ইস্টবেঙ্গলের প্র্যাক্টিস ম্যাচটা শুরু হওয়ার সময় দেখা গেল, যুবভারতীর সেন্টার সার্কেলে পেন ওর্জির ঠিক গায়ে গায়ে টোলগে ওজবে।
টোলগের কোমরে দু’হাত। পেনের দু’হাত পিছনে।
দাঁড়ানোর ভঙ্গিটা দু’রকম। খেলার ভঙ্গিও।
টোলগে: ওপেন স্পেস পেলে দুর্দান্ত। এক বার সামনে দৌড়নোর জমি পেলে ওঁকে থামানো কঠিন। আউটসাইড ডজে ভেতরে ঢুকতে ভালবাসেন। ডিফেন্ডাররা তাঁর আউটসাইড ডজ ধরে নিচ্ছেন বলে এ বার একটু বেশি ইনসাইড কাট করতে চাইছেন। বল পায়ে দারুণ গতি। ডান পা দারুণ। সেন্টার অফ গ্র্যাভিটির জন্য গায়ের জোর দারুণ। শটে ভাল জোর। শরীরকে ব্যবহার করেন চমৎকার।
পেন: রোমিং মিডফিল্ডার হিসাবে নতুন স্টাইল আমদানি করেছেন। বলের খুব কাছে থাকেন। ফলে ফরোয়ার্ডকে সাপোর্টিং প্লে দিতে পারেন, ডিফেন্ডারকেও। ছোট জায়গার মধ্যে খুব ভয়ঙ্কর। সেট পিসেও। দৌড় এবং পরিশ্রম শব্দ দুটো যেন তাঁর জন্যই। মাঝখান দিয়ে দৌড়ে যান অনর্গল। ৪-৪-১-১ ছকে আদর্শ লোক ইন দ্য হোল-এ।
টিভিতে ফুটবল বিশেষজ্ঞ হিসাবে নাম করেছেন দীপেন্দু বিশ্বাস। প্রচুর ইউরোপিয়ান ফুটবল দেখেন। দীপেন্দু বলেই দিলেন, “ওই দু’জনকে দেখে বার্সেলোনার দাভিদ ভিয়া আর জাভির খেলার স্টাইলকে মনে পড়বে। ভিয়ার মতো টোলগে উইংয়েও খেলে, টিপিক্যাল স্ট্রাইকারেও। পেন তেমন গোলও করে, ফের ডিফেন্স করে।”
প্র্যাক্টিস সেরে গাড়িতে স্টার্ট দেওয়ার মুখে পেন নিজে বলে গেলেন, তাঁর ফেভারিট ফুটবলার আবার ক্লারেন্স সিডর্ফ। দু’নম্বরে পল স্কোলস। |
প্র্যাক্টিসে পেন-টোলগে। এই জুটিতেই আজ ভরসা মর্গ্যানের। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
কার সঙ্গে কার মিল, এত কচকচির মধ্যে একটা তথ্য সূর্য হয়ে উঁকি দিচ্ছে। এই দুই মুখের উপরই নির্ভর করছে ইস্টবেঙ্গলের চ্যাম্পিয়নশিপ ভাগ্য। আপাতত লাল-হলুদ বাঘ দু’জনের কাঁধে। মেহতাব বা ওপারা আগের ফর্মের থেকে সামান্য নীচে বলে ওই টোলগে-পেনকে আরও ঝকঝকে দেখাচ্ছে। আই লিগে এমন ভয়ঙ্কর জুটি বেশি নেই। ডেম্পোর র্যান্টি মার্টিন্স-ক্লিফোর্ড মিরান্দা এঁদের কাছাকাছি থাকবেন। কিন্তু বেটো, ওডাফা বা চিডিদের দলে এমন জুটি তৈরি হয়নি। প্রয়াগ ইউনাইটেড কোচ সঞ্জয় সেনের স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, “পেন-টোলগেই লিগে এখন সেরা জুটি।”
মঙ্গলবারের প্রয়াগ ইউনাইটেড ম্যাচ বাদ দিলে ইস্টবেঙ্গলের সামনে দুটো ম্যাচ মোহনবাগান এবং লাজং। এই তিনটি ম্যাচই হয়তো জানিয়ে দেবে, ইস্টবেঙ্গল আই লিগ জিতবে কি না। মর্গ্যান অবশ্য যুক্তি দেন, “সে ভাবে বলা যায় না। অন্য দলগুলো কে কেমন খেলে, সেটাও ঠিক করে দেবে।” আগের ম্যাচটায় দলে সুশান্ত ম্যাথুর বদলে ঢুকছেন শুধু পাইতে মর্গ্যান আর এখন পরীক্ষার জায়গায় নেই। সব ম্যাচ ফাইনাল। সেখানে পরীক্ষা চলে নাকি?
প্রয়াগ ইউনাইটেডই লিগে সবচেয়ে কম ম্যাচ হারা দল। তাদের ডিফেন্সেও একটা ভাল জুটি রয়েছে। বেলো রজ্জাক ও দীপক মণ্ডল। ম্যাচটার ভাগ্য কি তা হলে এই দুই জুটির উপর নির্ভর করছে? টোলগে-পেন, দু’জনেরই মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন মর্গ্যান। ধরতে হল তাঁদের প্রতিপক্ষ, মোহনবাগান ম্যাচের নায়ক দীপককে। “ওরা দু’জন খুব ভাল ফর্মে। আমার কাছে বেশি ভয়ঙ্কর টোলগে। গোলটা বেশি। তা ছাড়া ও বক্সে যেখানে ডজ করে, সেখানে একটু খারাপ ট্যাকল করলেই পেনাল্টি। ওদের সামলাতে হলে আমাদের চার জন ডিফেন্ডারকে ভাল খেলতে হবে।” দীপকের জবাব।
দীপকের দলের সমস্যা হল, ইয়াকুবু দেশে গিয়ে আর ফেরেননি। বাকি দুই বিদেশি ফরোয়ার্ড জোসিমার, ভিনসেন্টের অল্পবিস্তর চোট। চোট বলে নেই সেরা মিডফিল্ডার লালকমল। অর্ণব ও দেবদাস নতুন চাকরি পেয়েছেন এবং সকালেই তাঁদের অফিস ম্যাচ। কোচ সঞ্জয়কে বলতে শোনা গেল, “এই প্রথম আমায় ড্রেসিংরুমে গিয়ে দল করতে হবে।” মোহনবাগান, ডেম্পো, সালগাওকরকে হারিয়েছেন সঞ্জয়। ইস্টবেঙ্গল ও চার্চিলকে পারেননি হারাতে। ওই স্বপ্নটা থেকে গিয়েছে চেতলার তরুণের।
স্বপ্নের পথে কাঁটা ওই দুটো নামই। টোলগে ও পেন। ইউনাইটেড কোচের চোখে সেরা জুটি।
আজ সেন্টার সার্কেলে ওই দু’জনই প্র্যাক্টিসের ঢঙে পাশাপাশি দাঁড়াবেন। তার পরে ৪-৪-২ হয়ে যাবে ৪-৪-১-১। টোলগে বাঁ দিক, ডান দিক করবেন বারবার। পেন দৌড়বেন সামনে ও পিছনে।
মর্গ্যানের স্বপ্নের পথে ওঁরাই ফুল।
|
ইস্টবেঙ্গল : প্রয়াগ ইউনাইটেড (যুবভারতী, ২-০০)
মোহনবাগান : চিরাগ কেরল (কোচি, ৬-৩০) |