উৎসবের আলোয় ‘অচেনা’ কুপিলা
কুপিলাকে ‘অচেনা’ লাগছে।
বোমা, শটগান থেকে ছিটকে আসা গুলি, সাঁঝ নামলে ঘরের লোক না ফিরলে চাপা পিসফাস, উৎকণ্ঠাসেই কুপিলা এখন ‘হাত ধরাধরি’ করে চলছে।
ডোমকলের এই ‘খুনে’ গ্রামের কুপিলা উন্নয়ন সঙ্ঘ গত ২৬ জানুয়ারি থেকে তিন দিনের সম্মিলনী উৎসব করল। যেখানে সব রাজনীতির রং মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে। অচেনা লাগছে তাই কুপিলাকে।
জানুয়ারির শুরু থেকেই চলছিল নানান খেলা ও সাস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে সাধারনতন্ত্র দিবসের দিন মহকুমা পুলিশের আধিকারিক ও ডোমকলের আইসিকে তাঁর দল নিয়ে নামতে দেখে অবাক হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। অবাক হওয়া এখানেই শেষ নয়। গত ও তার আগের গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে কুপিলা সিনিয়র মাদ্রাসা ময়দানে জখম হয়েছিলেন প্রায় ১০ জন এবং প্রতিটা নির্বাচনে বোমাবাজি ছিল বাঁধাধরা। শেষ ১৫ বছর ধরে পরিস্থিতি এতটাই বিগড়েছে যে অন্য দলের বলে প্রতিবেশির সঙ্গে কথা বলাও ছিল বন্ধ।
সম্মিলনী উৎসবে মোটরবাইক রেস। ছবি: বিশ্বজিৎ রাউত।
সেখানে কংগ্রেস সাংসদ মান্নান হোসেন এবং সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমানের একসঙ্গে উপস্থিত হওয়া রীতিমতো তাক লেগে গিয়েছে গ্রামবাসীদের। এত দিন ওই মাদ্রাসা ময়দানে নির্বাচন হোক বা সরকারি কাযতর্ম সবেতেই বিবাদে জড়িয়ে পড়ত গ্রামবাসী। উন্নয়ন সঙ্ঘের সদস্য বাবলু মণ্ডল বলেন, “এত দিন গ্রামবাসীরা কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারত না। কিন্তু এই বাধা কাটিয়েছি আমরা।” সঙ্ঘের সম্পাদক মহফুজুর রহমানও বলেন, “মানুষ প্রথমে আমাদের ঘাবড়ে দিয়েছিল। বলছিল, নেতারা আসছে আবার গণ্ডগোল হবে। গ্রামের মানুষের কাছে মার খেয়ে পুলিশ নিশ্চয় বন্ধুত্ব করতে আসবে না। সব শুনে হতাশ হয়েছিলাম। কিন্তু ২৬ জানুয়ারির পরে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছি।”
ওই গ্রামের রাস্তা এখনো পাকা হয়নি। শিক্ষার হারও ৪০ শতাংশের নীচে। রাজনৈতিক কারণে বহুদিন ধরেই বিভক্ত গ্রামের মানুষ। অথচ সম্মিলনী উৎসবে প্রত্যেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নিলেন প্রতিযোগিতায়। মান্নান হোসেনের কথায়, “এখানে পৌছবার আগেও ভাবিনি কুপিলা এ ভাবে এক হতে পারে। এ বার মনে হচ্ছে বদলাবে কুপিলা। উন্নয়ন সঙ্ঘের হাত ধরেই উন্নয়ন হবে এই গ্রামে।” আনিসুর রহমানও খুশি কুপিলার এই বদলে। তিনি বলেন, “প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন অনেক জায়গায় নিমন্ত্রণ থাকা সত্বেও কুপিলায় গিয়েছিলাম। মানুষ মিলেমিশে উৎসব করছে এই ছবিটাই তো আমরা দেখতে চাই। নতুন প্রজন্মের হাত ধরে এই গ্রাম আবার তার পুরোনো ঐতিহ্য খুঁজে পাবে।” গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক আব্দুল জলিল বিশ্বাস বলেন, ‘‘অনেকদিন ধরে আমাদের গ্রাম রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। আমরা না পারলেও নতুন প্রজন্ম সকলকে এক ময়দানে এনেছে। আমরা অনের ধন্যবাদ জানাই তাঁদের।” রায়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জান মহম্মদ মণ্ডলও বলেন, “আমার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ওই গ্রাম নিয়ে অনেক নালিশ শুনেছি। কিন্তু উৎসবের তিন দিন সেই চেনা ছবিটা আর মেলাতে পারিনি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.