়ার কথা। কিন্তু ওই কিশোরের আত্মীয়েরা কখন দেহ নিয়ে চলে গিয়েছেন, বুঝতেই পারিনি।”
বিক্ষোভ-ভাঙচুরের ঘটনার পরে নিরপত্তাহীনতায় ভুগছেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। পুরুলিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিশিকান্ত হালদার বলেন, “ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি সম্পর্কে বিশদে খোঁজ নিচ্ছি।”
অন্য দিকে, এ দিন সন্ধ্যায় দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত স্থানীয় এক যুবকের মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালের বিরুদ্ধে। জরুরি বিভাগ ও সার্জিক্যাল বিভাগে ভাঙচুর চালায় যুবকের সঙ্গে আসা লোকজন। প্রহৃত হন দুই চিকিৎসক এবং পাঁচ স্বাস্থ্যকর্মী। বাধা দিতে এসে দুই কনস্টেবলও আহত হন। শেষে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে লাঠি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। হামলার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় পাঁচ জনকে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের দাবি, আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই যুবককে আনা মাত্র চিকিৎসা শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি ছিল না। |