|
|
|
|
অযথা দোষারোপ নয় মমতাকে, কর্মিসভায় পরামর্শ গৌতমের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক পদে আসীন হয়েই ‘দায়িত্বশীল’ বিরোধী নেতার ভূমিকা পালনের চেষ্টা শুরু করে দিলেন সিপিএম নেতা গৌতম দেব।
সোমবার কামারহাটিতে এক কর্মিসভায় গৌতমবাবু বলেন, হাসপাতালে শিশু মারা গেলেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর দোষ চাপানো ঠিক নয়। একই ভাবে সরকার ভুল করলে যাতে কথায় কথায় পার্টি কর্মীরা বন্ধ-অবরোধ না করেন, সে ব্যাপারেও সতর্ক করে দেন তিনি। কলেজে গণ্ডগোল হলেই ভাঙচুর বা সরকারের উপর দোষ না চাপিয়ে বরং প্রয়োজনে ‘সহযোগিতা’ করার উপরেও জোর দেন গৌতমবাবু। তবে মুখ্যমন্ত্রীকেও বিভিন্ন ব্যাপারে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আবেদন জানান রাজ্যের এই প্রাক্তন মন্ত্রী।
সিপিএমের একটি বড় অংশ মনে করছে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই পুরোপুরি মমতা-বিরোধিতায় নামা উচিত। কিন্তু সেই মতকে তিনি যে পুরোপুরি সমর্থন করছেন না, গৌতমবাবুর বক্তব্যে সেই ইঙ্গিত মিলেছে। তিনি বলেন, “কলেজে গন্ডগোল হচ্ছে। হাসপাতালে শিশু মারা যাচ্ছে। কিন্তু কিছু হলেই মমতা দায়ী, এটা ঠিক নয়। আমাদের রাজ্য স্বাস্থ্য পরিষেবায় এগিয়ে। কিন্তু প্রতি বছরই কিছু শিশু মারা যায়। কিছু হলেই চিকিৎসকদের উপর চড়াও হওয়া, হাসপাতাল ভাঙচুর করা, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করা ঠিক নয়।” |
|
পানিহাটির সভায়। ছবি: বিতান ভট্টাচার্য |
রাজ্যে একের পর এক কৃষকের আত্মহত্যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শাসক ও বিরোধীদের জোর বিতর্ক বেধেছে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র যে ভাষায় সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করছেন, গৌতমবাবুর ভাষা তার থেকে ভিন্ন। কৃষক-আত্মহত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যাঁরা আত্মহত্যা করছেন, তাঁরা মনের দিক থেকে কমজোরি। আমরাই বা তাতে উৎসাহ দেব কেন?” পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তাঁর প্রশ্ন, “মমতাই বা বারবার বলেন কেন বেশিরভাগ কাজ হয়ে গিয়েছে! গুঁতোগুঁতি করে শেষ দু’বছর আমাদের সরকারকে কোনও কাজই করতে দেননি।” কৃষক আত্মহত্যা নিয়ে সরাসরি মমতাকে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরামর্শ গৌতমবাবু দেননি ঠিকই, কিন্তু কৃষকের আত্মহত্যা-বন্ধে তিনি যে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান, তা স্পষ্ট। গৌতমবাবুর
কথায়, “পরিবহণ কর্মীরা আত্মহত্যার
পরে বিরোধীদের আলোচনায় ডাকলেন। এখন অন্য সমস্যার ব্যাপারে আলোচনায় ডাকবেন কি না, তা ওঁকেই (মমতা) ঠিক করতে হবে।”
মানুষ যে ভোট দিয়ে তাঁদের বিরোধী আসনে বসিয়েছেন, দলীয় কর্মীদের তা মাথায় রাখার পরামর্শ দেন গৌতমবাবু। তিনি বলেন, “সরকার ভুল করলে মানুষকে পাশে নিয়ে আন্দোলন করতে হবে। কিন্তু তা বলে পথে-ঘাটে বন্ধ-অবরোধ করলে জনগণকেই অসম্মান করা হবে। আয়নায় প্রথমে নিজেদের মুখ দেখতে হবে। নিজেদের শোধরাতে হবে।”
দলের ‘শুদ্ধকরণ’ প্রক্রিয়া যে তাঁর নেতৃত্বে ত্বরান্বিত হবে, তা বুঝিয়ে দিতে গৌতমবাবু বলেন, “আমাদের দলে কিছু অতিসক্রিয় লোক রয়েছেন। তাঁদের নানা কাজে মানুষ বিরক্ত। সেই সব লোকেদের আমরা বাদ দিচ্ছি। যেমন জঙ্গলমহলে লোকের রোজগার-পাতি নেই। অথচ নেতার প্রাসাদোপম বাড়ি। মানুষ এটা মেনে নেবে?” ব্রিগেড সমাবেশকে সফল করতে তাঁর নেতৃত্বে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে দু’লক্ষ মানুষ আসবেন, তা জানিয়ে গৌতমবাবু বলেন, “সিঁথি থেকেই পায়ে হেঁটে ৫০ হাজার মানুষ আসবেন। কী ভাবে বাংলার উপকার হবে, আমরা ব্রিগেড থেকে সে কথাই বলতে চাই। রাইটার্সে রোজ রোজ গান-বাজনা করলে তো হবে না! মমতাকে কাজ করতে হবে। আমরা চাই উনি পুরো পাঁচ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকুন।” |
|
|
|
|
|