পোড়ামাতলা রোড। নবদ্বীপ শহরের শিরদাঁড়া। দীর্ণ সেই রাস্তা ফের আগের চেহারা ফিরিয়ে দিতে মাস কয়েক আগে সংস্কারে হাত দিয়েছিল পূর্ত দফতর। শুরু হয়েছিল কাজ, খোয়া পড়া, রাস্তার দু-পাশে বালি ও স্টোন চিপসের উপুর করা স্তুপ, রোড রোলারের আনাগোনাচেনা চিত্র দেখতে শুরু করেছিল পোড়ামাতলা রোড। অন্তত দু দশক পরে।
কিন্তু সে ‘ছদ্ম-প্রস্তুতি’ সামান্য দিন তিনেকের। কাজ বন্ধ হতে দেরি হয়নি। তারপর থেকে বালি, ইটের স্তুপ, স্টোন চিপস পড়ে রয়েছে রাস্তার দু-ধারে। এখনও। ভিড়ে বোঝাই রাস্তা আরও শীর্ণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কাজ এগোয়নি এতটুকুও। কেন?
পূর্ত দফতরের (সড়ক) বর্ধমান ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার দেবব্রত দাস বলেন, “ওই রাস্তার উপরে বালি-পাথর বা অন্যান্য যন্ত্রাংশ পড়ে থাকার তো কথা নয়, রাস্তা সংস্কারের কাজ তো দ্রুত শুরু হওয়ার কথা।” তবে কেন তা হচ্ছে না নির্বিকার গলায় ‘দেখছি’ গোছের আশ্বাসের বাইরে তাঁর কাছে কিছুই মেলেনি।
চাপানউতোর আছে, পুরসভা এবং পূর্ত দফতরের মধ্যে। কিন্তু সমাধান নেই। কেউই জানেন না ক্রমশ অগম্য হয়ে ওঠা পোড়ামাতলা রোড কবে ফের চলাচল-যোগ্য হবে। তবে আশ্বাস আছে। নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, “পূর্ত দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওঁরা বলছেন শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। কাজ শুরু হলে হয়তো সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে।” তবে কাজে হাত পড়লেও তা যে দ্রুত শেষ হবে না, নবদ্বীপ শহরের মানুষের অন্তত তা অজানা নয়! |
নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব বলেন, “নবদ্বীপ শহরের অর্থনৈতিক-ভৌগোলিক-ধর্মীয়-সব কিছুর কেন্দ্র পোড়ামাতলা। আর তাকে ঘিরেই ওই রাস্তা। পোড়ামাতলাকে ঘিরে নবদ্বীপ এবং লাগোয়া গ্রামাঞ্চলের মানুষের রুজি-রোজগার নির্ভর করে। জড়িয়ে রয়েছে পর্যটন অর্থনীতিও। এই ধরণের একটি ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সংস্কার করতে গেলে কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া। তা হয়নি। উল্টে রাস্তা মেরামত হবে বলে শহরটাকে আরও ঘেঁটে দেওয়া হয়েছে যেন!”
প্রাচীন এই শহরের রাস্তাঘাট সংকীর্ণ, গলিঘুঁজিতে ঠাসা। পাশাপাশি শীতের মরশুমে প্রতি দিন বহিরাগত পর্যটকদের ভিড় রয়েছে। রয়েছে মোটরবাইক, রিকশা, যন্ত্রচালিত ভ্যান-সহ অন্যান্য যানবাহনের ক্রমবর্ধমান চাপ। এই অবস্থায় পোড়ামাতলাকে পূর্ত দফতরের গুদাম-ঘর বানানো ঘিরে ক্ষুব্ধ স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল। পোড়ামা প্রাঙ্গণ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বলাই গোস্বামী বলেন, “প্রায় এক মাস ধরে ভোগান্তি সইতে হচ্ছে। রাস্তা বন্ধ হয়ে থাকায় বেচাকেনাও লাটে উঠেছে।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তায় পড়ে থাকা উজাড় করা জিনিষের আড়ালে হারিয়ে গিয়েছে বাস স্ট্যান্ড, পোড়ামাতলা রিকশা স্ট্যান্ডও। স্থানীয় রিকশাচালক গোবিন্দ দাস বলেন, “৩০ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছি এই স্ট্যান্ডে। এই প্রথম রাস্তার জন্য রুজি-রুটি বন্ধ হতে বসেছে।” কেউ জানে না ফের কবে ফের কবে নবদ্বীপের শিড়দাঁড়া সোজা হবে! |