স্কুল পরিচালন সমিতির গঠন নিয়ে মতানৈক্য। আর তাই চার ঘণ্টা তালাবন্দি করে রেখে দেওয়া হল প্রধান শিক্ষককে। নদিয়ার মাজদিয়া, মদনপুরের পরে তালিকায় এ বার ওই জেলারই আসাননগর স্কুল। সোমবারের ওই ঘটনায় ফের অভিযোগের আঙুল উঠল তৃণমূলের দিকে। নদিয়া জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস অবশ্য দাবি করেছেন, “ওই প্রধান শিক্ষক সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ করছিলেন।”
দিনকয়েক আগে মদনপুর স্কুলেও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনায় স্থানীয় বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান নরেশ চাকি দলীয় কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। একের পর এক শিক্ষক-নিগ্রহে তৃণমূলের কর্মীদের নাম জড়িয়ে যাওয়া সত্ত্বেও নেতাদের ‘প্রতিক্রিয়া’য় ‘আতঙ্কিত’ জেলার শিক্ষক মহল। আসাননগর স্কুলেরই এর শিক্ষকের কথায়, “স্কুলে আসা আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
ওই স্কুলে ১১ ডিসেম্বর পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন হয়েছে। ৬টি আসনেই জিতেছেন তৃণমূল মনোনীত প্রার্থীরা। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক এখনও নতুন কমিটি গড়েননি। সদ্য নির্বাচিত এক সদস্য দীনবন্ধু ঘোষের কথায়, “প্রধান শিক্ষক সিপিএমের লোক। তিনি ইচ্ছে করে কমিটি গঠন করেননি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটি গড়া হলে পুরো প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যাবে।” তাঁদের অভিযোগ, নির্দিষ্ট নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক ‘বেআইনি ভাবে’ ‘ডোনার মেম্বার’ বা দাতা সদস্য নির্বাচিত করতে চাইছেন। জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, “যা করার নিয়ম মেনেই করতে হবে।”
স্কুলের তহবিলে যাঁরা ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা দান করেন তাঁদের দাতা সদস্য করা হয়। প্রতি বছর ওই দাতা সদস্যদের মধ্যে এক জন পরিচালন সমিতির সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। সেই মনোনয়ন নিয়েই বিতর্ক। তৃণমূলের নেতার স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষক শিশির বিশ্বাসের ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন বলে অভিযোগ। সেখানে ছিলেন কৃষ্ণনগর-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি শৈলেন ঘোষ, স্থানীয় আসাননগর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গোপাল ভঞ্জ। গোপালবাবুর অভিযোগ, “পরিচালন সমিতিতে এক জন দাতা সদস্য দু’বার নির্বাচিত হতে পারেন না। প্রধান শিক্ষক গত বারের সদস্যকে ফের নির্বাচিত করতে চাইছেন।”
শিশিরবাবু বলেন, “এ বারের পরিচালন সমিতির জন্য স্কুল পরিদর্শক যাঁর নাম পাঠিয়েছেন, তিনি গত বারের মনোনীত সদস্য। স্কুল পরিদর্শকের কাছে বিভ্রান্তি কাটাতে চিঠি দিয়েছি। উত্তর পাইনি। ফলে, সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।” কিন্তু তৃণমূলের দাবি, তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা নিরঞ্জন রায়কে দাতা সদস্য হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। শিশিরবাবু বলেন, “প্রায় ৪ ঘণ্টা তালা বন্ধ রাখা হয়। চাপের কাছে বাধ্য হয়ে হার মানতে হল।” |