|
|
|
|
অভয়কে সঙ্গে নিয়ে গোঘাট থেকে উদ্ধার বন্দুক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চুঁচুড়া |
গোঘাট সিপিএমের প্রাক্তন জোনাল সম্পাদক অভয় ঘোষের ‘দেখিয়ে দেওয়া’ জায়গা থেকে জিলেটিন স্টিক, বন্দুক উদ্ধার করল পুলিশ।
রবিবার রাতে ওই ঘটনার সূত্র ধরেই পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে একটি নতুন মামলা শুরু করেছে। আজ, মঙ্গলবার আদালতে অভয়বাবুকে ফের নিজেদের হেফাজতে চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে হুগলি পুলিশ। জিলেটিন স্টিক ছাড়াও অভয়বাবুকে নিয়ে তল্লাশিতে নেমে ৬টি আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। গড়বতার নানা ঘটনায় তাঁর যে সরাসরি যোগাযোগ ছিল বলে পুলিশের দাবি। এমনকী, চমকাইকাইতলা কাণ্ড-সহ হুগলির নানা রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রের একটা বড় অংশ যে গড়বেতা থেকেই আসত, সে কথা ধৃত অভয়বাবুই জানিয়েছেন বলে দাবি জেলা পুলিশের।
হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “ধৃত নেতাকে জেরা করে অস্ত্র-সহ অন্যান্য বিস্ফোরক দফায় দফায় উদ্ধার হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে সংবাদমাধ্যমকে এখনই এর থেকে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।”
গোঘাটের ‘ডাকাবুকো’ সিপিএম নেতা অভয় ঘোষকে গত ২৩ তারিখে রিষড়ায় দলের জেলা সম্মেলনে যাওয়ার পথে উত্তরপাড়ায় জিটি রোড থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেলা সিপিএম নেতৃত্ব তখন অভিযোগ তুলেছিলেন, তৃণমূল এবং পুলিশ ‘ষড়যন্ত্র করে’ মামলা সাজিয়ে অভয়বাবুকে গ্রেফতার করেছে। অভয়বাবুকে ছাড়াতে দল আইনি লড়াইয়ের পথে হাঁটবে বলেও সিপিএম নেতৃত্ব জানিয়েছিলেন। কিন্তু এর পরে ঘটনাক্রম যে পথে গড়িয়েছে, তা সিপিএম নেতৃত্বের পক্ষে আদপেই স্বস্তির নয়। |
|
পুলিশ জানিয়েছে, অভয়বাবুকে জেরা করে জানা যায়, তাঁর ‘খাসতালুক’ শান্তিপুর পার্টি অফিস-লাগোয়া জায়গায় ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র মাটিতে পোঁতা আছে। পুলিশ নিয়ে কড়া প্রহরায় তাঁকে নিয়েই ওই জায়গায় যায়। সেখানে গিয়ে তিনি পুলিশকে নির্দিষ্ট জায়গা দেখিয়ে দেন। তাঁর কথামতো মাটি খুঁড়ে আগ্নেয়াস্ত্রগুলি মেলে। আগ্নেয়াস্ত্রগুলির মধ্যে ৩টি ছিল বড় ব্যারেলের বন্দুক। বাকি ৩টি রিভলভার। ফের দফায় দফায় জেরায় পুলিশকে ধৃত নেতা জানান, ৪টি জিলেটিন স্টিক রাখা আছে শান্তিপুর পার্টি অফিস-লাগোয়া জায়গায়। রবিবার রাতে ফের তাঁকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যায় পুলিশ। পুলিশের দাবি, এ বারও সাফল্য মেলে। সিপিএম নেতাকে জেরা করে জিলেটিন স্টিক উদ্ধারের ঘটনা সাম্প্রতিক কালে রাজ্যে এই প্রথম বলে হুগলি জেলা পুলিশের দাবি। শুধু হুগলি পুলিশ নয়, রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের অফিসারেরাও অভয়বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের জেরাতেও উঠে এসেছে ‘চাঞ্চল্যকর’ নানা তথ্য। তদন্তকারীদের দাবি, অভয়বাবু শুধু তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন তা-ই নয়। বহু ক্ষেত্রেই সঠিক হদিশ দিচ্ছেন। গড়বেতার নানা রাজনৈতিক ঘটনায় অভয়বাবুর যে সরাসরি যোগাযোগ ছিল, সে কথা তিনি নিজেই কবুল করেছেন বলেও দাবি করেছেন পুলিশের কর্তারা। গড়বেতা থেকে চমকাইতলা কাণ্ড সব ব্যাপারেই বাঁকুড়া এবং দুই মেদিনীপুরের সিপিএমের মাথাদের প্রত্যক্ষ ‘সহযোগিতার’ কথাও তিনি স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন। অভয়বাবু পুলিশকে এ-ও বলেছেন, কিছু ক্ষেত্রে সুশান্ত ঘোষের সঙ্গে তাঁর অবস্থানগত গণ্ডগোলে নিজের দলেই তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। অভয়বাবুর দেওয়া সূত্র ধরেই গড়বেতা এবং হুগলির বেশ কিছু সিপিএম নেতার নাম পুলিশ পেয়েছে। এখন পুলিশ সরাসরি সেই সব নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “রাজনৈতিক নেতারা অনেক কথাই বলতে পারেন। কিন্তু অভয়বাবুর কথার সূত্র ধরে পুলিশ যে ভাবে অস্ত্রের সন্ধান পাচ্ছে, তাতে তাঁকে ধরার পিছনে অভিসন্ধি নেই, তা-ই প্রমাণিত হচ্ছে।”
গোঘাটের লালপুরে তিন তৃণমূল কর্মীকে খুনের ঘটনায় নিহতদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। ওই মামলাতেও অভয়বাবু সরাসরি যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শান্তিপুরে যে পার্টি অফিসে পুলিশ চৌবাচ্চার আকারের গর্তের হদিস পায়, সেই সম্পর্কে ধৃত নেতা পুলিশকে জানিয়েছেন, কংগ্রেস আমলে দলীয় মুখপত্র সেখানে লুকিয়ে রাখা হত। এ ছাড়াও, ওই এলাকায় ডাকাতির ভয় ছিল। দলের কাটা-পয়সা নিরাপদে রাখতে ওই কুঠুরিতে রাখা হত। |
|
|
|
|
|