|
|
|
|
খড়্গপুর পুরসভা |
আক্রমণ প্রাক্তন পুরপ্রধানকে, কংগ্রেসের প্রতি নরম তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
তিন দিন আগে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তৃণমূল পরিচালিত খড়গপুর পুরবোর্ডের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছিল কংগ্রেস। সোমবার পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল দাবি করল, কংগ্রেস সমর্থন প্রত্যাহার করলেও বোর্ড চালাতে অসুবিধা হবে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলরই নাকি পুরবোর্ডের পাশে আছেন। এমনকী কংগ্রেস-শিবিরের মধ্যেই বিভাজনের ইঙ্গিত দিয়ে তৃণমূল-নেতৃত্বের দাবি, কংগ্রেসের নেতৃত্ব পুরবোর্ড ফেলতে চান না। প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডেই মূলত বোর্ড ফেলার চক্রান্ত করছেন।
বর্তমান পুরপ্রধান জহরলাল পালের সরাসরি অভিযোগ, “প্রাক্তন পুরপ্রধানই ষড়যন্ত্র করছেন।” তাঁর দাবি, “কংগ্রেস নেতৃত্ব কিন্তু বোর্ডে অস্থিরতা চাইছেন না।” জহরবাবুর বক্তব্য, “পুর-প্রশাসন দুর্নীতিমুক্ত ভাবে উন্নয়নের কাজ করছে। সেই কাজে বাধা সৃষ্টি করতেই সমর্থন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।” যা শুনে প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিবাবুর প্রতিক্রিয়া, “আমার একার সিদ্ধান্ত নয়, দলীয় কাউন্সিলর ও শহর কংগ্রেস নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত মতোই পুরবোর্ডের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেছে কংগ্রেস।” পুর-প্রশাসন দুর্নীতিগ্রস্ত, এই অভিযোগ তুলেই গত শুক্রবার খড়্গপুর পুরবোর্ডের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করে কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, বোর্ড এমন কিছু অনৈতিক কাজকর্ম করছে, যা কংগ্রেসের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। |
|
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
রেলশহরে কংগ্রেস-তৃণমূল সম্পর্ক কোনও দিনই ‘মধুর’ নয়। এমনকী ২০১০-এর পুর-নির্বাচনেও দু’দলের জোট হয়নি। মুখোমুখি লড়েই ৩৫ আসনের পুরসভায় তৃণমূল পায় ১৫টি আসন। কংগ্রেসের টিকিটে জেতেন ১২ জন। বামেরা পায় ৬টি আসন, বিজেপি ও নির্দল একটি করে। সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও একক গরিষ্ঠতা ছিল না তৃণমূলের। কংগ্রেস বাইরে থেকে সমর্থন করায় বোর্ড গড়তে পারে তৃণমূল। রাজ্যে পালাবদলের পরে তৃণমূল ও কংগ্রেস মিলে জোট-মন্ত্রিসভা হয়েছে। কিন্তু রেলশহরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডে যোগ দেয়নি কংগ্রেস। উল্টে দুই বাম কাউন্সিলর ও এক নির্দল সদস্য কংগ্রেস শিবিরের দিকে ঝুঁকেছেন। কার্যত পুরসভায় এখন তৃণমূল ও কংগ্রেসের ‘শক্তি’ সমান-সমান, ১৫-১৫। নিজেদের শক্তি বাড়িয়ে নিয়ে কংগ্রেস বোর্ডকে বাইরে থেকে সমর্থনও প্রত্যাহার করে নেওয়ায় নানা সম্ভাবনা নিয়ে এখন জল্পনা চলছে রেলশহরে। কংগ্রেস অনাস্থা এনে পুরবোর্ড ফেলে দিতেও পারেএমন সম্ভাবনাও অনেকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তেমন পরিস্থিতিতে অন্য ৪ বাম কাউন্সিলরও কংগ্রেসকে সমর্থন করতে পারেন বলে কারও কারও অনুমান। তবে শহর কংগ্রেস নেতৃত্ব এখনই অনাস্থা আনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও স্থানীয় নেতৃত্বকে অনাস্থা না-আনারও নির্দেশ দিয়েছেন। প্রদীপবাবু প্রকাশ্যেই সেই নির্দেশের কথা জানিয়েছেন।
এই অবস্থায় সোমবার তৃণমূল নেতৃত্বের সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস নেতৃত্বের ‘গুণগান’ তাৎপর্যপূর্ণ। বোর্ড হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা টের পেয়েই তৃণমূল নেতৃত্ব সচেতন ভাবেই কংগ্রেস নেতৃত্বের থেকে প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিবাবুকে ‘পৃথক’ করতে চেয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সোমবার খড়্গপুর শহর তৃণমূল কার্যালয়ে ডাকা সাংবাদিক বৈঠকে বর্তমান পুরপ্রধান জহরবাবু প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিবাবুর বিরুদ্ধেই তোপ দেগে বিগত বোর্ডের আমলে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “অডিটেই দেখা গিয়েছে, এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যয় করা হয়েছে। নিজেদের আমলের দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসতে পারে ভেবেই বর্তমান পুরবোর্ড ফেলে দেওয়ার চক্রান্ত করছেন রবিশংকর পাণ্ডে।” তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর গত ১৯ মাসে কী কী কাজ হয়েছে, আরও কী কী করার পরিকল্পনা রয়েছে— এ দিন তারও খতিয়ান তুলে ধরেন জহরলালবাবু। রবিবাবু অবশ্য তাঁর আমলে দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “এখন তো তৃণমূল ক্ষমতায় রয়েছে। দুর্নীতি হয়ে থাকলে তদন্ত হোক। আমরা সব রকম তদন্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।” |
|
|
|
|
|