বহরমপুরে অস্বাভাবিক রিকশার ভিড়, ভাড়াও।
যা নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে চালকের বচসা প্রায় নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কথা কাটাকাটি কখনও হাতাহাতিতেও গড়াচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদাদের কথায়, এখন রিকশায় উঠতেই ভয় লাগে। ভাড়া নিয়ে এই বুঝি ‘যুদ্ধ’ শুরু হল! কিন্তু সব জেনেও পুরকর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। তাঁরা বলছেন, ‘এ ব্যাপারে পুর উদ্যোগ না থাকাতেই বিষয়টা ক্রমশ জটিল হয়ে পড়ছে।’
বহরমপুর স্টেশন থেকে গোরাবাজার নিমতলা মোড়ের ভাড়া ১০ টাকা। ছ-মাস আগেও রিকশা চালকেরা ওই ভাড়াই যেতেন। পুজোর পর থেকেই ওই ভাড়া দিনের বেলায় বেনে দাঁনিয়েছে ২০ টাকা। রাতে তা কখনও ৩০ টাকা কখনও বা ৪০টাকা। যাত্রী বুজে দর হাঁকেন রিকশা চালকেরা। এ’টা নিছকই একটা উদাহরণ। শহরের যে কোনও প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যে ভাড়া গুনতে হত পুজোর সময়ে তা এখন তিন তেকে চার গুন বেনে গিয়েছে। |
কেন? প্রশ্ন করলে রিকশাচালকদের কাছ থেকে শুনতে হয়, জিনিষ পত্রের দাম বেড়েছে। কিন্তু তা বলে ১০ টাকা ভাড়া ৩০ টাকা? উত্তর মেলে, ‘পোষালে যান। না হলে নেমে যান।’ বিষয়টি বহরমপুর পুর-কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। বহরমপুর পুরসভার পক্ষ থেকে অবশ্য রাতে স্টেশন থেকে শহরের রাস্তায় বাস সার্ভিস চালু হয়েছিল। কিন্তু তাতেও ভাড়া কমেনি।
স্কুল শিক্ষিকা উত্তরা প্রামাণিকের অভিজ্ঞতা, “স্কুলে যাওয়ার জন্য বাস ধরতে প্রতি দিন গোরাবাজারের বাড়ি থেকে গির্জার মোড়ে যেতে হয়। পুরসভার ধার্য করা ভাড়া ৯ টাকা। কিন্তু ২০ টাকার নিচে কেউ যেতে চায় না। পুরসভার ভাড়ার তালিকা দেখালে ‘ওই দিকে তাকিয়ে লাভ নেই’ বলে চালকরা পাল্টা শুনিয়ে দেয়। এমনকী বাবার বাড়ি সৈদাবাদ যাতায়াত করতে খরচ হয় ৮০-৯০ টাকা। এদিকে ট্রেনে কলকাতা যেতে খরচ ২৬ টাকা।”
ভাড়া বৃদ্ধির সঙ্গে গত দু-বছরে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রিকশার সংখ্যা, যার অধিকাংশই অবশ্য লাইসেন্স বিহীন। বহরমপুর রিকশা চালক সমিতিও তা মানছে। সমিতির সভাপতি শান্তিপদ দত্ত বলেন, “বহরমপুরের যত সংখ্যক রিকশা চলে, তার চার গুণ বেশি রিকশা পঞ্চায়েত এলাকা থেকে আসে। অধিকাংশই বেআইনি। কোনও লাইসেন্স নেই। এই রিকশা চালকদের মধ্যে বেশি ভাড়া নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে।”
এর আগে ২০০৯ সালে রিকশা চালক সমিতির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে পুর-এলাকায় রিকশা ভাড়ার তালিকা তৈরি করেছিল বহরমপুর পুরসভা। পরে ২০১০ সালে পুজোর মুখে তা কার্যকরী হয়। শান্তিপদবাবু বলেন, “বছর দুয়েক আগে রিকশার ন্যূনতম ভাড়া ধার্য হয়েছিসল ৫ টাকা। কিন্তু গত দু-বছরে দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়েছে। কিন্তু সেই বাজার-দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আলোচনার মাধ্যমে নতুন রিকশা ভাড়ার তালিকা তৈরি করেনি পুরসভা। ফলে রিকশা চালকদের মধ্যে এখন যেমন খুশি ভাড়া নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। যদিও ভাড়া নিয়ে সমস্যা তৈরি করেছে পঞ্চায়েত এলাকা থেকে আসা রিকশা চালকেরা। তা দেখে বহরমপুরের চালকরাও যেমন খুশি ভাড়া নিতে শুরু করেছে।”
তাঁর অভিযোগ, “রিকশা চালক এবং যাত্রীদের মধ্যে সুষ্ঠু সম্পর্ক থাকুক এটা পুরসভা চায় না বলেই আলোচনার মাধ্যমে নতুন ভাড়ার তালিকা তৈরি করছে না। এ দিকে দু-বছর আগে ভাড়ার তালিকা করে দিয়েছি বলে নিজেদের দায় এড়িয়ে সাধারণ নাগরিকদের চোখে রিকশা চালকদের ভিলেন বানাচ্ছে। এদিকে রিকশার বাজার নষ্ট করে লছিমন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহরে। তারও লাগাম টানা হয়নি।”
বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সোমেশ রায় বলেন, “বহরমপুরে এক শ্রেণির রিকশা চালক রয়েছে, যারা নিয়ম-নীতির কোনও তোয়াক্কা করে না। তাদের মধ্যেই ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি করার প্রবণতা লক্ষ্য করি। এদের উপরে পুরসভারও কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে ওই সুযোগ গ্রহণ করে তারা। এ জন্য স্বর্ণময়ী বকুলতলা থেকে কৃষ্ণনাথ কলেজ যাওয়ার ভাড়া ১০ টাকার বদলে তিন গুণ ভাড়া চায়।” খাগড়ার ব্যবসায়ী দেবাশিস মজুমদার বলেন, “বহরমপুরে রিকশার কোনও নির্দিষ্ট ভাড়া নেই। কত ভাড়া নেবে তা নির্ভর করে চালকদের মর্জির উপরে। পুরসভার ভাড়ার তালিকা কবেই তারা আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। বেশি ভাড়া চাইলে বা অভব্য আচরণ করলে রিকশার নম্বর দিয়ে অভিযোগ জানালেও কোনও ফল হয় না বলে চালকদের মধ্যে এখন গা-জোয়ারি ভাব।”
পুরপ্রধান নীলতরম আঢ্য বলেন, “রিকশা ভাড়ার সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে মেটানো হবে। তবে রিকশা ভাড়া সম্বন্ধে পুরনাগরিকদের কাছ থেকে কোনও অভিযোগ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুরপ্রধান বলেন, “বেআইনি রিকশা রুখতে প্রশাসনের সাহায্য প্রয়োজন। কিন্তু প্রশাসনের কোনও সাহায্য পাই না।” |