একটি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত, আর তার জেরে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা নিজেই ঝুলি থেকে বার করে দিলেন বেড়াল! জানালেন, উত্তর ২৪ পরগনায় সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের জন্য মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার (এমসিআই) ছাড়পত্র আদায়ে আর লুকিয়ে ধার করা পরিকাঠামোর ‘কুমির ছানা’ দেখানো নয়, খোলাখুলি সরকারি অনুমতি নিয়েই শ্রম দফতরের কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালের শয্যা ধার নিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর! এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, বুক ফুলিয়ে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়াকে সে কথা জানিয়ে নতুন মেডিক্যাল কলেজের অনুমতি আদায় হবে!
সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তাপস ভট্টাচার্য সোমবার স্বাস্থ্যভবনে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদ ছাড়তে চাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি জানান, তাঁকে এমন একটি নতুন মেডিক্যাল কলেজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যার কোনও পরিকাঠামোই তৈরি হয়নি। ১০০ জন ছাত্রছাত্রী কার্যত জলে পড়েছেন। বারবার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিভাগ তৈরি, চিকিৎসক-সহ বিভিন্ন কর্মী নিয়োগ, হস্টেল কিছুই করেনি স্বাস্থ্য দফতর। এখন জোর করে এই মেডিক্যাল কলেজের জন্য অনুমতি আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাপসবাবুর।
এক বছর হতে চলেছে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের। নিয়মানুযায়ী, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই যে কোনও দিন এমসিআই-এর প্রতিনিধিরা মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শনে আসবেন। পরিকাঠামো দেখে পছন্দ না হলে তাঁরা এখনও নতুন মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন বাতিল করতে পারেন। তাপসবাবুর কথায়, “সঠিক ভাবে মূল্যায়ন হলে এই মেডিক্যাল কলেজ অনুমতি পেতে পারে না। সকলের চোখে ধুলো দেওয়া হচ্ছে। এখানে কিছুই তৈরি হয়নি। সরকারও পুরোপুরি উদাসীন। চূড়ান্ত অসহযোগিতা পেলাম বলে আমি আর কাজ করতে চাই না। তাই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।”
তাপসবাবুর পদত্যাগপত্র নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়েই স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ থেকে বেরিয়েছে অন্য ‘সত্য’। প্রথমে সুশান্তবাবু বলেন, “কেউ ইস্তফা দিতেই পারেন। তাতে কোনও মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ হবে না। আমরা ঠিক এমসিআইয়ের অনুমতি বার করে আনব।” কিন্তু কী ভাবে সেটা আদায় হবে? যেখানে দরকার ন্যূনতম ৩৫০টি শয্যা, সেখানে সাগর দত্তে রয়েছে মাত্র ১৩১টি। সুশান্তবাবুর ঝটিতি জবাব, “পাশেই কামারহাটি ইএসআই। আমরা সরকারি অনুমতি পেয়ে গিয়েছি। ওদের শয্যাগুলিকেই সাগর দত্তের শয্যা বলে দেখিয়ে দেব।” কিন্তু সেটা তো বেআইনি? স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা উত্তর দেন, “বেআইনি কীসের? সবাই এ রকম করে। এমসিআইয়ের কোনও আপত্তি নেই, সেখানে অন্যদের আপত্তি কেন? সাগর দত্তে কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। যখন কাজ শেষ হয়ে যাবে, তখন আর আমাদের কিছু ধার নিতে হবে না।”
ইএসআই-এর ডিরেক্টর দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই চুক্তির কথা স্বীকার করে বলেছেন, “বিশেষ প্রয়োজনে শুধু কামারহাটি ইএসআই-এর ক্ষেত্রে এই নির্দেশ জারি হয়েছে।” তা হলে কি এ বার থেকে কোনও নতুন মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামোয় ঘাটতি হলে এ ভাবেই খোলাখুলি অন্য হাসপাতাল থেকে তা ধার নেওয়া হবে? স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, সে ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের রাখাও হচ্ছে ইএসআই কামারহাটির কর্মী হস্টেলে। সাগর দত্তে ২০১১-র ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত ৯০ জন শিক্ষক-চিকিৎসক থাকার কথা হয়। সেখানে ছিল মাত্র ৫৫ জন। ৭৬ জন করণিকের পদে এ পর্যন্ত নিয়োগ হয়েছেন মাত্র ৯ জন। স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজনের অর্ধেকও নেই। ফার্মাকোলজি, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ফরেন্সিক মেডিসিনের বিভাগই তৈরি হয়নি। আপাতত শ্রম দফতরের হাসপাতালকে দেখিয়েই তাই মেডিক্যাল কলেজের যাবতীয় ত্রুটিতে পর্দা দিতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর। |