বিক্ষোভের মুখে বনকর্তা
হাতির হানায় চাষির মৃত্যু সোনামুখীতে
ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে হাতি খেদানো অভিযানে গতি আনতে বাঁকুড়ায় বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনের বৈঠকের ১২ ঘণ্টার মধ্যেই দাঁতালের হানায় মৃত্যু হল এক গ্রামবাসীর। জখম হলেন দু’জন। রবিবার রাতে সোনামুখী থানার রাধারমণপুর গ্রামের ঘটনা। সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন বন দফতরের সোনামুখীর রেঞ্জ অফিসার দুর্গাপদ ঝা। এলাকা থেকে দ্রুত হাতি খেদানো ও ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুক্তি পান তিনি।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দলমার ১০০ হাতির দলটি বিচ্ছিন্ন হয়ে তিন ভাগে ছড়িয়ে পড়েছে বিষ্ণুপুর বনাঞ্চলে। তাদেরই কয়েকটি সোনামুখী রেঞ্জের হামিরহাটি বিট লাগোয়া পিয়ারবেড়া অঞ্চলের রাধারমণপুর গ্রামে রবিবার রাত ১২টা নাগাদ ঢুকে বিভিন্ন বাড়ির ধানের মড়াই ও মাটির বাড়ি ভাঙতে শুরু করে। আয়নাল হক মল্লিক (৪৫) নামে এক চাষির উঠোনে ধানের মড়াই ভাঙার সময়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে তিনি ও তাঁর পরিবারের লোকজন বেরিয়ে আসেন। ঘরের দরজা খুলে বাইরে বেরোতেই এক দাঁতাল আয়নালকে তাড়া করেন। বেশ কিছুটা ছুটলেও দাঁতালটি তাঁকে আছড়ে ফেলে পেটে ও গলায় দাঁত ঢুকিয়ে দেয়। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচেন আয়নালের ছেলে নিজামুদ্দিন এবং স্ত্রী মুইবুন্নেসা বিবি।
সোমবার বাবার মৃতদেহ বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য নিয়ে এসে কাঁদতে কাঁদতে নিজামুদ্দিন বলেন, “সামান্য কয়েক বিঘা জমিতে চাষ আর হকারি করে সংসার চলে আমাদের। বাড়ির উঠোনের মড়াইতে কিছু ধান ছিল। রাতে আমি, বাবা, মা দরজা খুলে বের হতেই দেখি একটি হাতি আমাদের মড়াই ভাঙছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবাকে তাড়া করে এক দাঁতাল। আমি আর মা রান্নাঘরে ঢুকে পড়ে প্রাণ বাঁচাই। কিন্তু বাবার আর্তনাদ শুনেও ১৫-১৬টা হাতির সামনে কেউ যেতে পারলাম না।”
রাধারমণপুর গ্রামে হাতির হানায় ভেঙে পড়া বাড়ি। মৃত চাষি আয়নাল হক মল্লিক।
ওই রাতেই রাধারমণপুর গ্রামে হাতির দলের হামলায় দেওয়াল চাপা পড়ে আহত হন আকবর শেখ ও জিয়া বিবি। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা হয়েছে তাঁদের। এলাকার বাসিন্দা আবদুস সামাদ, সাইফুল মণ্ডলদের ক্ষোভ, “হাতির দলটা মাঝে মাঝেই হানা দিচ্ছে। আমরা বন দফতরকে বলেও একটাও সার্চলাইট পাইনি। হাতি তাড়ানোর কোনও উদ্যোগও চোখে পড়ছে না।” অথচ চলতি মাসেই এই হাতির দলের হামলায় বড়জোড়া ও সোনামুখী এলাকায় দু’জনের মৃত্যু হল। ১০ জনেরও বেশি জখম হয়েছেন।
ঘটনাচক্রে রবিবারই বাঁকুড়ায় এসে হাতি খেদানো অভিযানে গতি আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন বনমন্ত্রী। বলেছিলেন, “টাকার অভাব হবে না। প্রয়োজনে লোকবল বাড়াতে হবে।” এ দিন রাধারমণপুরে গিয়ে গ্রামবাসীর বিক্ষোভের মুখে পড়ে রেঞ্জ অফিসার দুর্গাপদবাবু অবশ্য বলেন, “এই মৃত্যু মর্মান্তিক। কিন্তু এই জংলি হাতির সঙ্গে লড়াই করার মতো লোকবল এখন আমাদের নেই। গ্রামে আপাতত সার্চলাইট দেওয়া হচ্ছে।” পাশাপাশি তাঁর আশ্বাস, মৃতের পরিবারকে যে ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, তার মধ্যে ৫০ হাজার এ দিনই দিয়ে দেওয়া হবে। ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর) এস কুলন ডেইভাল বলেন, “মন্ত্রীর নির্দেশ মতো আমরা সম্মিলিত অভিযান শুরু করার আগেই বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর যাতে না হয়, তার জন্য এ দিন থেকেই অভিযান জোরদার করা হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে এলাকার মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

ছবি: শুভ্র মিত্র।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.