ক্রেস্পো বারাসতে, কানাভারো শিলিগুড়িতে
ন্টার মিলান বা চেলসি নয়, এর্নান ক্রেস্পো খেলবেন বারাসত ইউরো মাস্কেটিয়ার্সের হয়ে।
রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্তাসের প্রাক্তন ফাবিও কানাভারোর গায়ে উঠছে শিলিগুড়ির বেঙ্গল রাইনোর জার্সি।
আর্সেনাল বা ভিলারিয়ালে খেলে আসা রবার্ট পিরেস নামবেন হাওড়া ম্যাঞ্চেস্টার স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে।
বিশ্ব ফুটবল ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে গেল কলকাতায়। ফুটবল ইতিহাসে প্রথম বার ফুটবলারদের নিলামে তোলা হল বিক্রির জন্য। সোমবার কলকাতার এক পাঁচ তারা হোটেলের রুমে। যা দেখতে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের টিভি চ্যানেল। ক্রেস্পো, কানাভারো, পিরেসের সঙ্গে দুই তারকা ইংল্যান্ডের রবি ফাউলার এবং নাইজিরিয়ার জে জে ওকোচাকেও কিনে নিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজিরা কয়েক কোটি টাকায়। ফাউলারকে কিনল কলকাতা। ওকোচাকে দুর্গাপুর।
ক্রিকেট আইপিএলের ধাঁচে বাংলায় যে প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ বা পিএলএস শুরু হতে চলেছে তাতে রবিবার পাঁচটি টিম বিক্রি হয়েছিল। দু’দিনে সব মিলিয়ে ফুটবলে লগ্নি হল প্রায় ১০৫ কোটি টাকা।
ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানের যা পুরো বছরের ফুটবল বাজেট প্রায় তার কাছাকাছি টাকায় ক্রেস্পোকে কিনল বারাসত। প্রায় ৪ কোটি ১৯ লক্ষ টাকায়। তিনিই সবচেয়ে দামি ফুটবলার। তবে সবথেকে বেশি টানাটানি হল কানাভারোকে নিয়ে। শেষ পর্যন্ত তাঁর দাম উঠল ৪ কোটি ১৪ লক্ষতে। আইকনদের মধ্যে সব থেকে কম দামে বিক্রি হলেন নাইজিরিয়ার সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ওকোচা। ২ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকায়। এর পাশাপাশি লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়ার কিছু অখ্যাত তারকাও নিলামে উঠলেন।
ক্রেস্পো যদি সবচেয়ে দামি ফুটবলার হন, তা হলে সবচেয়ে দামি কোচ হলেন পর্তুগালে লুইস ফিগো-রুই কোস্তার সতীর্থ ফের্নান্দো কুতো। তাঁকে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকায় নিল হাওড়ার দল। বারাসতের কোচ হলেন তেইতুর থোর্ডোরসন। কলকাতার কোচ পিটার রিড। শিলিগুড়ির মার্কো এতচেভেরি। দুর্গাপুরের স্যামসন সিয়াসিয়া। উদ্যোক্তারা বলতে না চাইলেও জানা গিয়েছে, এখনও অবিক্রিত হলদিয়া ক্লাবের জন্য কোচ হিসেবে ব্রিটিশ তারকা জন বার্নস এবং আইকন হিসেবে আর্জেন্তেনীয় বিশ্বকাপার সোরিনকে তুলে রাখা হয়েছে।
পাঁচ তারা হোটেলে ল্যাপটপ, আই প্যাড নিয়ে বসেছিলেন ক্রেস্পোর এজেন্ট জিয়ানলুকা সিবেরো, পিরেসের এজেন্ট জেমি জার্ভিস। নিলাম শেষ হতেই তাঁরা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তারকাদের খবর দিতে। ক্রেস্পো এখনও ইতালির নামী ক্লাব পার্মার সহ অধিনায়ক। পিরেস আর্সেনালে ট্রেনিং করছেন। ওঁরা হঠাৎ ভারতে খেলতে কেন? দু ’জনেই বললেন, “ওঁরা নতুন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে চায়। তাই ভারতে আসছে।”
পিএলএসের ফ্র্যাঞ্চাইজিরা টিম কেনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিলামে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু নিলামের দরাদরি দেখে মনে হল যথেষ্ট অঙ্ক কষেই নেমেছে টিমগুলো। মোট সাড়ে বারো কোটি টাকায় পুরো টিম গড়তে হবে নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন উদ্যোক্তা আইএফএ ও সিএমজি কর্তারা। এর মধ্যে সাড়ে নয় কোটি টাকা খরচ করে কেনা যাবে আইকন ফুটবলার, এশীয় ফুটবলার, দুই বিদেশি ফুটবলার ও কোচ--- তাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে পাঁচটি টেবিলে গোল হয়ে বসে থাকা ফ্র্যাঞ্চাইজির লোকজনকে হিসেব করে ফুটবলার নিতে হচ্ছিল। প্রথমে কোচ নিলাম হল। নাইজিরিয়ার স্যামসন সিয়া সিয়াকে পলকে তুলে নিল দুর্গাপুর।
