টাকা এসে পড়ে রয়েছে। কথা ছিল, সেই টাকায় গাদিয়াড়ার ভগ্নপ্রায় জেটিঘাটটি সংস্কার করা হবে। তার সঙ্গে জেটিঘাট-সংলগ্ন নদীর পাড়ের সৌন্দর্যায়ন করা হবে। কিন্তু কাজটি শুরু করার আগে যা অতি প্রয়োজনীয় সেই বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) এখনও তৈরিই হয়নি। সে কারণেই জেটিঘাট সংস্কার এবং সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু করা যায়নি। জেটিঘাটটির সংস্কার এবং সৌন্দর্যায়নের কাজটি করার কথা হাওড়া জেলা পরিষদের। টাকা এসে পড়ে রয়েছে তাদেরই কাছে।
শ্যামপুরের গাদিয়াড়া হল জেলার অন্যতম সেরা পর্যটনকেন্দ্র। বছরভর বহু পর্যটক আসেন এখানে। এ ছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকার মানুষ গাদিয়াড়ার মাধ্যমে নিয়মিত হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করেন। একই সঙ্গে, হাওড়া থেকেও বহু মানুষও প্রতিদিন গাদিয়াড়া হয়ে পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করেন। গাদিয়াড়া থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের গেঁওখালিতে যাতায়াত করা যায় রূপনারায়ণ নদ পার হয়ে। অন্য দিকে, হুগলি নদ পার হয়ে যাওয়া যায় নুরপুরে। নিত্যযাত্রী ছাড়া নদীপথে বহু পর্যটকও গাদিয়াড়া আসেন। |
কিন্তু গাদিয়াড়ায় জেটিঘাটটির অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না-হওয়ার ফলে জেটিঘাটটির এই হাল হয়েছে বলে নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ। উপায় না-থাকায় এই ভগ্নপ্রায় জেটিঘাটটি ব্যবহার করেই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নদী পারাপারে বাধ্য হন। জেটিঘাটটি সংস্কার এবং সংলগ্ন এলাকার নদীর পাড়ের সৌন্দর্যায়ন করা হলে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গাদিয়াড়ার আকর্ষণ আরও বাড়ত বলে পর্যটকেরা জানিয়েছেন।
সে কথা ভেবেই কেন্দ্রীয় সরকার ‘সার্কিট ট্যুরিজম’ খাতে জেটিঘাটটির সংস্কার এবং সৌন্দর্যায়ন করার জন্য বছর দুই আগে ৪৮ লক্ষ টাকা দিয়েছে। তার সঙ্গে নিজস্ব তহবিল থেকে ২০ লক্ষ টাকা খরচ করার কথা জেলা পরিষদেরও। উলুবেড়িয়ার তৃণমূল সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় পর্যটন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুলতান আহমেদ তাঁর কোটা থেকে ২০ লক্ষ টাকা খরচের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে। সব মিলিয়ে মোট খরচ হওয়ার কথা প্রায় ৮৮ লক্ষ টাকা।
জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, তারা জেটিঘাট সংস্কার করার জন্য দরপত্র আহ্বান করে দু’বার বিজ্ঞাপন দেয়। কিন্তু কোনও ঠিকাদার সংস্থা কাজটি করার জন্য আগ্রহ দেখায়নি। জেলা পরিষদ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, কাজটির জন্য বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করেছিল জেলা পরিষদের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। কিন্তু এই ধরনের কাজ করার কোনও অভিজ্ঞতা না-থাকায় প্রকল্প রিপোর্টটিতে কিছু ত্রুটি থেকে গিয়েছিল। ওই প্রকল্প রিপোর্ট-এর ভিত্তিতেই দরপত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্প রিপোর্টে ত্রুটি থাকার জন্যই কোনও ঠিকাদার সংস্থা কাজটি করতে এগিয়ে আসেনি।
শেষ পর্যন্ত সমস্যা মেটাতে রাজ্য পরিবহণ দফতরের দ্বারস্থ হয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা বাস্তুকার সুব্রত দত্ত বলেন, “রাজ্য পরিবহণ দফতরের বাস্তুকারদের জেটিঘাট সংস্কারের প্রকল্প রিপোর্ট তৈরির অভিজ্ঞতা রয়েছে। জেলাশাসক নিজে রাজ্য পরিবহণ দফতরকে অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে তারা একটি বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে দেয়। সেই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই ফের দরপত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে।” |