নদীর পাড় ঘেঁষে তৈরি হয়েছে আবর্জনার স্তূপ। সেখান থেকে প্লাস্টিক, নোংরা কাপড়, অন্যান্য আবর্জনা পড়ছে নদীতে। নদীর জলে ভাসছে ওই সমস্ত বর্জ্য। শিলিগুড়ি পুরসভার তরফে ফেলা ওই জঞ্জালে পঞ্চনই নদীর জল দূষিত হওয়ার আশঙ্কায় সরব হয়েছেন মাটিগাড়ার সুকান্তপল্লির বাসিন্দারা। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানও এ ব্যাপারে পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে চিঠি পাঠিয়েছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দূষণ ছড়ানোর অভিযোগে পুরসভার ভাগাড়ে সাতদিন আবর্জনা ফেলতে দেননি বৈকুন্ঠপল্লি-সহ লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা। সেই সময়ে সুকান্তপল্লিতে পঞ্চনই নদীর ধার ঘেঁষে আবর্জনা ফেলে পুরসভার সাফাই বিভাগ। তারা এ ব্যাপারে গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষেরও কোনও অনুমতি নেয়নি বলে অভিযোগ। যেখানে নদী বাঁচাতে বাসিন্দাদের সচেতন করার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে, রাজ্য সরকারের তরফে নানা ভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে সেখানে পুরসভার সাফাই বিভাগের ওই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। সাফাই নিয়ে এমন দুর্ভোগ অতীতে কখনও বাসিন্দাদের পোহাতে হয়নি বলে সরব বিরোধী বাম কাউন্সিলররাও। বর্তমানে সাফাই বিভাগের কাজকর্ম নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। শিলিগুড়ি পুসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “নদীর ধারে আবর্জনা ফেলার বিষয়টি জানা নেই। কী হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখব। বাসিন্দাদের তরফে বা গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ আমাকে কিছু জানাননি।” |
পঞ্চনই নদীর ধারে নোংরা ফেলানোর বিষয়টি জানেন পুরসভার জঞ্জাল সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত। তিনি বলেন, “ওই এলাকা থেকে গ্রামবাসীদের একাংশই আমাদের কাছে জঞ্জাল ফেলে খাল ভরাটের আবেদন করেছিল। সেই ভিত্তিতেই কয়েক গাড়ি আবর্জনা ফেলা হয়।” চম্পাসারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মণিকা সিংহ জানান, এলাকায় নদীর ধারে আবর্জনা ফেলায় দূষণ ছড়াচ্ছে। নদী লাগোয়া তিনটি এলাকার বাসিন্দারা সেখান দিয়ে চলাচল করেন। তিনি বলেন, “আবর্জনা ফেলার আগে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। পুরসভার মেয়রকে চিঠি দিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। কোনও ভাবেই এখানে নোংরা ফেলতে দেওয়া হবে না।” পুরসভার বিরোধী দলের কাউন্সিলর তথা এক সময় সাফাই বিভাগের দায়িত্বে থাকা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ মুকুল সেনগুপ্ত বলেন, “নদীর ধারে এ ভাবে আবর্জনা ফেলা একেবারেই উচিত হয়নি। শহরের বিভিন্ন এলাকায় সাফাইয়ের কাজ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। অথচ শ্রমদিবস সৃষ্টির নামে সাফাই বিভাগে প্রচুর কর্মীকে কাজ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা অধিকাংশই কাজ না-করেই পরিশ্রমিক নিচ্ছেন। মেয়র পারিষদের তা দেখা উচিত।” মুকুলবাবুরাই জানিয়েছেন, পুরসভার স্থায়ী কর্মী ছাড়াও তাঁদের জমানায় আড়াই বছর আগেও সাফাই বিভাগে মাসে তিন হাজারের মতো শ্রমদিবস লাগত। এক জন কর্মীর ৮ ঘন্টা কাজের জন্য একটি শ্রমদিবস ধরা হয়। এখন সেখানে মাসে সাত হাজারের বেশি শ্রমদিবস সাফাই বিভাগের কাজে লাগান হচ্ছে। দুলালবাবু দাবি, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনও অতিরিক্ত শ্রমদিবস বা কর্মী নেওয়া হয়নি। সাফাই-এর পরিষেবা আরও উন্নত করতে তাঁরা চেষ্টা করছেন। সুকান্তপল্লি, হাতিডোবা, শিবনগর এলাকার বাসিন্দারা জানান, ওই নদীর উপর তাঁরা একান্ত নির্ভরশীল। স্নান, জামাকাপড় ধোয়া থেকে নিত্যদিন নানা কাজে নদীর জল ব্যবহার করেন সকলে। হাতিডোবার বাসিন্দা সুভাষ ছেত্রী বলেন, “যেভাবে নদীর ধারে আবর্জনা ফেলা হয়েছে তাতে নদী খাত বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দূষণ ছড়াচ্ছে।” শহরে বিভিন্ন এলাকায় জঞ্জাল জমে যে পরস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা এদিনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদেরই।
|