ইচ্ছে থাকলেই যে উপায় হয়, তা আরও এক বার প্রমাণ করলেন সন্তোষবাবু। বহু দিন ধরে সাধ ছিল, ‘মানুষের জন্য’ কিছু করবেন। কিন্তু সাধ থাকলেই তো হল না। সে জন্য চাই সাধ্য। দারিদ্র্যের সঙ্গে বছরের পর বছর লড়াই চালিয়ে, একটু একটু করে টাকা জমিয়ে অবশেষে স্কুলের ভবন নির্মাণে আড়াই লক্ষ টাকা দান করলেন জগৎবল্লভপুরের দক্ষিণ চঙঘোরালি গ্রামের বাসিন্দা সন্তোষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
কৃষি সমবায় সমিতিতে সামান্য মাইনের চাকরি করতেন মানুষটি। অবসর নিয়েছেন ২০০৬ সালে। এই পরিস্থিতিতে আর পাঁচটা বাঙালি মধ্যবিত্ত যখন নিজের নিরাপত্তার কথাই ভেবে আকূল হন, সন্তোষবাবু তখনও ‘ভাল কিছু’ করার ইচ্ছেটা ছাড়েননি। বললেন, “অনেক কষ্টে টাকা জমিয়েছি। কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম শেষ বয়সে। সেই সুযোগ এসেও গেল।” |
১৯৬৩ সালে জগৎবল্লভপুরে মাজু আরএন বসু বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেন বিশিষ্ট ভূতত্ত্ববিদ সুধাংশুকুমার বসু। গ্রামের মানুষের উদ্যোগে এবং সরকারি-বেসরকারি অর্থানুকূল্যে বালিকাদের পৃথক ভবন তৈরি হলেও প্রাতঃকালীন বালিকা বিভাগের জন্য ঘরের সমস্যা ছিল। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মৈত্রেয়ী মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্কুলঘরের সমস্যা সমাধানের জন্য অস্থায়ী ভাবে বালক বিভাগে বামাসুন্দরী ছাত্রাবাসে বালিকাদের পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু স্কুলের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির প্রায় সাড়ে ন’শো মেয়ের শ্রেণিকক্ষের সমস্যা থাকায় খুবই অসুবিধা হত।” সমস্যার কথা কোনও ভাবে জানতে পারেন সন্তোষবাবু। ঠিক করে ফেলেন, ঘর তৈরির জন্য টাকা দেবেন। জীবনের এতগুলো দিন যেন অপেক্ষায় ছিলেন এই কাজের জন্যই। প্রয়াত স্ত্রী স্বপ্না চক্রবর্তীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে স্কুলে নগদ টাকা দান করতে চাইলেন নিঃসন্তান সন্তোষবাবু। স্কুল কর্তৃপক্ষ বললেন, এ ভাবে টাকা না দিয়ে বরং বাড়ি তৈরি করিয়ে দিন। সেই মতোই পদক্ষেপ করলেন বৃদ্ধ। গত ১৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছে সেই ভবনের। সন্তোষবাবুর এ জন্য খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। এই কাজের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানান প্রধান শিক্ষিকা। |