ছিল স্কুল, হয়ে গেল ভোজবাড়ি
ছিল স্কুল হয়ে গেল বিয়েবাড়ি!
স্কুলের পঠনপাঠন শিকেয় তুলে সোমবার নিমন্ত্রিতদের জন্য বেছে নেওয়া হল স্কুল বাড়ি। আর সকালে বইখাতা নিয়ে স্কুলে এসে পড়ুয়ারা দেখল, আস্ত স্কুলবাড়িটাই হয়ে গিয়েছে ভোজবাড়ি।
বহরমপুর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অযোধ্যানগর কমলা বিদ্যাপীঠ। দোতলা বাড়িটার দু’টো তলায় সকাল-বিকেল মিলিয়ে দু’টি প্রাথমিক স্কুল চলে। দু’টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের দাবি, বিয়ে বাড়ি হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি না দেওয়া সত্ত্বেও এ দিন সকাল থেকে শামিয়ানা খাটিয়ে প্রীতিভোজের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছিল। সে কি? প্রীতিভোজ যে পাত্রীর তাঁর বাবা অশোককুমার রক্ষিত। নির্বিকার গলায় তিনি বলছেন, “প্রীতিভোজের অনুষ্ঠান করার জন্য লিখিত অনুমতি নিইনি ঠিকই। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম। উনি তো মৌখিক অনুমতি দিয়েওছিলেন।”
প্রধান শিক্ষক বিপ্লব মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্কুলের মাঠে অনুষ্ঠান করতে চেয়ে অশোকবাবু আমার কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন। আমি তাঁকে লিখিত আবেদন করতে বলেছিলাম।
স্কুল এখন রান্নাঘর। সরজমিনে স্কুল পরিদর্শক। নিজস্ব চিত্র।
পরিচালন সমিতি ঠিক করত স্কুল দেওয়া যাবে কিনা। কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা করেননি অশোকবাবু। এ দিন স্কুলে এসে দেখি প্রীতিভোজের আসর বসে গিয়েছে।” তার পরও তাঁরা ওই অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেননি কেন? বিপ্লববাবু এ বার আমতা আমতা করে জানিয়েছেন, “জানাবো তো!” একতলায়, সকালে যে স্কুল চলে তার শিক্ষিকা সাহনাজ বেগম বলেন, “অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় এ দিন সকাল সাড়ে ১০টার বদলে ৯টায় স্কুল ছুটি দিয়ে দিতে হল।”
মুর্শিদাবাদ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সাগির হোসেন অবশ্য ঘটনাটি ভাল চোখে দেখছেন না। তিনি বলেন, “বিদ্যালয় সংসদের অনুমতি ছাড়া বিদ্যালয়ে ভাড়া দেওয়া চলে না। পঠনপাঠন বন্ধ রেখে প্রীতিভোজের অনুষ্ঠান করার তো প্রশ্নই ওঠে না। অথচ ওই বিষয়ে স্কুলের শিক্ষকরাও আমাদের কিছু জানাননি। সহকারি বিদ্যলয় পরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তদন্তের।”
সরজমিনে তদন্তের পরে বহরমপুর সদর চক্রের সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক জিয়াউল ইসলাম বলেন, “অনুমতি ছাড়াই ওই স্কুলে বিয়ের প্রীতিভোজের অনুষ্ঠান করায় এ দিন সেখানে পঠনপাঠন বন্ধ ছিল। অথচ সেই বিষয়ে শিক্ষকদের তরফ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে, অথবা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে জানানো হয়নি।”
বহরমপুর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কউন্সিলর উত্তম সাহা পদাধিকার বলে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষা কমিটির সভাপতি। উত্তমবাবু বলেন, “প্রীতিভোজের জন্য স্কুল ব্যবহারের বিষয়ে আমার কাছ থেকেও কেউ কোনও রকম অনুমতি নেয়নি। কোনও শিক্ষকও ওই বিষয়ে আমাকে জানাননি। অন্য সূত্রে খবর পেয়ে স্কুলে গিয়েছিলাম।”
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রিয়া খাতুন বলে, “এ দিন সকালে স্কুলে গিয়ে দেখি খাওয়ার জন্য টেবিল-চেয়ার পাতা রয়েছে। মাংস রান্নার জন্য মশলা বাটা চলছে। অনেক লোকজন সেখানে। তার জন্য দিদিমণিরা সাড়ে ১০টার বদলে এ দিন ৯টায় ছুটি দিয়ে দেন।” দুপুর ১১টা নাগাদ প্রতিমা দাস, সেন্টু শেখদের মতো দুপুরের স্কুলের খুদে পড়ুয়ারা হাজির হয়েই মাংস রান্নার সুঘ্রাণ নাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.