প্রাক্তন তারকা জহর দাস বসেছিলেন দুর্গাপুরের টেবিলে। বিশ্ব তারকাদের বাছতে ভাইচুং ভুটিয়াকে নিয়ে এসেছিল বারাসতের ইউরো গ্রুপ। নিলামের আগে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক চলে গেলেও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যান টিমকে। তেমনই শিলিগুড়ির এ জে কনসালটেন্ট সংস্থা আলোচনা করেছিল শ্যাম থাপা এবং সুরজিৎ সেনগুপ্তর সঙ্গে। এবং নিলামের পর দেখা গেল সবারই দাবি তারা যা চেয়েছিলেন তাই পেয়েছেন। যেমন কলকাতা টিমের মালিক ক্যামেলিয়ার নীলরতন দত্ত বললেন, “আমরা ইংল্যান্ডের জুটি চেয়েছিলাম। পেয়েছি। কোচ হিসাবে আমরা কিনেছি পিটার রিডকে। সঙ্গে আইকন হিসাবে রবি ফাউলারকে। আমরা গৌতম সরকারকে চাই ডিরেক্টর হিসেবে।” দুর্গাপুরের জহর দাস চাইছিলেন নাইজিরিয়ান জুটি। “আমরা নাইজিরিয়ার বিশ্বকাপের কোচ স্যামসন সিয়াসিয়াকে আমরা কিনে নিয়েছিলাম আগেই। সে জন্য ওকোচা হয়ে ভালই হয়েছে।”
অন্যদের স্বপ্ন কী ছিল? বারাসতের মালিক বিশ্বপ্রিয় গিরি দাবি করলেন, “আমার স্বপ্নের ফুটবলার ক্রেস্পোকে বারাসতে নেব পণ করে নিলামের টেবিলে বসেছিলাম। পেয়েছি। কেউ ছুঁতে পারেনি।” আবার হাওড়ার হয়ে নিলামে বসা দীপ্তা শর্মা বললেন, “টুর্নামেন্টের সবচেয়ে নামী কোচ পর্তুগালের ফের্নান্দো কুতোকে চেয়েছিলাম। কেউ নিতে পারেনি।”
টানটান উত্তেজনার মধ্যেই দুপুর আড়াইটেয় শুরু হয় নিলাম। তার দু’ঘণ্টা আগে অবশ্য কীভাবে নিলাম হবে তা বোঝাতে ভাইচুং ভুটিয়াকে ডামি করে দর হাঁকেন ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। দেখা যায় ভাইচুংয়ের নকল দাম উঠেছে নয় লাখ টাকা। শহরের বিখ্যাত নিলাম বিশেষজ্ঞ সাইরাজ ম্যাডান ছিলেন পরিচালকের ভুমিকায়। বলছিলেন, “ক’দিন আগে বাংলাদেশে প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটে নিলাম করে এলাম। তবে ফুটবলে এই প্রথম। একটু তাড়াতাড়ি হল।”
নিলামের শুরুতেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল তালিকায় থাকা বিশ্বখ্যাত কোচ জন বার্নস এবং আর্জেন্তিনার খুয়ান পাবলো সোরিনকে নিলামে তোলা হচ্ছে না। বার্নসকে কোচ হিসাবে চেয়েছিল শিলিগুড়ি। ফলে তাদের অঙ্ক ওলট-পালট হয়ে যায় টেবিলে বসে। শেষ পর্যন্ত কোচ হিসাবে মার্কো এচেবেরিকে নেয় তাঁরা। শিলিগুড়ি বেঙ্গল রাইনোর কর্তা আশিস সরকার বলছিলেন, “বার্নসকে চাইছিলাম আমরা। কিন্তু পেলাম না। তবে ভাল টিম গড়ে আমরা তা পুষিয়ে নেব।” কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম তৈরি নয় বলে শিলিগুড়ি নয়, টিম খেলতে চায় জলপাইগুড়িতে।
দল তৈরির পরে, ক্লাবের নতুন নাম, মার্কেটিং নিয়ে নাড়াচাড়া করছে ক্লাবগুলো। বারাসত, হাওড়ার নাম তৈরি। বিপণনের জন্য মার্চের মাঝামাঝি খেলা শুরু করতে চায় ক্লাবগুলো। শোনা যাচ্ছে কলকাতা ক্যামিলিয়ার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হতে পারেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ইউরো গ্রুপের প্রধান কর্তার দাবি, তাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ভাইচুং ক্লাবের হয়ে খেলবেনও! সিকিমের কোচ ফিলিপ ডি’রাইডার থাকবেন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে। এঁদের সঙ্গে বেশ কিছু ফুটবলারকেও দলে নেওয়া হবে। কিন্তু পি এল এসের যা নিয়ম তাতে সিকিমের হয়ে ভাইচুং আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে খেললে এখানে খেলতে পারবেন না।
মারাদোনা-মেসিকে এনে যাঁরা আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন কলকাতায় সেই সেলিব্রিটি ম্যানেজমেন্ট গ্রুপই পি এল এসের প্রধান উদ্যোক্তা। অসংখ্য ফোন আসছিল দুই কর্তা ভাস্বর গোস্বামী, ধর্মদত্ত পান্ডের কাছে। ভাস্বর বললেন, “২ ফেব্রুয়ারি সব দলের সঙ্গে কথা বলে সূচি তৈরি হবে।” তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে আই এফ এ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “বাংলা এবং ভারতীয় ফুটবলের আজ মনে রাখার মতো দিন। এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ ভাল ভাবে টুর্নামেন্টটা চালানো।” সবার কাছেই তখন আসছে বিশ্বের নানা প্রান্তের সংবাদ মাধ্যমের ফোন। অসম্ভব কৌতূহল, ফুটবলারদের নিলাম নিয়ে।
১৫০ কোটির টাকার বাৎসরিক ফুটবল টুর্নামেন্ট আগমনীতেই সারা বিশ্বের নজর কেড়ে নিয়েছে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.